ডেঙ্গুতে একদিনে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৮৬

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৮৬ জন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৫ জনে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিনজন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে একজন এবং ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগে একজন করে মারা গেছেন।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৮ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আজকের সর্বোচ্চ ১৪৪ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৪ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দশজন ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুইজন রয়েছেন।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০৯ জনসহ চলতি বছর এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৭৪৫ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন।  

চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ হাজার ৬৮২ জন। এর মধ্যে ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ নারী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক মাসে রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে রোগী বৃদ্ধির হার ৪৯ শতাংশ। অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৩৬ শতাংশ, খুলনায় ৪০ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩৪ শতাংশ, রংপুরে ৪৬ শতাংশ, বরিশালে ২২ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে রোগী বৃদ্ধির হার ৬২ শতাংশ। গত এক মাসে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং রংপুরে রোগী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি।

গত দুই দশকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জুলাইয়ের শেষে কিংবা আগস্টের শুরু থেকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তবে এ বছর জুনের শুরুতেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। বাইরে থেকে বেশি আসছে সংকটাপন্ন রোগী। বরিশাল ও বরগুনায় রোগীর বিপরীতে পর্যাপ্ত শয্যা সংকটের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোগীদের অভিযোগ, স্যালাইন ও ওষুধের সংকট রয়েছে। প্লাটিলেট সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, মশক নিধন কার্যক্রম প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। এ জন্য ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। একা কোনো সংস্থার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। ভাইরাসটি প্রতিরোধে জাতীয়ভাবে কর্মসূচি নেওয়া দরকার। তবে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে একলাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৭৫ জন।

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৭০৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮৬৮ জনের। এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৮ জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। ২৩ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গিয়েছিল, শুধু ২০২৩ সালেই তার প্রায় দ্বিগুণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ রোগে। 

দেশের প্রথম ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়।

২০০০ সালের পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু ধীরে ধীরে কমে এলেও ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অতিক্রম করে দেশ। ২০১৯ সালে ১ লাখেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, আর মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের।

২০২০ সালে করোনার প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ কম ছিল। ২০২০ সালে ডেঙ্গুতে মারা যায় ৭ জন, ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।

ঢাকার তুলনায় এর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০২৩ সালে ছিল দ্বিগুণের বেশি। সারা দেশের মৃত্যুর ৫৮ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *