রাকসু নির্বাচনে ৫১ বছর বয়সী প্রার্থী শাহরিয়ার মোর্শেদ খান

■ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ■

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) নির্বাচনে ৫১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মোর্শেদ খান ‘মিডিয়া ও প্রকাশনা’ পদে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী জীবনের সংগ্রামী অভিজ্ঞতা নিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চান। তার এই পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শাহরিয়ারের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার রাজাপুর গ্রামে। ১৯৯৯-২০০০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময় পারিবারিক সমস্যায় লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়।

শাহরিয়ারের পরিবারে স্ত্রী এবং চার মেয়ে আছেন। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন গত মাসে। মেয়ের স্বামী তারই শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়েন। শাহরিয়ার থাকেন হবিবুর রহমান হলে। আর মেয়ের জামাই থাকেন পাশের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে। 

পরিবার চালানোর পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া শাহরিয়ারের জন্য চ্যালেঞ্জিং। বিভাগ থেকে কিছু বৃত্তির টাকা পান। রাজশাহীতে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করা কঠিন হলেও তিনি রাজশাহী টেক্সটাইল কারখানায় আবেদন করেছেন। 

শাহরিয়ার মোর্শেদ খান বলেন, আমার জীবনটা সংগ্রামের। পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও শেষ করতে পারিনি। অনেক বছর পর আবার পড়াশোনা শুরু করি। আমার এখন বয়স চলে ৫১ বছর। এখন আমি পড়াশোনা করছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে ৫ বছর পড়েছি। দেখেছি, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের আশা-প্রত্যাশা হরণ করেন। মুখে বলেন এক, কাজে অন্য। এই দিকটা ভেবেই রাকসু নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ৫১ বছর বয়সী কাউকে যদি শিক্ষার্থীরা ভোট দেন, আমি তাদের জন্য চেষ্টা করব। তিনি জয়ী হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়ে কাজ করবেন বলে জানান।‌

রাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. সেতাউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী হয়ে থাকলে যে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। শাহরিয়ারের বয়স বেশি হলেও সমস্যা নেই।

শাহরিয়ার মোর্শেদ জানান, তিনি অন্য সাধারণ ছাত্রদের মতো প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৯৯-২০০০ সালে। সেখানে চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময় পারিবারিক সমস্যায় লেখাপড়া ছেড়ে দেন। এরপর চট্টগ্রামে কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানিতে ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত চাকরি করেছেন। ২০১৪ সালে আবার লেখাপড়া শুরু করার মনস্থির করেন। সেই সময়ে তিনি ভোকেশনাল কারিগরির নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এরপর সেখান থেকে এসএসসি ও পরে একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে।

শাহরিয়ার বলেন, ‘আমার জীবনটা সংগ্রামের। পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও শেষ করতে পারিনি। অনেক বছর পর আবার পড়াশোনা শুরু করি। আমার এখন বয়স চলে ৫১ বছর। আমার দুই ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। আমার চার মেয়ে আছে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বড় মেয়ের স্বামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। আমার তিন মেয়েও পড়াশোনা করছেন।’ তিনি বলেন, ৫১ বছর বয়সে পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁকে পরিবারেরও হাল ধরতে হয়। পরিবার ও লেখাপাড়া চালাতে হিমশিম খেতে হয়। বিভাগ ও সংস্থা থেকে কিছু বৃত্তির টাকা পান। বিভাগের শিক্ষকেরা খুব উৎসাহ দেন। রাজশাহীতে পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করা যায় না। তবু রাজশাহী টেক্সটাইল কারখানায় চাকরির একটি আবেদন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি নিয়ে শাহরিয়ার বলেন, তাঁর দুই ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ায় তিনি সেখানে দীর্ঘদিন ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে ৫ বছর পড়েছেন। সেখানেও দেখেছেন, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের আশা-প্রত্যাশা-স্বপ্ন হরণ করেন। তাঁরা মুখে বলেন এক, কিন্তু কাজে অন্য। এই দিকটা ভেবেই তিনি রাকসু নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৫১ বছর বয়সী কাউকে যদি শিক্ষার্থীরা ভোট দেন, তিনি তাঁদের জন্য চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, ‘সংগ্রামী মানুষ হিসেবে আমি মনে করি, বয়স কারও কাছে বাধা থাকে না। যেমন আমার শিক্ষায় কোনো বাধা আসেনি। তেমনই রাকসু নির্বাচনেও আমার কোনো বাধা আসবে না বলে মনে করি।’

দুপুরে রাকসু কার্যালয়ে গেলে সংবাদকর্মীরা তাঁকে ঘিরে ধরেন। তখন সেখানে থাকা কিছু শিক্ষার্থী জানতে চান, তিনি প্রার্থী কি না? জবাবে বলতে থাকেন, তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর বয়স ৫১। এ সময় রাকসুর প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মো. সেতাউর রহমান উপস্থিত হন। তিনিও অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কি প্রার্থী?’ উত্তরে শাহরিয়ার জানান, তিনি প্রার্থী হয়েছেন। এ ব্যাপারে সেতাউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী হয়ে থাকলে যে কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। শাহরিয়ারের বয়স বেশি হলেও সমস্যা নেই।

(বুধবার) ছিল রাকসু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার শেষ দিন। একই সঙ্গে শেষ হয়েছে ডোপ টেস্ট জমা দেওয়ার সময়সীমাও। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সিনেট সদস্য পদে ২ জন এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ১১টি পদের জন্য ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *