■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৪৮২ জন শিশু নিহত হয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম দশ মাসে যা ছিল ৪২১ জন। এছাড়া একই সময়ে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫৮০ শিশু, গত বছর ছিল ৯২০ জন।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত একটি সংলাপে এ তথ্য জানানো হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ (সিআরএসি,বি) যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। সিআরএসি,বি দেশের প্রথম সারির ১৪টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, শিশু অধিকার প্লাটফর্ম, সংগঠন এবং ফোরামের সমন্বয়ে গঠিত।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টেরি ডেস হোমসের কান্ট্রি ডিরেক্টর এম কবিরের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আসকের প্রজেক্ট অফিসার শান্তা ইসলাম।
তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোর মতো ২০২৪ জুড়ে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, বলাৎকার, অনলাইনে যৌন হয়রানিসহ শিশুর প্রতি নানা সহিংস ঘটনা অব্যাহত থেকেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আসক’র হিসাবমতে, এ সময়কালে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, সহিংসতার কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পরে হত্যা, ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয় মোট ৪৮২ শিশু।
২০২৪ সালের প্রথম দশ মাসে শিক্ষকের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৯ শিশু, ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২১৭ শিশু, ১৫ শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়, ধর্ষণ চেষ্টার শিকার ৬১ ও যৌন হয়রানির শিকার হয় ৩৪ শিশু। যার মধ্যে শিক্ষকের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৮৫ জন এবং বলাৎকারের শিকার হয়েছে ৩২ ছেলে শিশু।
শান্তা ইসলাম বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১২১ জন শিশু মারা যায়। বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নানামুখী সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কোয়ালিশন মনে করে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে হলে শিশুদের জন্যও একটি সহিংস, নিপীড়ন ও বৈষম্যহীন সমাজ নিশ্চিত করার উদ্যোগ জোরদার করতে হবে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টেরি ডেস হোমসের কান্ট্রি ডিরেক্টর এম কবির বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য এখন পর্যন্ত আমরা শিশুদের নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব বেশি পরিকল্পনা কিংবা পদক্ষেপ লক্ষ্য করছি না। কোয়ালিশন মনে করে, জরুরি ভিত্তিতে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে শিশুদের অধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলো আরও কার্যকর করা, জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং আরও নতুন নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয়।’
এছাড়া, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় আহত ও নিহত শিশুদের পূর্ণাঙ্গ ও গ্রহণযোগ্য তালিকা প্রকাশ করা, নিহতের পরিবারের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও আহত শিশুদের জন্য সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা করা।
তারা অনলাইনে শিশু যৌন শোষণ রোধ করতে বিদ্যমান আইনগুলোতে; যেমন—পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২, শিশু আইন ২০১৩ এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এ; সাইবার অপরাধের নতুন রূপগুলোকে সংজ্ঞায়িত এবং অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে বাল্যবিয়েকে শুরুতেই বাতিল ঘোষণা করে একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করা, বাল্যবিয়ে নিরোধে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটিগুলোর কার্যক্রম জোরদার করা এবং বাল্যবিয়ে নিরোধে রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিকে ডিজিটালাইজড করার সুপারিশ প্রস্তাব করেন।