■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
রাজধানীর গুলশানে সমন্বয়ক পরিচয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সাবেক এমপির শাম্মী আহম্মেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় তাদের আটক করে গুলশান থানায় নেওয়া হয়।
আটকরা হলেন—ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, মো. সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, জানে আলম অপু ও আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটকদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য। এছাড়া অন্যরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
আটক পাঁচজনের নাম ও পরিচয় :
নাম: আব্দুর রাজ্জাক সোলাইমান রিয়াদ
যুগ্ম আহ্বায়ক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় কার্যনিবার্হী সদস্য, বাগছাস
প্রতিষ্ঠান : প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি
নাম: ইব্রাহিম হোসেন মুন্না
আহ্বায়ক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ঢাকা মহানগর
প্রতিষ্ঠান : অতীশ দীপংকর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
নাম: এসডি সিয়াম
সংগঠক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠান : প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি
নাম: সাদমান সাদাব
সদস্য , বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ঢাকা মহানগর
প্রতিষ্ঠান : প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি
জানে আলম অপু
যুগ্ম আহ্বায়ক বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যুগ্ন আহব্বায়ক, বাগছাস
প্রতিষ্ঠান : গ্রীন ইউনিভার্সিটি
গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আহম্মেদ এর কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। ১০ লাখ টাকা আগে নিয়েছিলেন। শনিবার বাকি টাকা নিতে শাম্মি আহম্মেদ এর বাসায় গেলে পুলিশকে খবর দেয়। আমরা ওই বাসা থেকে পাঁচজনকে আটক করি। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
ডিএমপির গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার ওসি আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, আটকদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছে—‘চার থেকে পাঁচদিন আগে আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবেক এমপি শাম্মী আহম্মেদকে ধরতে গুলশানের বাসায় যায় তারা। তখন শাম্মীর স্বামী তাদের অফার করে বলে তোমরা আমার ছেলের মত। আমি তোমাদের কিছু এন্টারটেইনমেন্ট করি, আমার বউকে নিয়ে যেও না। ওই সময় রিয়াদকে পাঁচ লাখ টাকা দেয় শাম্মীর স্বামী।’
ওসি বলেন, রিয়াদের বক্তব্য অনুযায়ী ওই পাঁচ লাখ টাকা নেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু। এ টাকা দিয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ মেটায় এবং একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করে। বাকি টাকা নিতে শনিবার ওই বাসায় যায় তারা।
সূত্র বলছে, গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সংরক্ষিত মহিলা- আসনের সাবেক এক এমপি শাম্মির বাসা। এর আগে ১৭ জুলাই সকালে সমন্বয়ক পরিচয়ে ওই বাসয় গিয়ে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে রিয়াদ। টাকা না দিলে ফ্যাসিস্টের দোসর বলে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখায়। তখন তারা ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে আসে। পরে ফের শনিবার চাঁদার জন্য গেলে পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
এদিকে চাঁদার টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, ১৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে একটি বাসার গেস্ট রুম থেকে টাকা বুঝে নিচ্ছে দুই যুবক। গুলশান থানা পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ভিডিওটি গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডের শাম্মির বাসার।
দুই নেতাকে নিজ নিজ সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার
চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) দুই নেতাকে নিজ নিজ সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দুই সংগঠন পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
শনিবার (২৬ জুলাই) দিবাগত রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাবকে সংগঠনের সব ধরনের সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, সংগঠনের সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন। সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃতদের সঙ্গে কোনো প্রকার সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো।
অন্যদিকে, বাগছাস দপ্তর সম্পাদক মাহফুজুর রহমান প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজির ঘটনায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু ও আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ সরাসরি সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। গঠনতন্ত্রের ধারা ৩.১ অনুযায়ী সংগঠনের ভাবমূর্তি ও শৃঙ্খলার পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে কেন্দ্রীয় সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার ও সদস্য সচিব জাহিদ আহসানের নির্দেশনায় তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।