ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■  

রাজধানীসহ ঢাকা ও আশপাশের জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলামের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

সকালে শরীফুল ইসলাম জানান, ঢাকা, নায়ারণগঞ্জ ও গাজীপুরে বিজিবির ১৪ প্লাটুন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ঢাকা মহানগর এলাকায় ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য আগে থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

বিজিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে কয়েকটি ছবি পাঠানো হয়। এসব ছবিতে রাজধানীর শাহবাগের ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেল ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির সামনে এবং আরও কিছু জায়গায় বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন দেখা গেছে।  

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্যমতে, ১ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। গত দুই দিনে ৯টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং গত ২৪ ঘণ্টায় এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রায়ের দিন নির্ধারণ ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি দেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) দলগুলোকে মাঠে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবার সহযোগিতা চেয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবেন। আপনারা অনেক সময় বলেন, সন্ত্রাসীরা খুব তাড়াতাড়ি জামিন পেয়ে যায়। সহজে যাতে জামিন না পায়, সেজন্য যারা জামিন দেন, আমরা তাদের কাছে অনুরোধ করব। সন্ত্রাসী যারা জেল থেকে জামিনে বের হচ্ছে, তারা অন্য ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে যেন আবার আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।

গত দুই দিন ধরে বাসে আগুন ও বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো যেন আর না হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব যারা করছে, তারা দুষ্কৃতকারী। তাদের প্রতিহত করা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, মেট্রোরেল এলাকা, রেলওয়েসহ কেপিআইভুক্ত স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। টহল বাড়ানো হয়েছে, বাসে আগুন দেওয়ার জন্য যেসব সড়কের পাম্প থেকে তেল নেওয়া হয়, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সব বিমানবন্দরে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদরদপ্তর কুর্মিটোলা থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়। বেবিচকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) কাউছার মাহমুদ জানান, দেশের বিমানবন্দরগুলোকে সতর্ক থাকার বিষয়ে তারা চিঠি দিয়েছেন।

এদিকে ১৩ নভেম্বর ‘ঢাকা লকডাউন’ ঘিরে নাগরিকদের আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী। মঙ্গলবার বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ঢাকা মহানগরীর চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, কোনো আশঙ্কা নেই এবং চিন্তার কোনো কারণ নেই। ঢাকাবাসী আওয়ামী লীগের তৎপরতা রুখে দেবে। ওই দিন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঢাকায় মোতায়েন থাকবেন। ঢাকাবাসী যাতে আতঙ্কিত না হয়, সে জন্য সবাইকে এই বার্তা দিতে চান বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *