■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন দল নিবন্ধনের আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাই শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এবার ১৪৪টি নিবন্ধনপ্রত্যাশী দলের ১৪৭টি আবেদন জমা পড়েছে। প্রাথমিকভাবে ছোটোখাটো ত্রুটি বিচ্যুতি বা কাগজপত্রের ঘাটতি থাকলে তা পূরণের জন্য তথ্য চেয়ে ১৫ দিন সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আবেদনগুলো আইন ও বিধি অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে ২০ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে ইসি সচিবালয়। আবেদন পর্যালোচনা করে অগ্রগতি বুঝতে সোমবার বৈঠকও করেছে এ সংক্রান্ত কমিটি।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ভোটার তালিকায় কারা যুক্ত হবেন, কোন সময় পর্যন্ত যুক্ত হবেন–তা নির্বাচন কমিশন যৌক্তিক বিবেচনায় নির্ধারণ করবে। আর এমন বিধান রেখে ভোটার তালিকা আইন সংশোধন করতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সীমানা নির্ধারণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৭৬টি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ চেয়ে আবেদন এসেছে। এসব নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতি একটা চলমান প্রক্রিয়া। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী সামগ্রী কেনার প্রকিউরমেন্ট শেষ হবে।
ইসির আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া কাগজপত্রের মধ্যে কোনো ধরনের অসঙ্গতি, নাম-পদবীর বানানসহ ছোটোখাটো তথ্যের ঘাটতি থাকলে তা মিটিয়ে ফেলতে সময় দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে বৈঠকে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “প্রাথমিকভাবে তথ্য চেয়ে দলগুলোকে আমরা একটা সময় দেব, এ সংক্রান্ত চিঠিও দেওয়া হবে। চিঠি দেওয়ার দিন থেকে ১৫ দিন সময় পাবে; নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ত্রুটি সংশোধন করতে পারবে।” নির্ধারিত সময়ে তথ্য দিতে না পারলে ও বাছাইয়ে প্রাথমিক শর্ত পূরণ না করল বা সঠিক তথ্য না থাকলে আবেদন বাদ পড়ে যাবে। এরপর তথ্য সঠিক আছে কিনা যাচাই করা হবে, তদন্ত হবে। সব শর্ত ঠিকঠাক পূরণ হলে যোগ্য দল নিবন্ধন পাবে।
নিবন্ধনের আবেদন করতে হয় দলীয় প্যাডে। দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো ও দলীয় পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের নামের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সর্বশেষ স্থিতি, তহবিলের উৎস, দল নিবন্ধনের আবেদনকারীর ক্ষমতাপত্র, নিবন্ধন ফি বাবদ অফেরতযোগ্য ট্রেজারি চালানের কপি এবং নিবন্ধনের তিনটি শর্তের মধ্যে যে কোনো একটি পূরণের প্রমাণ জমা দিতে হয়।
নতুন দল নিবন্ধনের শর্ত হল– দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ [২১টি] প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত তালিকা লাগবে। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে টিকে থাকা দলগুলো নিবন্ধন শর্ত পূরণ করছে কিনা তা যাচাই করতে মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন নেবে কমিশন। কোনো দলের নিবন্ধন নিয়ে কারও আপত্তি রয়েছে কিনা দেখা হবে। বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর আপত্তি পেলে দুই পক্ষের শুনানি নিয়ে আবেদন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করবে কমিশন। বাছাইয়ে টিকে গেলে এবং দাবি-আপত্তির নিষ্পত্তি হয়ে গেলে শেষ ধাপে নিবন্ধন সনদ পাবে দলটি।
সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধন প্রত্যাশী শখানেক দলের মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে আবেদন বাতিল হয় ৮১টির; ১২ দলের তদন্ত হয়। শেষে মাত্র দুটি দল নিবন্ধন পায়।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৫০টি। এরাই দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য।