■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই-আগস্টে সহিংসতায় ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
গণঅভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে এই তালিকা প্রকাশ করেছে পুলিশ সদরদপ্তর। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই-আগস্ট মাসে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় নিহত পুলিশ সদস্যদের এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় ৪৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের ১৪ জন, সিরাজগঞ্জে ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এর বাইরে খুলনা, ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চাঁদপুর, গাজীপুরসহ কয়েকটি জেলায় বাকি ১৬ জন নিহত হয়েছেন।
তালিকায় নিহতদের নাম, পদের নাম, মৃত্যুর তারিখ, সংযুক্ত ইউনিটের নাম এবং ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকা প্রকাশ করে সদরদপ্তর থেকে বলা হয়, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে কিছু নিউজ আউটলেট এবং কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া গণ-অভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা সম্পর্কে মিথ্যা এবং ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন। তাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করা হলো।’
পুলিশ সদরদপ্তর আরও জানায়, পুলিশ বিভাগ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যেসব অফিসার বা কনস্টেবল প্রতিবাদ বা সহিংসতার ঘটনায় আহত বা নিহত হয় তাদের তালিকা রক্ষণাবেক্ষণ করে। যদি কেউ দাবি করেন, গণঅভ্যুত্থানে এই তালিকার বাইরেও পুলিশ নিহতের ঘটনা ঘটেছে সে ক্ষেত্রে প্রমাণ সরবরাহের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এর আগেও পুলিশ সদর দপ্তরের এক বার্তায় ৪৪ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার তথ্য জানানো হয়েছিল। তখন নিহত পুলিশের নামসহ বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি। আজ প্রকাশিত তালিকায় নিহত পুলিশ সদস্যের নাম, পদের নাম, মৃত্যুর তারিখ, কোন ইউনিটে কর্মরত ছিলেন ও ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিনজন পুলিশ পরিদর্শক, ১১ জন উপপরিদর্শক (এসআই), ৭ জন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই), ১ জন এটিএসআই, ১ জন নায়েক ও ২১ জন কনস্টেবল রয়েছেন।
নিহত তিন পুলিশ পরিদর্শক হলেন- মো. আবদুর রাজ্জাক, রাশেদুল ইসলাম ও মো. মাসুদ পারভেজ ভূইয়া। নিহত ১১ জন এসআই হলেন সুজন চন্দ্র দে, খগেন্দ্র চন্দ্র সরকার, রেজাউল করিম, মো. মামুনুর রশিদ সরকার, বাছির উদ্দিন, রইস উদ্দিন খান, তহছেনুজ্জামান, প্রণবেশ কুমার বিশ্বাস, মো. নাজমুল হোসাইন, আনিসুর রহমান মোল্লা ও সন্তোষ চৌধুরী। নিহত সাতজন এএসআই হলেন সঞ্জয় কুমার দাস, ফিরোজ হোসেন, সোহেল রানা, রাজু আহমেদ, ওবায়দুর রহমান, রফিকুল ইসলাম ও মো. মোক্তাদির।
নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্য একজন টিএসআই রয়েছেন। তাঁর নাম আলী হোসেন চৌধুরী। আরেকজন নায়েক মো. গিয়াস উদ্দিন। নিহত ২১ পুলিশ কনস্টেবল হলেন- মো. আবদুল মজিদ, রেজাউল করিম, মাহফুজুর রহমান, শাহিদুল আলম, মো. আবু হাসনাত রনি, মীর মোনতাজ আলী, সুমন কুমার ঘরামী, মোহাম্মদ আবদুল মালেক, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মো. আবদুস সালেক, মো. হাফিজুল ইসলাম, মো. রবিউল আলীম শাহ, মো. হুমায়ুন কবীর, মো. আরিফুল আযম, মো. রিয়াজুল ইসলাম, মো. শাহিন উদ্দিন, মো. এরশাদ আলী, মাইনুদ্দিন লিটন, মো. সুজন মিয়া, মো. খলিলুর রহমান ও মো. হানিফ আলী।
তালিকার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত ছিলেন ১৪ জন, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ১৫ জন, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার ২ জন, কুমিল্লার তিতাস থানার ২ জন, চাঁদপুরের কচুয়া থানার ১ জন, হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানার ১ জন, ঢাকার এসবির ১ জন, নারায়ণগঞ্জ পিবিআইয়ের ১ জন, ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের ১ জন, কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের ১ জন, কসবা থানার ১ জন, খুলনা মহানগর পুলিশের ১ জন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের ১ জন এবং ঢাকা জেলার ২ জন। নিহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ২৫ জন থানার ভেতর ও সামনে থাকা অবস্থায় মারা গেছেন।
সবচেয়ে বেশি ২৪ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাবার দিন। ৪ আগস্ট মারা গেছেন ১৪ জন।