■ আশুলিয়া প্রতিনিধি ■
আশুলিয়ায় বকেয়া বেতনের দাবিতে আবদুল্লাহপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ ছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের জেরে অন্তত ৫২টি পোশাক কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে একটি খাদ্য উৎপাদন কারখানার শ্রমিকরা সোমবার সকালে বিক্ষোভ শুরু করেছে। তারা প্রায় আধা ঘণ্টা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পুলিশ ও সেনা সদস্যরা গিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছয়জনকে আটক করে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিনটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
আটকরা হলেন খোকন মিয়া, সোহাগ মিয়া, নাজমুল মিয়া, উজ্জল হোসেন, শাকিল আহাম্মেদ ও মোবারক হোসেন। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। বন্ধ করে দেওয়া কারখানাগুলো হলো উপজেলার সফিপুর বাজার এলাকার মাহমুদ ডেনিম, বক্তারপুরের ইকু নিট (সামহার) ও কোকোলা ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড।
এ ছাড়া সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে দুটি কারখানার শ্রমিকরা।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সড়ক অবরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের নরসিংহপুরে জেনারেশন নেক্সট পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন করে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় প্রায় ৫২টি কারখানার উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে অনেকেই শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩(১) ধারা মোতাবেক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন। বেশ কিছু কারখানার গেটে এমন নোটিস দেখা গেছে। এ ছাড়া জেনারেশন নেক্সট নামে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
হা-মীম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের গেটে দেওয়া নোটিসে দেখা যায়, দ্যাটস ইট স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড, অ্যাপারেল গ্যালারি লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড, আর্টিস্টিক ডিজাইন লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেডের সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের জানানো যাচ্ছে যে, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বর্তমান সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ১৩ (১) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে উল্লিখিত কারখানাসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করল।
পরবর্তীতে আঞ্চলিক পরিবেশ নিরাপদ হলে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ ও নিরপত্তা নিশ্চিত করে নোটিসের মাধ্যমে কারখানা খোলার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। কারখানায় নিরাপত্তা বিভাগ অত্র নোটিসের আওতামুক্ত থাকবে। অনন্ত গ্রুপের একটি কারখানার গেটেও একই নোটিস দেখতে পাওয়া যায়।
সড়ক অবরোধ করা শ্রমিকরা জানায়, অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি করলেও তারা উৎপাদন চালু রেখেছে। অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা কারখানায় এসে ঝামেলা করলেও সব শ্রমিক কাজ করেছে। তার পরও কারখানা বন্ধ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। গত মাসসহ চলতি মাসের বেতন পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা বাসা ভাড়া ও দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারছে না। সারা মাস কাজ করে বাড়িওয়ালা ও দোকান মালিকের লাঞ্ছনা সহ্য করতে হচ্ছে। এর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও বেতন পরিশোধ করনি মালিকপক্ষ। তাই আজ বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘সকালে নরসিংহপুরে একটি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন।’
আশুলিয়া শিল্পপুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার বলেন, ‘আমরা শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি। আজও কিছু কারখানা বন্ধ রয়েছে।’
শিল্পপুলিশ ও কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মৌচাকের কোকোলা ফুড প্রডাক্ট লিমিটেডের শ্রমিকরা রবিবার সকালে কাজে যোগদান করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা হঠাৎ মজুরি ন্যূনতম সাড়ে ১২ হাজার টাকা, হাজিরা বোনাস ৮০০ টাকা, সাধারণ ও বার্ষিক ছুটিসহ ১২ দফা দাবিতে কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানার পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধে করে বিক্ষোভ দেখায়। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে।
এদিকে তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর এরশাদনগরে বিক্ষোভ করছে সিজন্স ড্রেসেস লিমিটেড নামে একটি কারখানার শ্রমিকরা। পাশাপাশি বাঘের বাজার গোল্ডেন রিপিট গার্মেন্টসের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করছে। তবে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছেন।
গাজীপুর শিল্পপুলিশের (জোন-২) পরিদর্শক নিতাইচন্দ্র সরকার জানান, কারখানা বন্ধ ঘোষণার পরও কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে জোরপূর্বক প্রবেশ করায় সেনা সদস্যরা কয়েকজনকে আটক করেছেন। শ্রমিকরা কিছু সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছিল। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
আশুলিয়া এলাকায় আজ মোট চালু কারখানার সংখ্যা ২৭২টি, আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ২৬৭টি কারখানা এবং আগস্ট মাসের বেতন দিতে পারেনি ৫টি কারখানা।
বিজিএমইএ আরও জানায়, আজ সাভার, আশুলিয়া ও জিরানি এলাকায় তাদের মোট চালু কারখানার সংখ্যা ৪০৭, বিপরীতে বন্ধ রয়েছে ৩৯টি, গাজীপুরে খোলা রয়েছে ৮৭৬টি কারখানা, বিপরীতে বন্ধ রয়েছে ১০টি।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ২০৯টি, ডিএমপি এলাকায় ৩০২টি এবং চট্টগ্রামে ৩৫০টি কারখানা চালু রয়েছে। যদিও এসব এলাকায় কোনো কারখানা বন্ধ নেই বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। আশুলিয়ার ডিইপিজেড, কাঠগড়াসহ অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
গতকাল বিজিএমইএ জানিয়েছিল, গতকাল আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে তাদের মোট ২৭টি কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩(১) ধারার (নো ওয়ার্ক, নো পে) ভিত্তিতে বন্ধ ছিল ১৩টি এবং কারখানা খোলা রাখার পর কাজ বন্ধ আছে কিংবা স্ববেতনে ছুটি আছে, এমন কারখানা ছিল ১৪টি।