■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৯৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিমানে থাকা ২৪২ আরোহীর মধ্যে ২৪১ জনই নিহত হয়েছেন। বিমানটি আছড়ে পড়েছিল সেখানকার বিজে মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে। এতে সেখানেও ৫০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন।
গুজরাটের উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বিধি চৌধুরী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘দুর্ঘটনায় প্রায় ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। এতে কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে ছিলেন’।
ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিভাবে বেঁচে গেছেন এক যাত্রী। পুলিশ কর্মকর্তা বিধি চৌধুরী জানিয়েছেন, এই যাত্রী বিমানের জরুরি বহির্গমন দরজার পাশের ১১-এ আসনে বসা ছিলেন। এ কারণে হয়ত তিনি বেঁচে গেছেন। হাসপাতালে হয়ত দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া অন্য আরও কেউ থাকতে পারেন।
আহমেদাবাদ পুলিশের প্রধান জি এস মালিক জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে ২০০টিরও বেশি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে বিমানের যাত্রী ছাড়াও ওই মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মরদেহ আছে। এছাড়া নিহতদের মধ্যে আছেন গুজরাটের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি।
ভারতের স্বাস্থ্য সচিব ধনঞ্জয় দ্বিবেদী বিমানে থাকা যাত্রী ও ওই ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ সেম্পল দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। যেন মরদেহগুলো শনাক্ত করা যায়।
বিমানটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আছড়ে পড়ার পর টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এটির লেজের অংশটি ছাত্রাবাসের একটি ভবনের ছাদে এখনো পড়ে আছে।

বিমানটি ছিল বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। যা বিশ্বের অন্যতম আধুনিক বিমান। এর আগে বোয়িংয়ের এ মডেলের বিমান কখনো বিধ্বস্ত হয়নি।
বৃহস্পতিবার লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটি আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়েছে। এটি দেশটির অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বিমানটি লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। বিমানটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছে একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার তীব্রতা বিবেচনা করে কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। উদ্ধার অভিযান চলছে। তবে ধ্বংসাবশেষ এবং আগুনের অবস্থা বিবেচনা করে পরিস্থিতি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং রয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে সেখানকার সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের উদ্দেশে বিমানটি রওনা দেয়। উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পরই এটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানে যে ২৪২ আরোহী ছিলেন তাদের মধ্যে ২৩০ জন ছিলেন সাধারণ যাত্রী। আর বাকি ১২ জন ছিলেন ক্রু।
বিমানটিতে করে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছিলেন ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং একজন কানাডিয়ান নাগরিক।
বিমানটি পাখির আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে থাকতে পারে
ভারতের এ ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পর অনেকটা দুলতে দুলতে বিমানটি এগিয়ে যাচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরই এটি বিধ্বস্ত হয়। এয়ার ইন্ডিয়ার এ বিমানটি সেখানকার একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আঘাত হানে।
বিমান চলাচল বিষয়ক এক বিশেষজ্ঞ সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, বিমানটি উড্ডয়ন করার সঙ্গে সঙ্গে সম্ভবত এটিতে কয়েকটি পাখি আঘাত হেনেছিল। এতে করে পূর্ণ উড্ডয়নের জন্য যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন ছিল বিমানটি সেটি হারিয়ে ফেলেছিল। ফলে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও বিমানটি আর উপরের দিতে নিতে পারেননি পাইলট।
সাবেক ক্যাপ্টেন সৌরভ ভাটনাগর নামের এ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, প্রথমত মনে হচ্ছে, একাধিক পাখির ধাক্কায় দুটি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে যায়। উড্ডয়নটি নিখুঁত ছিল। কিন্তু ল্যান্ডিং গিয়ারটি উপরে তোলার আগেই বিমানটি নিচে নামা শুরু করে। এমনটি সাধারণত হয় যখন ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায় অথবা বিমান আকাশে থাকার সামর্থ হারিয়ে ফেলে। তদন্তে আসল কারণ বেরিয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে উড্ডয়নটি বেশ সুন্দরভাবে হয়েছিল। এছাড়া বিমানটিও নিয়ন্ত্রিতভাবে নিচে নেমে আসে। পাইলট মে ডে কল করেছিলেন। যার অর্থ ওই সময় জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।’
সেলফি বিমানে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার নিঃশব্দ স্মৃতিচিহ্ন
ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর যে ধ্বংসস্তূপ পড়ে রয়েছে, তারই কোথাও মাটির নিচে চাপা পড়ে আছে রাজস্থানের এক পরিবারের মোবাইল ফোন। সেই ফোন হয়তো আর কখনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। হয়তো আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিন্তু ওই ফোনে তোলা একটি সেলফি চিরদিন থেকে যাবে ২৪২ জন যাত্রীসহ বিমানে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার এক নিঃশব্দ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে।
ছবিটি ছিল নতুন এক জীবনের পথে যাত্রা শুরুর প্রতীক। উদয়পুরের একটি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক কোমি ভ্যাশ চাকরি ছেড়ে স্বামী ডা. প্রতীক জোশির সঙ্গে লন্ডনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল তাদের তিন সন্তান। ছবিতে তাদের মুখে যে আনন্দ-উল্লাস দেখা যায়, তা বলে দেয় কতটা উচ্ছ্বসিত ছিল এই পরিবার।
ভাগ্যাহত বিমানে তোলা সেলফিতে দেখা যায়—ডা. জোশি নিজে ছবি তুলেছেন, পাশে বসে আছেন তার স্ত্রী কোমি। দুজনেই হাসিমুখে। সামনের সারিতে বসে আছে তাদের যমজ দুই ছেলে এবং বড় মেয়ে। ছেলেরা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করছে, আর মেয়েটি হাসছে প্রাণখুলে।
এই দম্পতির ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, ডা. কোমি ভ্যাশ এবং ডা. প্রতীক জোশি দুজনেই আগে উদয়পুরের প্যাসিফিক হাসপাতালে কাজ করতেন। প্রতীক কিছুদিন আগে লন্ডনে চলে যান এবং সম্প্রতি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজস্থানের বানসওয়ারা ফিরে আসেন। যমজ দুই ছেলের নাম নকুল ও প্রদ্যুৎ। তাদের বয়স পাঁচ বছর। মেয়ের নাম মিরায়া (৮)।
প্যাসিফিক হাসপাতালের এক মুখপাত্র বলেন, লন্ডনে স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য সম্প্রতি চাকরি ছেড়েছিলেন কোমি। প্রতিবেশীরা বলেছেন, প্রতীকের বাবা শহরের একজন খ্যাতনামা রেডিওলজিস্ট। আর কোমির বাবা ছিলেন রাজ্য সরকারের গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা।
প্রতীকের চাচাতো ভাই নয়ন, প্রতীক ও কোমি আহমেদাবাদে গিয়েছিল লন্ডনের ফ্লাইট ধরতে। প্রতীক মাত্র দুই দিন আগে এসে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যাচ্ছিল। পরিবারের আরও অনেকেই তাদের বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন।
ডা. কোমি ভ্যাশের ভাই প্রবুদ্ধ বলেন, কোমি ও প্রতীক প্রায় ১০ বছর আগে বিয়ে করেন। প্রতীকের এক বোনও আছেন। পেশায় প্রকৌশলী তিনি।
দেশটির সংবাদমাধ্যম বলেছে, ‘‘আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল বিমাবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয় বিমানটি। স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৩৮ মিনিটে আকাশে উড্ডয়নের ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই প্রচণ্ড আওয়াজ হয়। এর পরপরই বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে। সব কিছু খুব কম সময়ের মধ্যেই ঘটে যায়।’’
আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেছেন, তার মনে হয়েছিল যেন ভূমিকম্প হলো। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) তিনি বলেন, ‘‘আমি ঘরেই বসে ছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড একটা শব্দ হলো। মনে হলো যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। আমি তখনও জানতাম না বিমান ভেঙে পড়েছে। পরে এখানে এসে জানতে পারি।’’
‘‘দুর্ঘটনাস্থলে এসে দেখি বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর সেখানে অনেকের মরদেহ পড়ে আছে।’’
দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিধায়ক দর্শনা বাঘেলা এএনআইকে বলেছেন, বিমান বিধ্বস্তের সময় তিনি ঘটনাস্থলের কাছেই নিজের দপ্তরে ছিলেন।
‘‘আমি এখানে আমার অফিসে বসেছিলাম। সেখানে বিস্ফোরণ ঘটে। সেখানে গিয়ে দেখি বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। প্রচুর ধোঁয়া বের হচ্ছে। মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় শ্রমিকদের সহায়তায় আমরা অনেককে উদ্ধার করতে পেরেছি।’’
ছয় দশকে ১৪ বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী ভারত
সুইজারল্যান্ড মন্ট ব্ল্যাঙ্ক দুর্ঘটনা (১৯৬৬): ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি মাসে এয়ার ইন্ডিয়ার ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ নামের বোয়িং ৭০৭ বিমানটি যাত্রাপথে সুইজারল্যান্ডের মন্ট ব্ল্যাঙ্ক পর্বতে আছড়ে পড়ে। মৃত্যু হয় বিমানে থাকা ১১৭ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্যের।
ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস ফ্লাইট ১৭১ দুর্ঘটনা (১৯৭৬): ১৯৭৬ সালের ১২ অক্টোবর ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস ফ্লাইট ১৭১-এর দুর্ঘটনা ঘটে। মুম্বাই থেকে মাদ্রাজগামী এই ফ্লাইটটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই ভয়ংকর যান্ত্রিক ত্রুটির শিকার হয়ে আরব সাগরে পতিত হয়। এতে বিমানে থাকা ৯৫ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য মারা যান।
আরব সাগর দুর্ঘটনা (১৯৭৮): ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি মুম্বাই থেকে ছেড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমান আরব সাগরে বিধ্বস্ত হয়। ইন্সট্র–মেন্ট ত্রুটি ও পাইলট বিভ্রান্তির কারণে ২১৩ জনের সবাই মারা যান।
এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ৪০৩ দুর্ঘটনা (১৯৮২) : ২১ জুন, ১৯৮২ সালে মুম্বাইয়ে অবতরণের সময় এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ৪০৩ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। বিমানে ১১১ জন থাকলেও ১৭ জন নিহত হন।
কানিষ্কা বোমা বিস্ফোরণ (১৯৮৫): ১৯৮৫ সালের ২৩ জুন এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ কানাডা থেকে ভারতে আসার পথে আয়ারল্যান্ড উপকূলে মাঝ আকাশে বিস্ফোরিত হয়। এতে বিমানে থাকা ৩২৯ জনের সবাই মারা যান।
আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা (১৯৮৮): ১৯৮৮ সালের ১৯ অক্টোবর ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট আইসি-১১৩ আহমেদাবাদে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৩০ জন মারা যান।
বেঙ্গালুরু দুর্ঘটনা (১৯৯০): ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৬০৫ বেঙ্গালুরুর রানওয়ে অতিক্রম করে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় ১৪৬ জনের মধ্যে ৯২ জন প্রাণ হারান।
আওরঙ্গাবাদ বিমান দুর্ঘটনা (১৯৯৩): ১৯৯৩ সালের ২৬ এপ্রিল আওরঙ্গাবাদ বিমানবন্দরে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লইট ৪৯১ উড্ডয়নের সময় ভুল করে রানওয়েতে চলে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। যার ফলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে।
চরখি দাদরি মাঝ আকাশে সংঘর্ষ (১৯৯৬): ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর হরিয়ানার চরখি দাদরি শহরের আকাশে সৌদি এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৪৭ এবং কাজাখস্তান এয়ারলাইন্সের ইলিউশিন-৭৬ বিমানের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে দুটি বিমানে থাকা মোট ৩৪৯ জনের সবাই মারা যান।
পাটনা বিমান দুর্ঘটনা (১৯৯৮): ১৯৯৮ সালের ১৭ জুলাই অ্যালায়েন্স এয়ার ফ্লাইট ৭৪১২ পাটনার কাছাকাছি একটি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এতে ৫৫ জন যাত্রী এবং মাটিতে থাকা ৫ জন মারা যান।
কলকাতা-দিল্লি ফ্লাইট দুর্ঘটনা (২০০০): ২০০০ সালের ১৭ জুলাই, কলকাতা থেকে দিল্লিগামী এলায়েন্স এয়ারের ফ্লাইট ৭৪১২ পাটনা বিমানবন্দরে অবতরণের ঠিক আগে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে বিমানের ৬০ জন আরোহীর প্রাণহানি ঘটে।
ম্যাঙ্গালুরু বিমান দুর্ঘটনা (২০১০) : ২০১০ সালের ২২ মে দুবাই থেকে ম্যাঙ্গালুরুগামী এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট ৮১২ যাত্রাপথে একটি খাদে পড়ে যায়। ফলে ১৬৬ জনের মধ্যে ১৫৮ জন নিহত হন।
কোজিকোড দুর্ঘটনা (২০২০) : ২০২০ সালের ৭ আগস্ট দুবাই থেকে ফেরা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট আইএক্স-১৩৪৪ কোজিকোড বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বৃষ্টির কারণে রানওয়ে ছাড়িয়ে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যায়। বিমানে থাকা ১৯০ জনের মধ্যে ২১ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হন।
আহমেদাবাদ-লন্ডন এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট দুর্ঘটনা (২০২৫) : ২০২৫ সালের ১২ জুন, এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এ১৭১, বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী পথে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই মর্মান্তিকভাবে বিধ্বস্ত হয়।
যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়েই উড়ে বেড়াচ্ছে ১১শ ‘ড্রিমলাইনার’
২০১১ সালের জন্মের পর বোয়িংয়ের ড্রিমলাইন সিরিজের এটাই প্রথম বিমান দুর্ঘটনা। তবে এই সিরিজের বিমানগুলোর জন্মগত যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে এর আগেও আলোচনা হয়েছিল। জন্মত্রুটি নিয়েই উড়ে বেড়াচ্ছে ১,১০০ বেশি বোয়িংয়ের এই মডেলের বিমানগুলো।
বোয়িংয়ের ড্রিমলাইন সিরিজের যান্ত্রিক ত্রুটি নিয়ে চলতি বছরের শুরুতে রিপোর্ট করেছিল দ্য ইকোনমিক টাইমস। প্রতিবেদনে জানা গেছে, হাইড্রোলিক লিক এবং ফ্ল্যাপ ত্র“টির কারণে নিবন্ধন একটি ড্রিমলাইনারের একাধিক ডাইভারশন ঘটেছে। যার ফলে মাত্র ২৫ দিনের মধ্যে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর বিমানটি নিয়ে একাধিক বক্তব্য দিয়েছে বিশ্লেষকরা।
পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্লুইড মেকানিক্সের সিনিয়র লেকচারার ড. জেসন নাইট বলেছেন, ‘বিমানটি অতিরিক্ত ওজনের ছিল বা খুব বেশি জ্বালানি বহন করছিল এটা অসম্ভব। বিমানটি একটি ইঞ্জিনে উড়তে সক্ষম হওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, তাই দুর্ঘটনার সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ হলো দ্বি-ইঞ্জিনের ব্যর্থতা। উচ্চতা এত কম ছিল যে, পাইলট জরুরি অবতরণের জন্য কম সময় পাননি। দ্বি-ইঞ্জিনের ব্যর্থতার সবচেয়ে আরও একটি সম্ভাব্য কারণ হলো একটি পাখির ধাক্কা, যা অনেকসময় ইঞ্জিনটি বিধ্বস্ত ফেলে।’
ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের লয়েডের রেজিস্টার অব সেফটি চেয়ার অধ্যাপক জন ম্যাকডার্মিড বলেন, ‘উড্ডয়ন এবং অবতরণ হলো উড্ডয়নের সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়-ক্রুজ থেকে দুর্ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক। তবে, এটি আশ্চর্যজনক যে বিমানটি ২০০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছানোর আগেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল। পাইলটরা উড্ডয়নের সময় বেশিক্ষণ থাকতে পারেনি। তাই মনে হচ্ছে সমস্যাটি উড্ডয়নের শেষ অংশে বা উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই হঠাৎ করেই ঘটেছিল এবং এটি এতটাই গুরুতর ছিল যে এটি নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব ছিল।’
২০১১ সালে প্রথমবারের মতো চালু হয় বোয়িংয়ের ড্রিমলাইনার সিরিজের প্রথম মডেল। বছরের পর বছর ধরে এটি তার জ্বালানি দক্ষতা, উদ্ভাবনী নকশা এবং বর্ধিত যাত্রী আরামের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ড্রিমলাইনারগুলো বোয়িং ৭৭৭-এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক রুটে পুরানো বোয়িং ৭৪৭-এর প্রতিস্থাপন শুরু করে। ১৪ বছরেরও কম সময়ে ড্রিমলাইনার বহর এক বিলিয়নেরও বেশি যাত্রী পরিবহণ করেছে। ৭৮৭-৮ বিমানটি সাধারণত ২৪২ থেকে ২৯০ জন যাত্রীর আসন রয়েছে। এটি ১৩ হাজার ৫৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবিরাম উড়তে পারে। যাত্রীরা প্রায়শই এর আরামের জন্য ৭৮৭-৮ এর প্রশংসা করেন। কম কেবিন উচ্চতা (৬,০০০ ফুটের সমতুল্য), উচ্চ আর্দ্রতা এবং উন্নত বায়ু পরিস্রাবণের মতো বৈশিষ্ট্যগুলো দীর্ঘ ফ্লাইটগুলোকে কম ক্লান্তিকর করে তোলে। ইলেকট্রনিক ডিমিংসহ বড় জানালা থাকায় এই বিমানটি যাত্রীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে। তবে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার তার নির্ভরযোগ্যতা এবং যাত্রীদের আরামের জন্য পরিচিত হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিগত সমস্যার সম্মুখীন দেখা দিয়েছে।
ভারতের বিমান চলাচলের নিরাপত্তা ইতিহাসে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, কিন্তু বিমান শিল্পের বিকাশ এবং যাত্রীবাহী বিমান চলাচল ক্রমশ সাধারণ হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এর নিরাপত্তা রেকর্ডও উন্নত হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া এখন প্রায় ৩০টি ড্রিমলাইনার পরিচালনা করে। এর আগেও বোয়িং বিমানের অন্য সিরিজের বিমানগুলোর ত্রুটির কারণে দুটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সেগুলো হলো ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়া এবং ইথিওপিয়ায় তৎকালীন নতুন ৭৩৭ ম্যাক্স মডেল ব্যবহার করা। এই মডেলটি প্রায় এক বছরের জন্য পরিষেবা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তারপর পুনরায় চালু করা হয়েছিল এবং ব্যাপক ব্যবহারে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।