■ আশুলিয়া প্রতিনিধি ■
শ্রমিক অসন্তোষ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ২১৯টি পোশাক কারখানা আজও বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রয়েছে ৮৬টি।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল বিজিএমইএ নেতারা ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের আহ্বানের পর সব কারখানা আজ থেকে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে সকাল ৮টার দিকে অনেক কারখানা খুলে দেওয়া হলেও ৮৬টি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ রেখেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৩৩টি কারখানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে।
শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম জানান, শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আগে থেকেই কিছু কারখানায় অভ্যন্তরীণ বেশকিছু দাবিদাওয়া নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। সেসব কারখানার শ্রমিকরা আজ কাজে ফেরেনি। এ ছাড়া আজ সকালেও বেশকিছু কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশের পর কর্মবিরতিসহ কারখানা থেকে বের হয়ে গেলে সব মিলিয়ে শিল্পাঞ্চলের ২১৯টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা মোতাবেক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৮৬টি কারখানা আর বাকি ১৩৩টিতে আজকের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ ।
তিনি আরও জানান, শিল্পাঞ্চলে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে।
র্যাব ৪ সিপিসি ২ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর জালিস মাহমুদ খান বলেন, পুরো আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে আমাদের টহল চলছে। আশুলিয়া থেকে জিরানী, ডিইপিজেডের পুরো এলাকায় আমাদের ১৪টি টহল টিম ও ৪টি এপিসি কাজ করছে। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কারখানাগুলো হলো- ভারচুয়াল বটয়ম, মণ্ডল নীটওয়্যারস লিমিটেড, সিগমা ফ্যাশনস লিমিটেড, হা-মীম গ্রুপ, ক্রশওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, জিন্স প্রোডিউসার লিমিটেড, অরুনিমা গ্রুপের অরুনিমা স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড এবং ডিএমসি এ্যাপারেলস লিমিটেড, এস এম নীটওয়্যারস লিমিটেড, আগামী এ্যাপারেলস লিমিটেড, মানতা এ্যাপারেলস লিমিটেডসহ আরও ৭৪টি পোশাক কারখানা।
আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় বিভিন্ন কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, এপিবিএন ও পুলিশ সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সড়কে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা।
শ্রমিকরা জানান, টানা ১০ দিনের বেশি সময় ধরে কারখানার ভেতরে ও সড়কে শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করছেন। কিন্তু মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবি নিয়ে টালবাহানা করছে। কিছু কাখানায় আশ্বাস দিয়েও পরে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া হয়নি। এতে শ্রমিকদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। এছাড়া যেসব কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ কারখানায় গত মাসের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি।
তারা আরও বলেন, বুধবার থেকে কিছু কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করে। এছাড়া কিছু কারখানার শ্রমিকরা সকালে কাজে যোগ দিয়ে উৎপাদন শুরু করলেও পরে আবার সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়। আজও অনেকে কারখানায় গিয়ে গেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ দেখেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক টেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, গতকালের চেয়ে আজ কারখানা বন্ধের সংখ্যা বাড়ছে। এতে করে শ্রমিক অসন্তোষের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মালিক শ্রমিকের আলোচনার কোনো পথ হচ্ছে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটির কারণে শ্রমিকরা বাসায় অবস্থান করছে আর মালিকপক্ষ অফিসে। শ্রমিকদের দাবি নিয়ে পর্যাপ্ত আলোচনা না হওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ আরও দীর্ঘ হচ্ছে।