আন্দোলনের মুখে রাবির আওয়ামীপন্থি ৬ ডিনের পদত্যাগ

■ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ■

দিনব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও রেজিস্ট্রারকে অবরুদ্ধ করে রাখার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আওয়ামীপন্থি ছয় ডিন পদত্যাগ করেছেন। রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় এক সভায় তারা দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার।

দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া ডিনরা হলেন- আইন অনুষদের ডিন আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, বিজ্ঞান অনুষদের ড. নাসিমা আখতার, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের অধ্যাপক ড. এ এস এম. কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক এস এম একরাম উল্লাহ, প্রকৌশল অনুষদের বিমল কুমার প্রামাণিক এবং ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের এ এইচ এম সেলিম রেজা।

অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থী ও ডিনদের সাথে আলোচনা করেছি। সেখানে ডিনরা উপাচার্যের কাছে তাদের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এখন উপাচার্য তাদের আবেদন গ্রহণ করলেই তাদের দায়িত্ব শেষ হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিন বলেন, ভিসি আমাদের ডেকেছিলেন, আমরা আগেও মৌখিকভাবে দায়িত্ব না দেওয়ার কথা বলেছিলাম। আজ লিখিতভাবে দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা জানিয়ে এসেছি। তবে ভিসি স্যার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেননি।

এদিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম একরাম উল্লাহ বলেন, আজ কী হয়েছে সেটা জানি না, তবে আমরা দায়িত্ব পালন করতে ইচ্ছুক না বলে জানিয়ে দিয়েছি।এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেয়নি।

এর আগে আওয়ামীপন্থি ছয় ডিনের পদত্যাগ দাবিতে রোববার সকাল ১০টার দিকে ডিনস কমপ্লেক্সে যান শিক্ষার্থীরা। পরে ডিনস কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ভবনে অবস্থিত এই ডিনদের চেম্বারে তালা দেন তারা। তবে এদিন ডিনদের কেউ বিভাগের শিক্ষক ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন না।

পরে দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার দপ্তরে এসে তাদের দাবি জানান। এ সময় শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল দাবি আদায়ের আগে রেজিস্ট্রার ভবন ত্যাগ না করার ঘোষণা দেন। পরে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রার দপ্তরসহ উপ-উপাচার্য ও প্রক্টর দপ্তরেও তালা ঝুলিয়ে দেন।

প্রায় আধা ঘণ্টা তালাবদ্ধ রাখার পর তালা খুলে দেওয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টর ও জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সভায় বসেন। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই রাতে আরেকটি সভা ডাকা হবে বলে ওই সভা সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

এদিকে এদিন সকালে রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী ডিন এবং আওয়ামীপন্থি কয়েকজন শিক্ষকের চেম্বারে যান। তবে এ সময় শিক্ষকরা কেউ নিজেদের দপ্তরে উপস্থিত ছিলেন না।

দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং আইন অনুষদের ডিনদের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, রেজিস্ট্রারসহ সব দপ্তরের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা।

এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আম্মার এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, আজ মোটামুটি সব আওয়ামীপন্থিদের দপ্তরগুলো তালাবদ্ধ। আমিও এটাই চাই, বিচার না হওয়া পর্যন্ত তালাবদ্ধ থাকুক। সাথে সাথে একটা তালিকা করেছি বিগত জুলাইয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান করা শিক্ষকদের। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং অন্যান্য সংগঠনের কাছে থাকা তালিকাও আহ্বান করছি অনুগ্রহপূর্বক। আমার তালিকায় অনেকে বাদ পড়তে পারে সেটা আপনাদের থেকে সংগ্রহ করবো আগামী ৩ দিনের মধ্যে।

এসময় ডিনরা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত জানায় আন্দোলনকারীরা।

পরে বিকেলে প্রশাসন ভবনে উপাচার্যের কনফারেন্স কক্ষে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠক হয় এবং রাতে আবারও একটি বৈঠক হয়। এসময় পদত্যাগের ঘোষণা দেন ডিনরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতি, ডিন, সিন্ডিকেট, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি এবং শিক্ষা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১২টি অনুষদের ডিন নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি হলুদ প্যানেল থেকে ছয়জন প্রার্থী নির্বাচিত হন। গত বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে ডিনদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে উপাচার্য ১১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী এসব ডিনদের নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত স্ব-পদে থাকার নির্দেশ দেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *