:: সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি ::
জনতা ব্যাংকের সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই শাখার ভল্ট থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খোয়া গেছে।
এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রোববার (২৪ মার্চ) রাতে ব্যাংকের তামাই শাখার ব্যবস্থাপকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন- জনতা ব্যাংক তামাই শাখার ব্যবস্থাপক আল আমিন (৪২), সহকারী ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম (৩৪) এবং ব্যাংক অফিসার রাশেদুল ইসলাম (৩১)।
এর আগে ব্যাংকটির সিরাজগঞ্জের এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নজরুল ইসলাম তামাই শাখার ম্যানেজারসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ থেকে জানা যায়, তামাই শাখায় লেনদেন নিয়ে সন্দেহ হলে রবিবার সেখানে যান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা। অডিটে তারা ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার গরমিল পান। এ সময় শাখার ব্যবস্থাপক, সহকারী ব্যবস্থাপক ও অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাদের বিরুদ্ধে বেলকুচি থানায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রাতে পুলিশ তাদের আটক করে জেলহাজতে পাঠায়। যেহেতু বিষয়টি টাকা লেনদেন সংক্রান্ত সে কারণে অভিযোগটি দুদকে পাঠানো হয়েছে।
বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান নাগরিক নিউজকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগসহ তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে আমাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। যেহেতু এটি ব্যাংকিং অর্থনৈতিক হিসাব তাই বিষয়টি দুদকে পাঠানো হয়েছে। পরে আদালতের মাধ্যমে অভিযুক্তদের জেলে পাঠানো হয়।’
সোমবার (২৫ মার্চ) সকালে তামাই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন দায়িত্বে এসেছেন কামরুল হাসান। এ সময় দেখা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের একটি তদন্ত টিম কাজ করছে। অফিসে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ক্যামেরাগুলো নতুন না সংস্কার করা হচ্ছে সে বিষয়ে ব্যাংকের কেউ মুখ খোলেননি।
এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে বেলকুচি থানায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে রাতে পুলিশ তাদের আটক করে আদালতে পাঠায়। যেহেতু বিষয়টি টাকা লেনদেন সংক্রান্ত তাই সাধারণ ডায়েরির কপি দুদকে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আনিসুর রহমান আরও বলেন, আমরা জনতা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জিডির প্রেক্ষিতে জনতা ব্যাংকের তিন কর্মকর্তাকে আটক করি। ঘটনাটি অর্থ আত্মসাৎ সম্পর্কিত হওয়ায় এটা দুদক দেখবেন। এরপরও তারা যেহেতু অপরাধ করেছেন তাই তাদেরকে সকালে (৫৪ ধারায়) আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান নাগরিক নিউজকে বলেন, বিষয়টি দুদক দেখবে কিন্তু ধর্তব্য অপরাধ হওয়ায় থানা পুলিশ তাদেরকে ৫৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করেন। আদালত তাদেরকে জেলা হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) মো. খায়রুল হক নাগরিক নিউজকে বলেন, তাদের জিডির কপিটি হাতে এসেছে। এখন পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতির জন্য কমিশনে আবেদন পাঠানো হবে। অনুমতি আসার পরে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য জনতা ব্যাংকের সিরাজগঞ্জ এরিয়া অফিসের উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) নজরুল ইসলামের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পাঠানো দুই তদন্ত কর্মকর্তারা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া অফিসের যুগ্ম পরিচালক এসএম সাজ্জাদ হোসেন ও সহকারী পরিচালক ওমর ফারুক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, হিসাব অনুসারে তামাই শাখার ভল্টে মোট ৭ কোটি ১১ হাজার ২৪০ টাকা থাকার কথা থাকলেও সেখানে বর্তমানে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা রয়েছে।
তামাই জনতা ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই বিষয়টি নিয়ে সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা কাজ করছেন। তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেবেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান এসএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। টাকা সরানো হয়েছে কি না বা হিসাবের কোথাও ভুল হয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি ঠিক কত দিন ধরে হয়ে আসছে তা-ও এখন দেখার বিষয়।’
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই ব্যাংকে ভিড় করতে দেখা গেছে গ্রাহকদের। তাদের একজন রাজু মিয়া। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের টাকা চুরি হওয়ার খবর শুনে এসেছি। তিন ব্যাংক কর্মকর্তাকে পুলিশ আটক করেছে।’
আরেক গ্রাহক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক হলো টাকা রাখার নিরাপদ স্থান। অথচ এখান থেকেই টাকা লোপাট হচ্ছে! আমরা কাকে বিশ্বাস করি?’