■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণার তারিখ আগামী ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করেছেন আদালত।
রায়ের দিন সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এমন প্রস্তুতি প্রতিহত ও মোকাবিলার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ।
যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সদর দপ্তর থেকে।
শনিবার (৮ নভেম্বর) ডিএমপি সদর দপ্তরে এক বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপরই ডিএমপির সব থানা-পুলিশসহ সাত হাজার পুলিশ সদস্য সড়কে মহড়া দিয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে।
ডিএমপির তিনটি থানার ওসি, দুই বিভাগের উপকমিশনারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তারা বলছেন, ‘১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। সেই খবর আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। সেগুলো প্রতিহত করতে সদর দপ্তরের কড়া নির্দেশনা আছে। সকালে সদর দপ্তরে একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে শংকর সাত মসজিদ সড়কে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে কয়েকশ পুলিশ সদস্যকে টহল ও অবস্থান দিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ধানমন্ডি পনের নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়ও কয়েকটি পুলিশ ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। একই সঙ্গে গেন্ডারিয়া, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে।
ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘১৩ নভেম্বর আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। মোবিলাইজেশন কন্টিনজেন্ট আমাদের থানাগুলোর নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। ১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীরা সরকারকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে।’
এক ভিডিও বার্তায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আগামী ১৩ নভেম্বর পুরো ঢাকা শহরে লকডাউন কর্মসূচির ঘোষণা করা হচ্ছে। কথিত লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণার আগে এবং পরে সতর্ক হন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
সম্প্রতি এক বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, অপকর্মে যুক্ত থাকা আওয়ামী দোসররা দেশে যে কোনো সময় নৈরাজ্যের চেষ্টা করতে পারে। নৈরাজ্য মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগাম বার্তা দেওয়া হয়েছে সেই প্রতিবেদনে। সেই সঙ্গে বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সূত্র মতে, শোডাউনের নামে নৈরাজ্যের পরিকল্পনা করছে ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়া আওয়ামী লীগ। তাদের টার্গেট শেখ হাসিনার রায়ের দিন-তারিখ ঘোষণা প্রতিরোধ ও নির্বাচন বানচাল করা। অবশ্য এসব মোকাবিলায় প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ১০ নভেম্বর থেকেই ঢাকার প্রবেশপথ, আবাসিক হোটেল, মেস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলে তল্লাশি ও বিভিন্ন ধরনের অভিযান শুরু হবে।
রাজধানীর ১৪২টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে একযোগে ‘বড় মহড়া’ দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সাত হাজার পুলিশ সদস্য এ মহড়াতে অংশ নেন। শনিবার বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলে এই মহড়া। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সামনের স্পটও মহড়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরমধ্যে অন্যতম প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা, বাংলাদেশ সচিবালয়, হাইকোর্ট, বঙ্গভবন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ৫ আগস্টের আগে সীমিত আকাড়ে মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পুলিশের এমন মহড়া অনুষ্ঠিত হলো।
ডিএমপির অফিসারসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার সাত হাজার পুলিশ সদস্য মহড়ায় অংশগ্রহণ করেন।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে রাজধানীর কাকরাইল গির্জায় ককটেল নিক্ষেপ, ধানমন্ডি শংকর এলাকায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের মশাল মিছিল ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডিএমপির আটটি বিভাগের মধ্যে তেজগাঁও ১৬টি, রমনায় ৩৪টি স্পটে, মিরপুরে ১৪টি, মতিঝিলে ১৭টি, ওয়ারিতে ১৬টি, লালবাগে ১৫টি, গুলশানে ১৪টি, উত্তরায় ১৬টি স্পটে অর্থাৎ মোট ১৪২টি স্পটে পুলিশ মহড়া দিয়েছে।
ডিএমপির এক উপকমিশনার (ডিসি) জানান, পুলিশের মহড়াটি মূলত ফোর্স ও অফিসারদের এক্সিভিশন (প্রদর্শনী) টাইপের। যেমন- রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা। যারা অপরাধ করতে চায়, অরাজকতা করতে চায়- তাদের বিরুদ্ধে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
