ভারতের হামলায় পাকিস্তানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

ভারতের হামলায় পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র জানান, এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছে। এর আগে ২৬ জন নিহত ও ৪৬ জন আহত হওয়ার তথ্য জানানো হয়েছিল।

অন্যদিকে ভারতের হামলার পর পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারতশাসিত কাশ্মীরে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও আরো ৪৩ জন আহত হয়েছে বলে ভারতীয় সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ বলেন, ‘ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলায় পাকিস্তানে অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ২৬ জন ক্ষেপণাস্ত্রে, আর পাঁচজন গোলার আঘাতে নিহত হন।’ এছাড়া ভারতীয় হামলায় ৫৭ পাকিস্তানি আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন এই সেনা কর্মকর্তা।

গেল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বেশকিছু লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। ভারতের দাবি, তারা নয়টি ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’ ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে রয়েছে জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তাইয়্যেবা নামে দুটি জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি। এই দুই সংগঠনকে আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র। এদের বিরুদ্ধেই ভারত গত মাসে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলার দায় চাপিয়েছে, যাতে ২৬ জন নিহত হন।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ‘টার্গেট বাছাই ও হামলার পদ্ধতিতে ভারত যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে।’ অন্যদিকে পাকিস্তান বলছে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের ছয়টি জায়গায় আঘাত হানা হয়েছে, তবে সেখানে কোনো জঙ্গি ঘাঁটি ছিল না। 

পাকিস্তানি সামরিক মুখপাত্র আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘এই হামলা পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের সরাসরি লঙ্ঘন। আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়ে দিয়েছি, পাকিস্তান প্রয়োজন অনুযায়ী পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাবে। পাকিস্তান একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র। তবে আমাদের সম্মান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যা কিছু দরকার হবে, তা আমরা করব।’

পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে ভারত এখনো এই দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি। রয়টার্সকে দেওয়া তথ্যে ভারতীয় কাশ্মীরের চারটি পৃথক সূত্র জানিয়েছে, তিনটি যুদ্ধবিমান পৃথক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে এবং তাদের পাইলটদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে পাল্টাপাল্টি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে যারা বাস করেন তারা কেউ কেউ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে।ছবিতে ভারতশাসিত কাশ্মীরের সুচেতগড় ও জেওরা ফার্ম গ্রাম থেকে গাড়ি ও অস্থায়ী ট্রেলারে করে পরিবারগুলোর বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে

পাঞ্জাবের কিছু গ্রামের মানুষ তাদের বাড়িঘর খালি করতে শুরু করেছে। জিনিসপত্র ট্র্যাক্টর-ট্রলিতে ভরে সীমান্ত থেকে দূরের গ্রামে অথবা তাদের আত্মীয়দের বাড়িতে যাচ্ছে তারা।

সীমান্ত থেকে দূরে সরে যাওয়া বেশ কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে বিবিসি কথা বলেছে। সেই পরিবারগুলো জানিয়েছে, তারা নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। তারা আরো জানায়, প্রতিটি পরিবারের একজন বা দুজন সদস্য তাদের বাড়িঘর, সম্পত্তি ও জমি রক্ষার জন্য সেখানে থাকবেন।

ফিরোজপুর জেলার হুসেনিওয়ালা সীমান্তের কাছে প্রায় ১২ থেকে ১৪টি গ্রাম রয়েছে যা সরাসরি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের সঙ্গে সংযুক্ত। ঝুগে হাজারা সিং গ্রামের জিৎ সিং বলেন, এখানে ভয়ের পরিবেশ রয়েছে। মানুষ তাদের আত্মীয়দের বাড়িতে যাচ্ছে।

শেহবাজ শরিফের ভাষণ
এর আগে ভারতের হামলা নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। ভারত গত রাতে পাকিস্তানের ওপর হামলা চালিয়ে ‘ভুল করেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর মূল্য দিতে হবে তাদের।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভারত হয়তো ভেবেছিল পাকিস্তান পিছু হটবে, কিন্তু ভারত ভুলে গেছে যে এটি এমন একটি জাতি যারা তাদের দেশের জন্য লড়াই করতে জানে।’

ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করার দাবির প্রতি ইঙ্গিত করে শেহবাজ শরিফ বলেন, পাকিস্তানের বিমানবাহিনী প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে এবং ‘আমাদের পক্ষ থেকে তাদের জবাব দেওয়া হয়েছে’।

তবে নয়াদিল্লি এখনো বিমান ভূপাতিত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেনি।

পাকিস্তান ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় হামলা নিহতদের মধ্যে সাত বছর বয়সী একটি ছেলে শিশু রয়েছে বলেও ভাষণে উল্লেখ করেন শরিফ। তিনি বলেন, সাত বছর বয়সী একটি ছেলে যখন নিহত হয় তখন তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে বাড়িতে ছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা এই নিহতদের প্রতিটি রক্তের ফোঁটার প্রতিশোধ নেব।’

গত মাসে ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলা পাকিস্তানের সঙ্গে ‘সম্পর্কিত ছিল না’ এবং দেশটিকে ‘ভুল কারণে অভিযুক্ত’ করা হয়েছে বলেও শরিফ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুরোধ না রাখা বা উপেক্ষার অভিযোগ তোলার আগে ভারতের প্রতি আমরা তদন্তের দাবি জানিয়েছিলাম।’ এ ছাড়া দেশের নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তানিদের সাহস দেখানোর আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে পাল্টাপাল্টি হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে যারা বাস করেন তারা কেউ কেউ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে।

ছবিতে ভারতশাসিত কাশ্মীরের সুচেতগড় ও জেওরা ফার্ম গ্রাম থেকে গাড়ি ও অস্থায়ী ট্রেলারে করে পরিবারগুলোর বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে

পাঞ্জাবের কিছু গ্রামের মানুষ তাদের বাড়িঘর খালি করতে শুরু করেছে। জিনিসপত্র ট্র্যাক্টর-ট্রলিতে ভরে সীমান্ত থেকে দূরের গ্রামে অথবা তাদের আত্মীয়দের বাড়িতে যাচ্ছে তারা।

সীমান্ত থেকে দূরে সরে যাওয়া বেশ কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে বিবিসি কথা বলেছে। সেই পরিবারগুলো জানিয়েছে, তারা নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। তারা আরো জানায়, প্রতিটি পরিবারের একজন বা দুজন সদস্য তাদের বাড়িঘর, সম্পত্তি ও জমি রক্ষার জন্য সেখানে থাকবেন।

ফিরোজপুর জেলার হুসেনিওয়ালা সীমান্তের কাছে প্রায় ১২ থেকে ১৪টি গ্রাম রয়েছে যা সরাসরি ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের সঙ্গে সংযুক্ত। ঝুগে হাজারা সিং গ্রামের জিৎ সিং বলেন, এখানে ভয়ের পরিবেশ রয়েছে। মানুষ তাদের আত্মীয়দের বাড়িতে যাচ্ছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *