কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকে ৩ কিশোরের ডাকাতির চেষ্টা

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■ 

ঢাকার কেরানীগঞ্জে চুলকুটিয়া রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের জিনজিরা শাখায় ডাকাতির চেষ্টা করে মো. লিয়ন মোল্লা নিরব (১৮), মো. আরাফাত (১৬) ও মো. সিফাত (১৬) নামে তিনজন কিশোর।

ব্যাংকে প্রবেশের পরপরই মূল ফটক বন্ধ করে দিয়ে এক গ্রাহকের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ধরে রাখে তারা। পরে তাদের একজন পিস্তল হাতে নিয়ে ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগের মধ্যে টাকা ভরতে থাকে। পাশাপাশি আরও একজন ছোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

তবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পুলিশ মহাপরিদর্শকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে তারা যৌথবাহিনীর কাছে সমঝোতার মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে। এ সময় তাদের কাছে থাকা একটি ব্যাগের মধ্য থেকে নগদ ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

এ ছাড়া তাদের ৩ জনের পকেট থেকে ১ লাখ টাকা করে আরও ৩ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ৪টি খেলনা পিস্তল, ২টি চাকু, ১টি পাইপ উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ৮টার দিকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহমেদ মুয়িদ।

সংবাদ সম্মেলনে এসপি বলেন, আত্মসমর্পণ করা ৩ ডাকাতের মধ্যে ১ জনের বয়স ১৮ বছর এবং ২ জনের বয়স ১৬ বছর। তাদের বয়স খুবই কম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি ভিডিও গেম ও মুভি দেখে অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে তারা ব্যাংক ডাকাতির প্রস্তুতি নিয়েছে।

ব্যাংক ডাকাতির কারণ জানতে চাইলে তারা একজন কিডনি রোগীকে সহযোগিতা করার জন্য এই পন্থা নিয়েছে বলে দাবি করেছে।

এ ছাড়া আইফোন তাদের খুব পছন্দ, তাই কিডনি রোগীকে সহযোগিতার পাশাপাশি ৩ জন ৩টি আইফোন ক্রয় করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তবে এগুলো আত্মসমর্পণ করা ডাকাতদের বক্তব্য, বাকিটা আমরা যাচাই বাছাই করছি।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, আমরা ঘটনার শুরু থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে গেছি। প্রথমে আমরা ডাকতদের সঙ্গে কথা বলি। একপর্যায়ে তারা ১৫ লাখ টাকা ও নিরাপদে বেড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ চাইলে আমরা তাদের কথা মেনে নেই। কিন্তু এতেও তারা আশ্বস্ত হতে না পেরে আইজিপি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলতে চান।

পরবর্তীতে আইজিপি মহোদয় তাদেরকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে তারা আত্মসমর্পণ করতে সম্মতি প্রকাশ করে। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তারা আত্মসমর্পণ করে নেমে আসলে আমরা তাদেরকে গ্রেফতার করি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংক ঢাকা দক্ষিণ জোনের জিএম ইসমাইল হোসেন বলেন, ঘটনার সময় আমাদের ৮ জন স্টাফ ভেতরে ছিলেন। এছাড়া প্রায় ৫-৬ জন গ্রাহক ছিলেন। ডাকাতরা আমাদের স্টাফ ও গ্রাহক সকলকেই জিম্মি করে ফেলেছিল। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় বড়ধরনের ক্ষতি ছাড়াই আমাদের স্টাফ ও গ্রাহকেরা মুক্তি পেয়েছে।

এর আগে দুপুর ২টার দিকে রূপালী ব্যাংকের ওই শাখায় ডাকাত দলের হানা দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ খবর তাৎক্ষণিকভাবে এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। পাশের একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করে ডাকাত হানা দেওয়ার তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়ে শাখাটি বাইরে থেকে ঘিরে ফেলেন।

এর আগে বেলা ২টার দিকে ব্যাংকের ভেতরে ডাকাত দল হানা দেওয়ার খবর পেয়ে এলাকাবাসী জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে ব্যাংকে ডাকাত দলের প্রবেশের বিষয়টি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জানানো হয়।

এ সময় এলাকাবাসী ব্যাংকটির চারপাশ ঘেরাও করে প্রবেশের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। বিকেল ৪টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তারা ব্যাংকটির আশপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে।

ব্যাংকে ডাকাত দলের হানা দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় করে। নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক-সংলগ্ন মূল সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আত্মসমর্পণ করেন তিনজন। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *