লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় নিহত বেড়ে ৫৫৮ জন

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

লেবাননে হিজবুল্লাহর প্রায় ৩০০ অবস্থান লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৫০ শিশুসহ ৫৫৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৬৪৫ জন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতাহতের এ তথ্য দিয়েছে।

তবে আহত বা নিহতদের মধ্যে কতজন সাধারণ নাগরিক এবং কতজন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ছিল তা জানা যায়নি। 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রেকর্ড করা বার্তায় বলেছেন, লেবাননের সাধারণ মানুষ যেন ইসরায়েলের পরামর্শ মেনে নিরাপদ জায়গায় চলে যান। তারা যেন এই সতর্কবার্তাকে গুরুত্ব দেন। 

এরপর দক্ষিণ লেবানন থেকে হাজার হাজার মানুষ ঘর ছেড়েছেন। দক্ষিণ লেবাননের বন্দর শহর সিডনের রাস্তা গাড়িতে ভর্তি। ২০০৬ সালের পর থেকে এ রকম দৃশ্য দেখা যায়নি। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র অ্যাভিচেই আদরেই বলেছেন, হিজবুল্লাহর তিন শতাধিক অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।

হিজবুল্লাহ সক্রিয় রয়েছে, এমন এলাকা থেকে লেবাননের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। অব্যাহত হামলার মুখে দক্ষিণ লেবানন থেকে লোকজনকে সরে যেতে দেখা গেছে।

লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় নিহত বেড়ে ৫৫৮ জন

কয়েক দিন ধরে লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এরই মধ্যে সোমবার ভোর থেকে আকাশপথে ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। জবাবে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে ৩০টির মতো রকেট ছুড়েছে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা।

সোমবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, ‘আমরা লেবাননে আমাদের হামলা তীব্রতর করেছি। দক্ষিণ ইসরায়েলের বাসিন্দাদের নিরাপদে তাঁদের বাড়িঘরে পাঠানোর লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এ হামলা অব্যাহত থাকবে।’

ইসরায়েলের হামলার আশঙ্কায় লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এই খবরে দ্রুত শিশুদের নিয়ে নিরাপদে যাচ্ছেন অভিভাবকেরা।

গত বছরের ৮ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর প্রতিবেশী দেশে এটাই ইসরাইলি বাহিনীর সবচেয়ে বড় হামলা। হামলায় বিনতে জবেইল, আইতারুন, মাজদাল সেলেম, হুলা, তোরা, কলাইলেহ, হারিস, নাবি চিত, তারায়া, শ্মেস্টার, হারবাতা, লিবায়া ও সোহমোরসহ কয়েক ডজন শহরকে টার্গেট করা হয়েছে।
 
বেশিরভাগ হামলাই চালানো হয়েছে দক্ষিণ ও পূর্ব লেবাননের আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে। হামলায় নাবাতিয়েহ ও বেকা উপত্যকা অঞ্চলে বহু বাড়ি, গুদাম ও কারখানায় আগুন ধরে গেছে। লেবানিজ সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
 
প্রসঙ্গত, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সশস্ত্র ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লার প্রধান ঘাঁটি লেবানন। দেশটির সরকারে এই গোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি নেই, তবে ক্ষমতার প্রকৃত নিয়ন্ত্রক তারাই। এই গোষ্ঠীটি ইরানের মদদপুষ্ট।

১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় হিজবুল্লাহ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগে আছে গোষ্ঠীটির। তবে এর উল্লম্ফণ ঘটেছে গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে। ওই হামলার পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েরের উত্তরাঞ্চলে রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুল্লাহ। জবাবে ইসরায়েলও সমান তালে হামলা অব্যাহত রাখে।

গত সপ্তাহে লেবাননের সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহার করা হাজার হাজার পেজার ও ওয়াকিটকিতে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের এই ঘটনায় লেবাননে ৪০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে; যাদের মধ্যে হিজবুল্লাহর অন্তত ১৬ সদস্য রয়েছেন। এই বিস্ফোরণের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করছে হিজবুল্লাহ।

সশস্ত্র গোষ্ঠীটির যোগাযোগের যন্ত্রে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মাঝেই সোমবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় একাধিক শহরে একযোগে বিমান হামলার ঘটনা ঘটল।

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সম্মেলনের যোগদানের ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল বলেছেন, ‘এই উত্তেজনা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং উদ্বেগজনক। আমরা প্রায় পুরোদস্তুর যুদ্ধের মধ্যে ধাবিত হচ্ছি।’ 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘এভাবে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য কাজ করছে যাতে মানুষ নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে।’ 

অপরদিকে পেন্টাগন ঘোষণা করেছে যে, সতর্কতার কারণে তারা মধ্যপ্রাচ্যে ‘একটি ছোট সংখ্যক’ অতিরিক্ত সেনা পাঠাচ্ছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *