আগস্টে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৩৯ জনের, হাসপাতালে ভর্তি ১০৪৯৬ রোগী

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়াল ১২২ জনে। আগস্ট মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০ হাজার ৪৯৬ রোগী।

গত এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৬৮ জন। এ বছর এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ ভর্তি রোগীর রেকর্ড।

এর আগে গত ৭ জুলাই সর্বোচ্চ ৪৯২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এ নিয়ে এই বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৪৭৬ জনে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়ে বলা হয়, গত এক দিনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন মিটফোর্ড হাসপাতালে, একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের সবাই নারী। তাদের মধ্যে একজনের বয়স তিন বছর। এ ছাড়া একজন ৩৫, একজন ৪০ এবং একজন ৫৩ বছর বয়সী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি নতুন রোগীর মধ্যে ১৫৩ জনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার। 

এ ছাড়া জুনে পাঁচ হাজার ৯৫১, জানুয়ারিতে এক হাজার ১৬১, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬, এপ্রিলে ৭০১ এবং মে মাসে এক হাজার ৭৭৩ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১০ হাজার ৪৯৬ রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি নতুন রোগীর মধ্যে ১৫৩ জনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার। 

এর বাইরে ঢাকা বিভাগে ১০৫, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৩, খুলনা বিভাগে ৪২, রাজশাহী বিভাগে ৩৮, বরিশাল বিভাগে ১১০ এবং সিলেট বিভাগে দুজন ভর্তি হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু সংক্রমণ-বিষয়ক হালনাগাদকৃত তথ্যে গতকাল রোববার জানানো হয়েছে, চলতি বছর এ পর্যন্ত সারা দেশে ৩১ হাজার ৪৭৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর মারা গেছে চিকিৎসাধীন থাকা ১২২ রোগী। শুধু সদ্য শেষ হওয়া আগস্টেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১০ হাজার ৪৯৬ রোগী। এ মাসে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের।

বছরজুড়ে শুধু রাজধানীতে রোগী ভর্তি হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার। এর মধ্যে গত এক মাসে হাসপাতালে এসেছে ৩ হাজার। রাজধানীর বাইরে সারা দেশে মোট রোগী ২৩ হাজার ৮৮২ জন। এর মধ্যে গত মাসে সাড়ে ৭ হাজার রোগী ভর্তি হয়েছে। চলতি বছরে রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে সোয়া ৪ হাজার, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৫০, চট্টগ্রাম বিভাগে পৌনে ৫ হাজার, খুলনা বিভাগে ১ হাজার ৭০০, রাজশাহী বিভাগে সোয়া ২ হাজার, রংপুর বিভাগে ২০০, বরিশাল বিভাগে ১০ হাজারের বেশি এবং সিলেট বিভাগে ১১৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

এর বাইরে ঢাকা বিভাগে ১০৫, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৬, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৩, খুলনা বিভাগে ৪২, রাজশাহী বিভাগে ৩৮, বরিশাল বিভাগে ১১০ এবং সিলেট বিভাগে দুজন ভর্তি হয়েছেন।

এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে জুলাই মাসে। এ ছাড়া ৩১ অগাস্টে ৩৯, জুনে ১৯, জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারিতে তিন, এপ্রিলে সাত, মে মাসে তিনজন মারা যান। মার্চ মাসে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১০ হাজার ৬৮৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন জুলাই মাসে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক মাসে রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে রোগী বৃদ্ধির হার ৪৯ শতাংশ। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৩৬ শতাংশ, খুলনায় ৪০ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩৪ শতাংশ, রংপুরে ৪৬ শতাংশ, বরিশালে ২২ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে রোগী বৃদ্ধির হার ৬২ শতাংশ। গত এক মাসে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং রংপুরে রোগী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি।

গত দুই দশকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাইয়ের শেষে কিংবা আগস্টের শুরু থেকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তবে এ বছর জুনের শুরুতেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। বাইরে থেকে বেশি আসছে সংকটাপন্ন রোগী। বরিশাল ও বরগুনায় রোগীর বিপরীতে পর্যাপ্ত শয্যা সংকটের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোগীদের অভিযোগ, স্যালাইন ও ওষুধের সংকট রয়েছে। প্লাটিলেট সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। এ জন্য ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। একা কোনো সংস্থার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ভাইরাসটি প্রতিরোধে জাতীয়ভাবে কর্মসূচি নেওয়া দরকার। তবে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে একলাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন।

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮৬৮ জনের। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে। 

দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।

২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।

২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।

ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *