■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
চলতি বছর ডেঙ্গু হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০১ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯০ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২ জনের।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ২০১ জনের ব্যক্তিদের মধ্যে ১০১ জন পুরুষ এবং ১০০ জন নারী।
সর্বশেষ মারা যাওয়া দুজনের মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন নারী। তাঁদের একজন ঢাকা দক্ষিণ ও অন্যজন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার বাসিন্দা।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারি হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৩৮ জন। আর বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২ জন, মোট ৪৯০ জন।
এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ১১২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৯ জন, খুলনা বিভাগে ৩৫ জন, রংপুর বিভাগে ৬ জন এবং বরিশাল বিভাগে ২৭ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ৩ হাজার ৫২২ জন। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছেন ১ হাজার ৭৩৩ জন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রয়েছেন ১ হাজার ৭৮৯ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ হাজার ৮৯৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ২০১ জনের। আর ছাড়পত্র রোগীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ১৭২ জন।
সবচেয়ে বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালগুলোতে। ১০৭ জনেরই মৃত্যু হয়েছে এই অঞ্চলে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১ হাজার ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩৩৯ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। মার্চে ৩১১ জনের বিপরীতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিলে ৫০৪ জন ভর্তি হয়েছে। আর মারা গেছে দুজন। মে মাসে ৬৪৪ জনের বিপরীতে ১২ জন, জুনে ৭৯৮ জনের বিপরীতে ৮, জুলাইতে ২ হাজার ৬৬৯ জনের বিপরীতে ১২, আগস্টে ৬ হাজার ৫২১ জনের বিপরীতে ২৭ জন এবং গত মাসে ১৮ হাজার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ওই মাসে ৮০ জনের মৃত্যু হয়। চলতি মাসে এ পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৯৫৭ এবং মারা গেছেন ৩৮ জন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক আতিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু এখন সিজনাল নেই, সারা বছরই হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলে এটা বাড়ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিরোধক ওষুধ ব্যবহারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনে পক্ষ থেকে সব জায়গায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদ ড. মনজুর চৌধুরী বলেন, মশানিধনে শুধু জেল-জরিমানা আর জনসচেনতনা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ চালিয়ে দক্ষ জনবল দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ জন।
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮৬৮ জনের। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ হাজার ৭০৫ জন। ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে।
দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।
২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।
২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।