ভারতে কুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে ৪০ জনের মৃত্যু

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■ 

ভারতে সনাতন ধর্মালম্বীর মহাজমায়েত কুম্ভমেলায় পদদলিত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। ঘটনার পর অন্তত ৪০টি মরদেহ স্থানীয় মোতিলাল নেহেরু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা অন্তত ৪০টি মরদহ মর্গে রেখেছি। আরও লাশ উদ্ধার হতে পারে।’

কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এর কারণ স্পষ্ট নয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টাকালে ভক্তরা একটি বহির্গমনস্থলে আবারও পদদলিত হয়ে পড়েন। এরপর তারা বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে পন্টুন সেতুর দিকে ফিরে এসে দেখেন যে কর্তৃপক্ষ এটি বন্ধ করে দিয়েছে।

ছয় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠেয় কুম্ভমেলার বিশেষ পবিত্র দিন ছিল বুধবার। স্রষ্টার সান্নিধ্য পেতে বিপুল সংখ্যক মানুষ ‘পবিত্র জলে স্নানের উদ্দেশ্যে’ একসঙ্গে নদীমুখো হলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনায় মা হারানো জগন্তি দেবি পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘একসঙ্গে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে পড়েছিলেন। এক পর্যায়ে সবাই ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন।’

ভিড় সামলাতে ঘটনাস্থলে রাখা ব্যারিকেড ডিঙানোর চেষ্টা করায় এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছে বলে ধারণা অনেকের।

বুধবার প্রায় ১০ কোটি ভক্তের উপস্থিতি হবে বলে ধারণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবহার করা হয়েছিল এআই মনিটরিং সিস্টেমও। এরপরও ভক্তের ধাক্কা সামলাতে পারেনি আয়োজক কমিটি।

এদিকে স্থানীয় এসআরএন হাসপাতাল জানাচ্ছে, কয়েকজন ভুক্তভোগী হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা হারানোর পর মৃত্যুমুখে পতিত হন। বেশ কয়েকজনের জটিল রোগ ছিল বলেও ধারণা তাদের।

এদিকে ভয়াবহ এ ঘটনা নিয়ে শ্বেতা ত্রিপাঠী নামের এক নারী রয়টার্সকে বলেছেন, “আমরা মানুষকে পড়ে যেতে দেখেছি। আমরা সামনে গিয়ে দেখি চারদিকে কাপড়, মানুষের দেহ, তাদের ব্যাগসহ অন্যান্য জিনিস পড়ে আছে। বিষয়টি এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো, আমি আর এটি নিতে না পেরে কান্না শুরু করি। সৌভাগ্যক্রমে আমার দলের কেউ আহত হননি। আমরা সবাই নিরাপদ আছি। কিন্তু আমি আর কখনো কুম্ভমেলায় আসব না।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই মেলায় আগত ভক্ত-জনতা গঙ্গাস্নানের উদ্দেশে নদীর তীরে ভিড় জমিয়েছিলেন। বুধবার সূর্য ওঠার আগেই স্নানের বাধ্যবাধকতা থাকায় ব্যাপক ভীড়ের সৃষ্টি হয়। তবে কী কারণে পদপৃষ্ঠের ঘটনা ঘটেছে তা জানা যায়নি।

কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একটি র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের (র‌্যাফ) একটি বিশেষ ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছে। তারা উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, এ ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সহস্রাব্দ প্রাচীন এই কুম্ভ মেলা গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর মোহনায় অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে পূণ্য লাভের আশায় হাজার হাজার মানুষ একসাথে স্নান করেন। হিন্দু ধর্মালম্বীরা  মনে করেন গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতীর পবিত্র জলে স্নান করে মানুষ পাপ থেকে মুক্ত হয়। তীর্থযাত্রীরা সূর্যোদয়ের আগে পবিত্র ঠান্ডা পানিতে স্নান শুরু করেন।

এর আগে, ১৯৫৪ সালে কুম্ভ মেলা চলাকালে পদপিষ্ট বা ডুবে চার শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৩ সালে কুম্ভ মেলায় ৩৬ জন পদপিষ্ট হয়ে মারা যান। 

প্রতি ১২ বছর পরপর পর কুম্ভমেলা হয়ে থাকে। আর ১৪৪ বছর অন্তর হয় মহাকুম্ভ মেলা। ধারণা করা হয়, এটি প্রায় ৮০০ বছরের পুরোনো একটি ঐতিহ্য। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *