ঈশ্বরদীতে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৫০

■ পাবনা প্রতিনিধি ■ 

পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাবনা-৪ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডলসহ উভয় দলের প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের জগির মোড় ও চর আলহাজ্ব মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুদিন আগে দলীয় বিষয় নিয়ে সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মক্কেল মৃধার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় স্থানীয় জামায়াত নেতা ইকবাল হোসেনের। ওই ঘটনার সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার বিকালে পাবনা জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মণ্ডলের নেতৃত্বে দলটির শতাধিক নেতাকর্মী সাহাপুর ইউনিয়নের আলহাজ্ব মোড় এলাকায় যান।

এ সময় জগির মোড় নামক স্থানে সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মক্কেল মৃধা ও তার ছেলে মনিরুল ইসলামকে দেখে অতর্কিত হামলা করে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরাও পাল্টা হামলা চালায়।

এর কিছুক্ষণ পর পার্শ্ববর্তী চর আলহাজ্ব মোড় নামক স্থানে আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুই দলের সমর্থকরা। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবর্ষণ, আবু তালেব মণ্ডলের গাড়ি ভাঙচুরসহ প্রায় ১০টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় পাবনা জেলা জামায়াতের আমির ও পাবনা-৪ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডল, ঈশ্বরদী উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম, সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মক্কেল মৃধা, সাহাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আব্দুল আলিম বাঁধন, যুবদল নেতা মিলন, রকিবুলসহ দুই দলের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। আহতরা পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সাহাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদুর রহমান হামদু মেম্বার জানান, আজকে জামায়াতের পূর্ব নির্ধারিত কোনো গণসংযোগ ছিল না। গণসংযোগে কেউ কখনো গাড়িভর্তি করে অস্ত্র নিয়ে আসে না। মূলত গত দুদিন আগের ঘটনার সূত্র ধরেই আজকে মক্কেল মৃধা ও তার ছেলের ওপর হামলা করে তালেব মণ্ডল ও তার সমর্থকরা। তালেব মণ্ডল নিজে গাড়ি থেকে অস্ত্র বের করে তার কর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছেন।

ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার জানান,  বিএনপি ও জামায়াতের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে কাজ করছে। এ মুহূর্তে আর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।

দুই দলের নেতাকর্মীরা জানান, বুধবার জামায়াতের ওয়ার্ড সভাপতি হাফেজ ইকবাল হোসেনসহ দুইজনকে মারধর করে সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের আহবায়ক মক্কেল মৃধার লোকজন। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল চরগড়গড়ি আলহাজ্ব মোড়ে পাবনা-৪ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডলের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি দলের নির্বাচনী প্রচার চালানো হয়। সেখানে বিএনপির প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। আবু তালেবের গাড়িসহ তারা ২০-২৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। 

এ সময় দুপক্ষের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুরো এলাকায় দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে গুলিবর্ষণ করা হয়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নেভায়। এতে দুপক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। 

পাবনা-৪ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল বলেন, আমরা চরগড়গড়ির আলহাজ্ব মোড়ে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করছিলাম। এ সময় বিএনপির প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের অনুসারী মক্কেল মৃধার নেতৃত্বে আমাদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা ও গুলিবর্ষণ করা হয়। তিনি দাবি করেন, ‘আমার গাড়িসহ আমাদের শতাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তারা। এতে ৬০-৭০ জন আহত হয়েছেন।’ 

অভিযোগ অস্বীকার করে পাবনা-৪ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, জামায়াতের লোকজন পরিকল্পিতভাবে আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাহাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদুর রহমান হামদু মেম্বার বলেন, জামায়াতের লোকজনই আমাদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছে। তাদের হামলায় সাহাপুর ইউনিয়ন কৃষকদলের আহবায়ক মক্কেল মৃধা, তার ছেলে মনিরুল ইসলাম, যুবদলের সদস্য লালন মৃধা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য আলীম হোসেন বাঁধনসহ ১৫ থেকে ২০ জন আহত হয়েছেন।  জামায়াতের নারী কর্মীরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটের বিনিময়ে ‘বেহেশতর টিকিট’ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন। স্থানীয় বিএনপি নেতারা এর প্রতিবাদ জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের আমির আবু তালেব মন্ডল অস্ত্রবোঝাই গাড়ি ও লোকবল নিয়ে গ্রামটিতে হানা দেয়। তাঁরা বিএনপির দুজন কর্মীকে মারপিট করে। তখন গ্রামের লোকজন একত্রিত হয়ে তাঁদের ধাওয়া দেয়। এ সময় জামায়াতের লোকজন গুলি ছোড়েন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের মারপিট করেন। এতে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের একজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্যদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ওসি আ স ম আব্দুন নূর বলেন, রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় অভিযোগ বা মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *