বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন: বাধ্যতামূলক অবসরে ২২ ডিসি

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ২২ জন জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিন সচিবালয়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব এ তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর যে নির্বাচন সেটাকে আমরা কেউ বলি বিতর্কিত, কেউ বলি অগ্রহণযোগ্য, কেউ বলি দিনের ভোট রাতে ইত্যাদি। এসব জায়গায় যেসব রিটার্নিং কর্মকর্তা, এই ৩ সময়ের রিটার্নিং অফিসারদের সহযোগিতায় নির্বাচন সম্পন্ন করে সরকার। এই সরকার (আওয়ামী লীগ) তিন মেয়াদে থাকার কারণে আজ আমারা এ দুরবস্থায় পড়েছি। তারা (ওই সময়ের ডিসিরা) অনেক বড় নেগেটিভ ভূমিকা রেখেছিলেন। কোনো একজন ডিসিও বলেননি আমি প্রতিবাদ করবো, আমি রিটার্নিং অফিসার থাকবো না, আমি রিজাইন করলাম, কাজ করবো না।

সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা এরই মধ্যে ৪৩ জনকে (ডিসি) ওএসডি করেছি। যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম তাদের ওএসডি করা হয়। আর চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি হলে আমরা বাধ্যতামূলক অবসর দিচ্ছি। 

মোখলেস উর রহমান বলেন, আজ ২২ জন এরকম যারা ডিসি ছিলেন এখন সচিব রয়েছেন, এমন ২২ জনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়ার আদেশ জারি হয়েছে।

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ২২ ডিসি

সচিব

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, জনপ্রশাসন মন্তণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু হেনা মোরশেদ জামান।

অতিরিক্ত সচিব

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মোখলেসুর রহমান সরকার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সায়লা ফারজানা, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, বিদ্যুৎ বিভাগের ফয়েজ আহাম্মদ, বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস ও কপিরাইট নিবন্ধনের মো. তোফায়েল ইসলাম, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটিডি) কামরুন নাহার সিদ্দীকা, ভূমি সংস্কার বোর্ডের সদস্য উম্মে সালমা তানজিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাব্বী মিয়া, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম আলম, ইউএই আবুধাবি বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার লেবার মো. আব্দুল আওয়াল, বাংলাদেশ জাতীয় বিজ্ঞান ও কারিগরি তথ্য সংগ্রহ ও বিতরণ কেন্দ্রের (ব্যান্সডক) মহাপরিচালক মো. শওকত আলী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তন্ময় দাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এনামুল হাবীব, পরিকল্পনা বিভাগের আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের মো. হামিদুল হক।

যুগ্ম সচিব

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘরের পরিচালক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম।

উপসচিব

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহমেদ কবির।

এর আগে গতকাল বুধবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা আলাদা প্রজ্ঞাপনে ২০১৮ সালের বিতর্কিত দিনের ভোট আগের রাতে করা সাবেক ৩৩ জেলা প্রশাসককে (ডিসি) ওএসডি করা হয়। তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে যুগ্মসচিব হিসাবে কর্মরত ছিলেন।

ওএসডি হয়েছেন এমন সাবেক ৩৩ ডিসি হলেন-চাঁদপুরের মো. মাজেদুর রহমান খান, পটুয়াখালীর মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, পঞ্চগড়ের সাবিনা ইয়াসমিন, মেহেরপুরের ড. আতাউল গনি, পিরোজপুরের আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন, সিলেটের এম কাজী এমদাদুল ইসলাম এবং সাতক্ষীরার ডিসি এসএম মোস্তফা কামাল।

পৃথক আদেশে লক্ষ্মীপুরের অঞ্চন চন্দ্র পাল, কুড়িগ্রামের মোছা. সুলতানা পারভিন, কিশোরগঞ্জের মো. সারওয়ার মোর্শেদ চৌধুরী, খাগড়াছড়ির মো. শহীদুল ইসলাম, খুলনার মো. হেলাল হোসেন এবং মাগুরার ডিসি মো. আলী আকবরকে ওএসডি করা হয়েছে।

অপর এক আদেশে বান্দরবানের মোহাম্মদ দাউদ ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এজেএম নুরুল হক, বরিশালের এজেডএম অজিয়র রহমান, ভোলার মোহাম্মদ আলম ছিদ্দিকী এবং চুড়াডাঙ্গার ডিসি গোপল চন্দ্র দাসকে ওএসডি করা হয়েছে।

পৃথক আদেশে শরীয়তপুরের কাজী আবু তাহের, নওগাঁর মো. মিজানুর রহমান, সুনামগঞ্জের মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, শেরপুরের আনার কলি মাহবুব, নরসিংদির সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন এবং হবিগঞ্জের ডিসি মাহমুদুল কবির মুরাদকে ওএসডি করা হয়েছে।

অপর এক আদেশে কুমিল্লার আবুল ফজল মীর, নেত্রকোনার মঈন উল ইসলাম, ফেনীর ওয়াহেদুজ্জামান, রাঙামাটির একেএম মামুনুর রশিদ, রাজশাহীর এসএম আব্দুল কাদের এবং ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিমকে ওএসডি করা হয়েছে। এছাড়া পৃথক এক আদেশে বগুড়ার কবীর মাহমুদ, দিনাজপুরের মো. মাহমুদুল আলম এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়ার ডিসি হায়াত উদ দৌলা খানকে ওএসডি করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পৃথক ৬টি প্রজ্ঞাপনে এই ৩৩ যুগ্ম সচিবকে ওএসডি করার কথা জানানো হয়।

মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই কর্মকর্তারা ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর যেসব এসপি ও ইউনিট প্রধানরা বিপিএম-পিপিএম পদক পেয়েছিল, তা-ও বাতিল করা হয়েছে। একই কারণে এর আগে ওএসডি করা হয় ১২ ডিসিকে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *