■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান (এফ-৭ বিজিআই) বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী।
২০ জুলাই ২০২৫ দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে। কিন্তু উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাঙ্গণে বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাস্থলেই আগুন ধরে যায়। বিকট বিস্ফোরণে এলাকা কেঁপে ওঠে এবং স্কুল ভবনের একাংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আইএসপিআর (আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর) এক বিবৃতিতে দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। দুর্ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়।
৩৪ বছরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৩২টি বড় দুর্ঘটনা
বিমান বাহিনীর বেশিরভাগ দুর্ঘটনা প্রশিক্ষণ চলাকালেই ঘটে, যা পিটি-৬, ইয়াক-১৩০, এল-৩৯ বা এফ-৭ টাইপ বিমানের ক্ষেত্রে বেশি দেখা গেছে। প্রায় প্রতি দশকেই ফ্লাইট ক্যাডেট এবং স্কোয়াড্রন লিডারদের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় ছিল সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি — একদিনেই ৪৪টি বিমান বিধ্বস্ত হয়। উত্তরার দুর্ঘটনা এ তালিকায় বিরল ও ভয়াবহ সংযোজন, যেখানে যুদ্ধবিমান সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিধ্বস্ত হয়ে এতজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
২০ জুলাই ২০২৫, এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান, বাংলাদেশে এই মডেলের বিমানের তৃতীয় দুর্ঘটনা এটি। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর নিহত
৯ মে ২০২৪ – ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান, কর্ণফুলী নদীর মোহনায় বিধ্বস্ত; স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদ নিহত
২৩ নভেম্বর ২০১৮ – এফ-৭ বিজি যুদ্ধবিমান, টাঙ্গাইলে রকেট ফায়ারিং অনুশীলনের সময় বিধ্বস্ত, পাইলট নিহত
১ জুলাই ২০১৮ – কে-৮ডব্লিউ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, দুই পাইলট নিহত
২ জানুয়ারি ২০১৮ – মিল এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, শ্রীমঙ্গলে বিধ্বস্ত, কুয়েতি সামরিক কর্মকর্তা-সহ
২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ – দুইটি ইয়াক-১৩০ কক্সবাজারে বিধ্বস্ত
১১ জুলাই ২০১৭ – ইয়াক-১৩০ চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় বিধ্বস্ত, পাইলটরা ইজেক্ট করেন
২১ জুলাই ২০১৫ – এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার, মিরসরাইয়ে জরুরি অবতরণকালে ক্ষতিগ্রস্ত
২৯ জুন ২০১৫ – এফ-৭এমবি যুদ্ধবিমান, পতেঙ্গা উপকূলে বিধ্বস্ত, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট তাহমিদ নিহত
১৩ মে ২০১৫ – এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার, শাহ আমানত বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত, ১ প্রশিক্ষক নিহত
৩০ এপ্রিল ২০১৪ – পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ – পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত
২০ মে ২০১৩ – এল-৩৯ প্রশিক্ষণ বিমান, যশোরে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে
১৪ জুলাই ২০১৩ – ন্যাঞ্ছাং এ-৫ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত
৮ এপ্রিল ২০১২ – এল-৩৯ অ্যালবাট্রস জেট ট্রেনার, মধুপুরে বিধ্বস্ত, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট রেজা শরীফ নিহত
২০ ডিসেম্বর ২০১০ – পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান, বরিশালে বিধ্বস্ত, দুই স্কোয়াড্রন লিডার নিহত
২০১০ – এফ-৭এমবি যুদ্ধবিমান, পতেঙ্গায় বিধ্বস্ত
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ – পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান, কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্ত
২২ অক্টোবর ২০০৯ – পিটি-৬ ট্রেনার বিমান, বগুড়া সদরে বিধ্বস্ত
১৬ জুন ২০০৯ – এফটি-৬ যুদ্ধবিমান, চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে বিধ্বস্ত
৮ এপ্রিল ২০০৮ – এফ-৭এমবি যুদ্ধবিমান, টাঙ্গাইলের পাহাড়িয়া গ্রামে বিধ্বস্ত, স্কোয়াড্রন লিডার মোরশেদ নিহত
৯ এপ্রিল ২০০৭ – পিটি-৬ ট্রেনিং বিমান, যশোরে বিধ্বস্ত, ফ্লাইট ক্যাডেট ফয়সাল মাহমুদ নিহত
২৪ এপ্রিল ২০০৬ – পিটি-৬, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহে বিধ্বস্ত, ফ্লাইট ক্যাডেট তানজুল ইসলাম নিহত
৭ জুন ২০০৫ – এফ-৭এমবি যুদ্ধবিমান, উত্তরায় বহুতল ভবনের সঙ্গে সংঘর্ষ
৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ – পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত
২০০৩ – পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত
১৫ নভেম্বর ২০০৩ – পাইপার সেসনা এস-২ বিমান বিধ্বস্ত
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ – এফটি-৭বি বিমান বিধ্বস্ত
১৯ অক্টোবর ২০০২ – এমআই-১৭-২০০ হেলিকপ্টার, কক্সবাজার উখিয়ায় বিধ্বস্ত, ৪ জন নিহত
৩০ জুলাই ২০০২ – এ-৫সি যুদ্ধবিমান, চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট আদনান নিহত
৭ জানুয়ারি ২০০১ – এফটি-৭বি ট্রেনার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ মহসিন নিহত
১৭ নভেম্বর ১৯৯৮ – ন্যাঞ্ছাং এ-৫সি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত
২৬ অক্টোবর ১৯৯৮ – এফ-৭এমবি বিধ্বস্ত
৮ মে ১৯৯৬ – একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত
১৯৯৪ – একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত
১৯৯৩ – দুটি পিটি-৬ ট্রেনিং বিমান সংঘর্ষ, তিন পাইলট নিহত
১৯৯৩ – একটি এফটি-৫ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত, ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট কুদ্দুস নিহত
৩০ এপ্রিল ১৯৯১ – ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ৪০টি এফ-৬ এবং ৪টি মিল-৮ হেলিকপ্টার সম্পূর্ণ ধ্বংস