■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
তুরস্কের অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের (টিএইচইএসএএস) সদর দফতরে হামলায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত চারজন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানী আঙ্কারায় এ ঘটনা ঘটে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ারলিকায়া জানিয়েছেন,মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, “হামলায় চারজন শহীদ এবং ১৪ জন আহত হয়েছেন। দুই সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে।”
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা কোম্পানির সদর দপ্তরের ভবনের সিসিটিভির ফুটেজে এক পুরুষ ও নারীকে রাইফেল হাতে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল। সবমিলিয়ে এই হামলায় তিনজন জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম পলিটিকো জানিয়েছে, এই কোম্পানিতে তুরস্কের পুরোনো এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এছাড়া সামরিক বিমানসহ নিজেদের তৈরি অন্যান্য আকাশযান বিক্রি করে থাকে তারা। যারমধ্যে রয়েছে একাধিক কাজের জন্য তৈরিকৃত মাল্টিরোল হেলিকপ্টার। এ বছর একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে কোম্পানিটি তাদের হেলিকপ্টার প্রদর্শন করেছিল।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, হামলাস্থল থেকে ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলি বের হচ্ছে এবং সেখানের একটি ভবন আগুনে পুড়ছিল। হামলাটি হয়েছে আঙ্কারা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের ছোট শহর কাহরামানকাজানে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, যেখানে হামলা হয়েছে সেখানে বিস্ফোরণের পাশাপাশি ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ফাইটার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, যে কোম্পানিটি হামলা হয়েছে এটি তুরস্কের সামরিক খাতে বড় অবদান রাখে।
বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইস্তাম্বুলে আকাশ ও প্রতিরক্ষা ইন্ডাস্ট্রিজের একটি মেলা চলছে। এমন সময়ে সেখানে হামলার ঘটনা ঘটল। এই মেলায় ইউক্রেনের এক উচ্চপদস্থ কূটনীতিক এসেছিলেন।
এদিকে তুরস্ক সামরিক খাতের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। তাদের বায়রাকতার ড্রোন বিশ্বব্যাপী বেশ সমাদৃত। তুরস্কের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে প্রতিরক্ষা খাত থেকে। ফলে প্রতিরক্ষা কোম্পানির ওপর হামলার বিষয়টি দেশটির জন্য বড় একটি ঘটনা।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান রাশিয়ার কাজান শহরে একটি ব্রিকস সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে উল্লেখ করেছেন।
হামলার কারণ ও হামলাকারীদের পরিচয় এখনও স্পষ্ট নয়। এখনও পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, এই ঘটনায় প্রসিকিউটররা তদন্ত শুরু করেছেন।
কিছু সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, এটি একটি আত্মঘাতী হামলা হতে পারে। ভবনের ভেতরে জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যদিও কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ভবনের ভেতরে থাকা কর্মচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা তাদের ভবন থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি।
তারা আরও বলেন, বিস্ফোরণগুলো বিভিন্ন বের হওয়ার পথে ঘটেছিল। ওই সময় কর্মচারীরা দিনের কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন।
টেলিভিশনগুলোতে একটি ক্ষতিগ্রস্ত গেট, পার্কিং লটে গুলি বিনিময়ের ফুটেজ এবং হামলাকারীদের হাতে অ্যাসল্ট রাইফেল ও ব্যাকপ্যাকসহ ভবনে প্রবেশের ছবি দেখিয়েছে। পরে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টার পৌঁছে যায়।
টিএইচইএসএএস তুরস্কের সবচেয়ে বড় বিমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে প্রশিক্ষণ বিমান, সামরিক ও বেসামরিক হেলিকপ্টার তৈরি করছে। দেশটির প্রথম নিজস্ব যুদ্ধবিমানের উন্নয়নে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনী ফাউন্ডেশন ও সরকারের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ হাজারের বেশি কর্মী রয়েছে।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, সামরিক জোটটি তুরস্কের পাশে থাকবে। তুরস্কে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।