মালয়েশিয়ায় নারীসহ ৩৯৬ বাংলাদেশি আটক

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযান চলাকালে ৭৭০ জনকে গ্রেফতার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অভিবাসন কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে ৩৯৬ জন বাংলাদেশি রয়েছেন।

আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন ৩৯৬ জন বাংলাদেশি পুরুষ, ২৩৫ জন মিয়ানমারের পুরুষ, ৭২ জন নেপালি, ৫৮ জন ভারতীয়, ১৭ জন ইন্দোনেশিয়ান, দুই নারী এবং আরও তিনজন পুরুষ ও ছয়জন নারী অন্যান্য দেশ থেকে আসা। তাদের বয়স ২১ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম নিউ স্ট্রেইট টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়, টেবিলের নিচে লুকিয়ে, গুদামঘরে ঢুকে এমনকি ছাদে উঠেও রেহাই পাননি শত শত অবৈধ অভিবাসী। যাদের বেশিরভাগই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ থেকে এসেছেন। পালানোর জন্য বহু কৌশল চেষ্টা করেছেন তারা।

কিন্তু মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে অভিবাসন কর্মকর্তারা বুকিত বিনতাং-এ সমন্বিত এক অভিযান চালিয়ে ৭৭০ জনকে গ্রেফতার করে। অপস বেলাঞ্জা নামে কোডনামযুক্ত এই অভিযান রাজধানীর নাইটলাইফ হাবকে লকডাউন জোনে রূপান্তরিত করে।

অভিযানের সময় নিয়ন আলো এবং পর্যটকেমুখর রাস্তাগুলো বন্ধ করে ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অফিসাররা তিনটি ব্লক জুড়ে ছড়িয়ে পড়েন। তারা সেখানে থাকা বিদেশিদের নথিপত্র পরীক্ষা করেন। এ সময় লুকিয়ে থাকাদের বের করেও আটক করেন অফিসাররা।

মালয়েশিয়ার রাষ্ট্র পরিচালিত বার্তা সংস্থা বারনামার খবরে বলা হয়েছে, অভিযানের সময় হঠাৎ উপস্থিতিতে হতভম্ব হয়ে কেউ ভবনে উঠতে গিয়ে, কেউ টেবিলের নিচে কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুকিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত সবাইকে আটক করা সম্ভব হয়।

অভিবাসন বিভাগের প্রয়োগ শাখার পরিচালক বাসরি উসমান বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়। তিনি বলেন, ‘গত তিন সপ্তাহ ধরে স্থানীয়রা এলাকায় বিদেশিদের উপস্থিতি ও তাদের সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে অস্বস্তি বোধ করছিলেন। এ কারণেই রোববার রাত সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অপ বেলাঞ্জা নামে এ অভিযান চালানো হয়।’

বাসরি আরও জানান, অভিযানে সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় ছিল অনলাইন জুয়া খেলার একটি আসর। সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কর্মকর্তারা যখন দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন, তখনো সাতজন বিদেশি জুয়ায় মত্ত ছিলেন। তাঁরা অভিযানের খবরই টের পাননি। পরে সবাইকে গ্রেফতার করা হয়।’

অভিযানে মোট ১০৬ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। সরু গলি ও অন্ধকার পরিবেশের কারণে অভিযান কিছুটা জটিল হলেও তারা ২ হাজার ৪৪৫ জনকে তল্লাশি করেন। এর মধ্যে ছিলেন ১ হাজার ৬০০ জন বিদেশি ও ৮৪৫ জন স্থানীয়। বাসরি জানান, তল্লাশির পর ৭৭০ জন বিদেশিকে আটক করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বৈধ কাগজপত্র না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থান এবং ভুয়া পরিচয়পত্র বা পাস রাখা।

অভিযুক্তদের প্রাথমিক যাচাইয়ের জন্য পুত্রজায়ার জেআইএম কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর তাঁদের বুকিত জলিল ও লেংগেং অভিবাসন আটক কেন্দ্রে পাঠানো হবে। বাসরি উসমান বলেন, ‘অভিযানে শনাক্ত হওয়া অপরাধগুলোর মধ্যে রয়েছে অভিবাসন আইন ১৯৫৯/ ৬৩-এর ১৫ (১) (সি) ধারা অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থান, একই আইনের ৬ (১) (সি) ধারা অনুযায়ী বৈধ ভ্রমণ কাগজপত্র না থাকা এবং অভিবাসন বিধিমালা, ১৯৬৩-এর ৩৯ (বি) লঙ্ঘন।’ তিনি আরও জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৬ এবং মানব পাচার ও অভিবাসী চোরাচালান বিরোধী আইন, ২০০৭-এর অধীনে তদন্ত চলছে।

জনগণ ও নিয়োগদাতাদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের আড়াল করলে তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণ যদি অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে তথ্য দেয়, তাহলে তা আমাদের অভিযানে সহায়তা করবে।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *