কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে যুবলীগের হামলা

:: কুমিল্লা প্রতিনিধি ::

কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলায় ২৭ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতদের মধ্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সোহান ও কুমিল্লা সরকারি কলেজের  স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

শনিবার (৩ আগষ্ট) বেলা সোয়া একটার দিকে কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ৯ দফা দাবিতে কুমিল্লা জিলা স্কুলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ফৌজদারি হয়ে পুলিশ লাইনসের দিকে যাচ্ছিলেন। মিছিলটি রেসকোর্স এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা ধাওয়া দেন। এ সময় অন্তত ৩০টি গুলি করা হয়।

এর আগে শনিবার সকাল ১০ টায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী কুমিল্লা জিলা স্কুলের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ ও গণমিছিল শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলে কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা পূবালী চত্বরে এসে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা স্টেডিয়ামের সামনে অবস্থান নেয়ায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাগিচাগাঁও ও পুলিশলাইন্স এলাকায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করতে দেখা যায়। এছাড়া এসময় হকিস্টিক, লাঠি ও স্টাম্প দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাও করেন তারা।

শনিবার সকাল ১০টার দিকে কুমিল্লা জিলা স্কুল এলাকায় গণমিছিলের উদ্দেশ্যে অবস্থান নেন দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। এসময় তারা বিভিন্ন ধরনের গান, কবিতা আবৃত্তি ও স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের বাধা দিতে দুই পাশে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। তাদের উদ্ধার করতে আসে ছাত্রদের আরেকটি মিছিল। সেটি সার্কিট হাউস মোড়ে এসে অবস্থান নেয়। প্রশাসন ও পুলিশের আশ্বাসে তারা একত্রিত হয়ে মিছিল শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সামনে যান।

ডিসি অফিস, কুমিল্লা কারাগার, সিটি করপোরেশন ভবনের সামনে দিয়ে তারা পুলিশলাইন্সে আসে। এসময় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর মিছিলের পাশে ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান দেখে শিক্ষার্থীরা চলে যান। মিছিল শেষ হতেই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি শুরু করেন ছাত্রলীগ যুবলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। কয়েকজন শিক্ষার্থী রাস্তায় পড়ে গেলে তাদের বেদম পিটুনি দিতে দেখা যায়। এছাড়া আন্দোলনকারী নারী শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়।

এরপর টাউনহল মোড় থেকে টমসম ব্রিজ রোডের সিএনজি স্টেশন, ভিক্টোরিয়া কলেজ গেইট, রাজগঞ্জ মোড়, জিলা স্কুল গেইটসহ বিভিন্ন গলিতে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে শর্টগান, রামদা, লাঠি নিয়ে মহড়া দেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক দেখলেই মারধর ও হুমকি দিতে থাকেন।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া শিক্ষার্থী জোবায়দা ইয়াসমিন মুমু বলেন, সারা দেশের সাথে সমন্বয় করে আজকে আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। এখানে আমাদের একটাই দাবি সরকারের পদত্যাগ। সরকারের পদত্যাগ ছাড়া শিক্ষার্থী সমাজ আর ঘরে ফিরবে না। কুমিল্লার সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন পয়েন্ট পয়েন্টে অবস্থান করে আমাদের বাধা দিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আহত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার সামনে আমার এক ভাইকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। আরেকজনের হাতে গুলি লেগেছে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের (কুমেক) পরিচালক শেখ ফজলের রাব্বি বলেন, ‘এ পর্যন্ত কুমেক হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ছয় শিক্ষার্থী এসেছে। তবে তাদের অবস্থা শংকামুক্ত।’

চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সনজুর মোর্শেদ মহাসড়কে এসিল্যান্ডের গাড়িতে আগুন দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উপজেলা সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) সৌম্য সরকার বলেন, ‘আমরা গাড়িতে করে চলে যাচ্ছিলাম। এসময় পেছন থেকে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। তখন আমরা তারাহুড়া করে গাড়ি থেকে নেমে রক্ষা পাই। এসময় গাড়িতে তিন কর্মচারী ছিল। অন্য একটি গাড়িতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন, তিনিও গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে নিরাপদে আশ্রয়ে যান।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *