মক্কায় ২১ বাংলাদেশিসহ ৫৭৭ হজযাত্রীর মৃত্যু

:: সৌদি আরব প্রতিনিধি ::

তাপপ্রবাহ ও অসহনীয় গরমে সৌদি আরবের মক্কায় চলতি বছরের হজে মৃত্যু হয়েছে ৫৭৭ জনেরও বেশি হজযাত্রীর। এর মধ্যে ২১ জন বাংলাদেশি। হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে ১৭ জন এবং পরে চারজন বাংলাদেশি মারা যান।

মক্কার বৃহত্তম হাসপাতাল আল মুয়াইসেমের মর্গে সব মৃতদের লাশ রাখা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, মৃত হজযাত্রীদের মধ্যে ৫৭৫ জনই মারা গেছেন হিটস্ট্রোক ও গরমজনিত অন্যান্য শারীরিক সমস্যায়। বাকি ২ জন মারা গেছেন পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে।

মৃতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মিসর থেকে আসা ৩২৩ জন হজযাত্রী। এর বাইরে মৃতদের তালিকায় জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, ইরান এবং সেনেগালের হজযাত্রীরাও রয়েছেন।

বুধবার (১৯ জুন) হজ সম্পর্কিত সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ হজ অফিস ঢাকা এবং সৌদি আরব সূত্রে এ তথ্য জানিয়েছে হেল্প ডেস্ক। মারা যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে ১৮ জন পুরুষ ও তিনজন নারী। তাদের মধ্যে মক্কায় ১৬ জন, মদিনায় চারজন এবং মিনায় একজন মারা গেছেন।

হজ ডেস্কে তথ্যমতে, হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে গত ১২ জুন বুধবার সৌদিতে দুইজন মারা যান। তারা হলেন- মো. শাহ আলম (৭৭) ও সুফিয়া খাতুন (৬২)। তাদের বাড়ি যথাক্রমে কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ। চলতি হজ মৌসুমে সৌদি আরবে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে গত ১৫ মে মো. আসাদুজ্জামান নামে এক হজযাত্রী মারা যান।

মারা যাওয়া অন্য হজযাত্রীরা হলেন- নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মো. আসাদুজ্জামান (৫৭), মো. ভোলা জেলা মো. মোস্তফা (৯০), কুড়িগ্রাম জেলার লুৎফর রহমান (৬৫), ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জের মুরতাজুর রহমান (৬৩), চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার মোহাম্মদ ইদ্রিস (৬৪), ঢাকা জেলার মোহাম্মদ শাহজাহান (৪৮), কুমিল্লা জেলার আলী ইমাম ভুঁইয়া (৬৫), কক্সবাজার জেলা মহেশখালী উপজেলার মো. জামাল উদ্দিন (৬৯), কক্সবাজার জেলা রামু উপজেলার মোহাম্মদ নুরুল আলম (৬১), কক্সবাজার জেলা চকরিয়া উপজেলার মাকসুদ আহমদ (৬১), ফরিদপুর জেলার মমতাজ বেগম (৬৩), ঢাকার রামপুরার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম (৫৭), গাইবান্ধা জেলা গোবিন্দপুর উপজেলার মো. সোলাইমান (৭৩), রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শাহজাদ আলী (৫৫) এবং রংপুরে তারাগঞ্জের গোলাম কুদ্দুস (৫৪)।

সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি হজ করতে গিয়ে যদি মারা যান, তাহলে তার মরদেহ সৌদি আরবে দাফন করা হয়। নিজ দেশে আনতে দেওয়া হয় না। এমনকি পরিবার-পরিজনের কোনো আপত্তি গ্রাহ্য করা হয় না। মক্কায় হজ যাত্রী মারা গেলে মসজিদুল হারামে জানাজা হয়ে থাকে।

হিটস্ট্রোক, জ্বর ও অন্যান্য গরম জনিত শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে আল মুয়াইসেম হাসপাতালে বর্তমানে ২ হাজারেরও বেশি হজযাত্রী চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলেও জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

উষ্ণ মরু জলবায়ুর দেশ সৌদি আরবে গ্রীষ্মকালে গড় তাপামাত্রা থাকে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। গত কয়েক দিন ধরে দেশটির দৈনিক তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার মক্কার তাপমাত্রা ছিল ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও তার জেরে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত নয় সৌদিও। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি এক দশকে সৌদি আরবের তাপমাত্রা বাড়ছে দশমিক ৪ ডিগ্রি করে।

ভয়াবহ গরম থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষার অভাবই অনেক হজযাত্রীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। সৌদির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘যে হজযাত্রীরা মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশই যথাযথ নিয়ম-বিধি মেনে সৌদিতে প্রবেশ করেননি। দীর্ঘ সময় ধরে তারা খাবার, পানি ও এয়ার কন্ডিশন পরিষেবা পাননি। মূলত এটিই তাদের অসুস্থতা ও তার পরবর্তীতে মৃত্যুর জন্য দায়ী।’

গত বছর হিটস্ট্রোক ও অন্যান্য শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ২৪০ জন হজযাত্রী মারা গিয়েছিলেন। এবার মৃত্যু হলো তার দ্বিগুণেরও বেশি সংখ্যক যাত্রীর।

সৌদির সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, এর আগে এক মৌসুমে এত বেশি সংখ্যক হজযাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *