আম্মাজান চলচ্চিত্রের ২৫ বছর পূর্তি

:: নাগরিক বিনোদন ::

কাজী হায়াতের পরিচালনায় এই কালজয়ী সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সুপারস্টার মান্না, শবনম, ডিপজল, মৌসুমী, আমিন খান, মিজু আহমেদসহ আরো অনেকে। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছিলেন ডিপজল নিজেই। সিনেমার মিউজিক দিয়েছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।

কেমন আয় হয়েছিল

অল টাইম ব্লকবাস্টার এই সিনেমার বাজেট ছিলো ১ কোটি ২ লাখ (ডিরেক্টর কাজী হায়াতের মতে) / ১ কোটি ৪ লাখ (প্রডিউসার ডিপজলের মতে)

মজার কথা হলো এই সিনেমা টেবিল মানিতে বাংলাদেশের আগের সকল সিনেমার রেকর্ড মুক্তির আগেই ব্রেক করে ফেলে। সিনেমাটি মুক্তির আগেই বিভিন্ন রাইটস থেকে ১ কোটি ৪ লাখ (কাজী হায়াতের মতে) ১ কোটি ১৯ লাখ (ডিপজলের মতে) আয় করে নেয় টেবিল মানি থেকে।

ডিপজলের মতে এই সিনেমা ১৯/২০ কোটির ব্যবসা করেছিলো অন্যদিকে কাজী হায়াতের মতে ৮/৯ কোটির ব্যবসা করেছিলো।

১৯৯৯ সালের সর্বোচ্চ গ্রোসার। বিভিন্ন পত্রিকাতে ‘খবর আছে’ সিনেমার সাথে এই সিনেমাকে যৌথভাবে এক নাম্বারে রাখা হয়েছিলো। তবে ইন্ডাস্ট্রির লোকেদের ভাষ্যমতে এই সিনেমার আয় নিঃসন্দেহে বেশি ছিলো।

সিনেমার মিউজিক আ্যালবাম আইয়ুব বাচ্চুর আম্মাজান টাইটেল ট্রাকের জন্যেই চার্টবাস্টার। এছাড়া “তোমার আমার প্রেম একজনমের নয়” গানটিও বড় হিট হয়েছিলো।

যাই হোক সব মিলিয়ে বাংলা সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম ‘অল টাইম ব্লকবাস্টার’ সিনেমা এটি তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

এবার জেনে নেওয়া যাক আম্মাজান চলচ্চিত্রের কিছু অজানা বিষয়

ছেলের চোখের সামনে মা ধর্ষিত এই কনসেপ্টের ফিল্ম বাংলার বড় কোনো প্রডিউসার বানাতে চায়নি। কিন্ত কাজী হায়াৎ আমাদের বাস্তবজীবনের ট্রাজেডি পর্দায় আনতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। শেষমেশ ডিপজলকে সিনেমাটি প্রযোজনা করতে রাজী করান এই পরিচালক।

ডিপজল সিনেমা বানাতে রাজী হলেও লীড রোলে মান্নাকে নিতে আপত্তি করেন। সে সময় মান্না ও ডিপজলের ভিতর মন কষাকষি ছিলো। তিনি কাজী হায়াতকে মান্নাকে না নেবার জন্য অনুরোধ করেন এবং মান্নার রিপ্লেসমেন্ট হিসাবে রুবেল অথবা হুমায়ুন ফরিদিকে নিতে বলেন।

অন্যদিকে হায়াৎ সাহেব তার প্রিয় নায়ক মান্নাকে বাদ দিতে চাননি। তার ভাষ্যমতে তিনি মান্নাকে ভেবেই গল্প লিখেছেন। অবশেষে তিনি মান্নাকে জানান তুই যদি গ্যাঞ্জাম না মিটাস তবে ভালো একটা সিনেমা তোর হাতছাড়া হয়ে যাবে। মান্না নিজে যেয়ে রাতে ডিপজলের সাথে মিলমিশ করে নেয়। পরে সিনেমা তার হাতেই আসে।

সিনেমায় মায়ের চরিত্রে শাবানাকে অফার করা হয় তিনি প্রাথমিকভাবে সিনেমাটির গল্প শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে কান্না করেছিলেন। এবং সিনেমাটি করতে চাইলেও পরবর্তীতে সিনেমার কনসেপ্ট রিস্কি ভেবে বাদ দিয়ে দেন। তার জুটিবাধা নায়কেরা নাকি তাকে এই সিনেমা করতে বারন করেন। আরেক লিজেন্ডারি অভিনেত্রী ববিতাও রোলটি রিজেক্ট করে দেন। অবশেষে পাকিস্তানি সিনেমার সুপারস্টার ও বাংলাদেশী অভিনেত্রী শবনম সিনেমাটি করতে রাজী হন।

সিনেমাটি মান্নাকে অমর করে ফেলে। তার অভিনয় ও শবনমের সাথে মা ছেলের ক্যামেস্ট্রি বাংলার জনতার মনে গভীর ভাবে দাগ কেটেছিলো। এতটাই দাগ কেটেছিলো যে আজো মান্নার নাম আসলে ঘুরেফিরে এই সিনেমার নাম আসে। শুধু মান্না ভক্ত না অনেক নিউট্রাল অডিয়েন্সের প্রিয় সিনেমা। এই সিনেমার কাল্ট ফলোইং যত দিন যায় কমছে না বরং বাড়ছে। ইন্ডাস্ট্রির নতুন নায়ক নায়িকার প্রিয় সিনেমা এটি। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও এই সিনেমার জনপ্রিয়তা আছে। ওপার বাংলার সুপারস্টার জিতের সবচেয়ে প্রিয় বাংলাদেশী সিনেমা আম্মাজান।

আম্মাজানের সফলতার পর আব্বাজান নামে একটি সিনেমা বানানো হয় যেটা সেভাবে চলেনি।

আমার এখনো এই সিনেমা দেখলে মনের অজান্তে চোখে পানি আসে। আ্যানিমাল এসব সিনেমার কাছে কিছুই না। পাগলের মত মাতৃপ্রেম এক সাইকোটিক ক্যারেক্টারের সাথে ইমোশনের কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত। আর কি চাই!

মান্নার ইন্ট্রোডাকশনে নিজের চোখ দেখিয়ে বলা, আমারে বাচাইয়া রাখলা কেন আল্লাহ, আমার চোখ তুইল্লা নিলা না কেন!

অথবা, আমি মা রেও জেলে নিয়ে গেছি, রাতে ঘুম হয়না পাহাড়া দেই মা যদি আত্মহত্যা করে।।

মায়ের আদেশ পালন অথবা, সমাজের ইজ্জৎহারা মহিলাদের ধর্ষক সিরিয়াল কিলিং। নিজের মায়ের উপর অত্যাচারকারীদের উপর প্রতিশোধ। অথবা মায়ের পছন্দের মেয়েকে জোর করে ধরে আনা। ক্লাইম্যাক্সে ডিপজলের কাছে শত্রুতা শেষ করার আকুতি, অথবা মৌসুমীর পা ধরে কান্না করে মায়ের হসপিটালে নিয়ে যাওয়া।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *