■ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ■
চট্টগ্রামে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসে পদদলিত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া দু’জন হলেন- চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা আইয়ুব আলী (৬০) ও নগরীর কালামিয়া বাজার এলাকার সাইফুল ইসলাম (১৪)। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী ইনচার্জ সোহেল রানা বলেন, ‘আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়েছে। আহত অবস্থায় ১০ জনকে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।’
আঞ্জুমানে রহমানিয়া ট্রাস্টের মেডিকেল টিমের সদস্যরা হতাহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যান। তাদের একজন সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষের ভিড়ের মধ্যে গরমে অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েকজন নিচে পড়ে যান। এ সময় পদদলিত হয়েছেন অনেকে। আহত অবস্থায় অন্তত ১০ জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসি আমরা।’
আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. মাহফুজ (৩৫) বলেন ‘চারদিকে অনেক মানুষ। রোদের তাপও অনেক বেশি। মানুষের ভিড়ের মধ্যে নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে মাথা ঘুরে নিচে পড়ে গেছি। মানুষের পায়ের নিচে চাপা পড়ে মরার অবস্থা, মনে হইছিল আর বাঁচব না। তবে কয়েকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসায় জানে বাঁচছি।’
চট্টগ্রামের মুরাদপুরে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে আয়োজিত জশনে জুলুসে পদদলিত হয়ে চিকিৎসাধীন তিনি। মাহফুজের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তাঁর হাতে স্যালাইন চলছিল।
পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের একজন আইয়ুব আলী (৬০)। তাঁর বাড়ি পটিয়া উপজেলায়। জশনে জুলুসে অংশ নিতে সকালে নগরে আসেন তিনি। দুপুরে মুরাদপুরে পদদলিত হওয়ার পর তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আজ বেলা দুইটার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, আইয়ুব আলীর লাশের পাশে আহাজারি করছেন তাঁর ভাগনে বোরহান উদ্দিন (৪০)। তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে সবাই জুলুসে এসেছি। মানুষের ভিড়ের মধ্যে মামা (আইয়ুব আলী) বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। আমরা ভেবেছি, মামা হয়তো পাশেই আছেন। এর মধ্যেই ফোন আসে, মামাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে এসে দেখি তিনি আর বেঁচে নেই।’
পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া অপরজন কিশোর সাইফুল ইসলাম (১৩)। তার পরিবার থাকে নগরের কালামিয়া বাজার এলাকায়। হাসপাতালের সামনে তার বেশ কয়েকজন স্বজনকে বিলাপ করতে দেখা যায়। সাইফুলের বড় ভাই মো. শফিক বলেন, ‘সাইফুল কার সঙ্গে জুলুসে গিয়েছে সেটি জানি না। আমাদের ফোন করে বলা হয় হাসপাতালে আসতে। এসে দেখি আমার ভাই আর বেঁচে নেই।’
১৯৭৪ সাল থেকে প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম নগরে এ জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবার ছিল ৫৪তম জশনে জুলুস।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার তিন বছর পর থেকে ইসলামি বর্ষপঞ্জির ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে আঞ্জুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট এ আয়োজন করে আসছে। ঐতিহ্যবাহী জুলুস এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী সুন্নি মুসলমানদের কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রতিবছর লাখো ভক্ত-অনুরাগীর সমাগমে এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় শোভাযাত্রায় রূপ নিয়েছে।