এক বছরের মধ্যে নির্বাচন চান ৬১.১ শতাংশ মানুষ

■ ভয়েস অব আমেরিকা ■

বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ মনে করেন এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তবে আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে বেশির ভাগ মানুষ (৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ) বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত আর শুধুমাত্র নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতার।

১৮ দশমিক ৭ শতাংশ লোক চান দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন আর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ নির্বাচন চান ১৮ মাসের মধ্যে।

সবচেয়ে কম ৫ দশমিক ৮ শতাংশ জনগণ চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

কত দ্রুত নির্বাচন হওয়া উচিত এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলেছেন ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ আর নির্বাচন কবে হওয়া উচিত সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি ১ দশমিক ১ শতাংশ।

ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার তত্ত্বাবধানে, বাংলাদেশে দেশব্যাপী এক জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ৫ অগাস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অগাস্টের ৮ তারিখ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকরা, এ বিষয়ে অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ, ভয়েস অফ আমেরিকা দেশব্যাপী একটি জরিপ করে।

জরিপটি ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার এডিটোরিয়াল নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করে গবেষণা ও জরিপ প্রতিষ্ঠান ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড। ভয়েস অফ আমেরিকার ঠিক করে দেয়া সুনির্দিষ্ট (ক্লোজ এন্ড) প্রশ্নমালার উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার এসিস্টেড টেলিফোন ইন্টারভিউইং এর মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগে ১৮ বছর বা এর চেয়ে বেশি বয়সী এক হাজার মানুষের মধ্যে জরিপটি পরিচালিত হয়।

জরিপটি করা হয়, র‍্যান্ডম ডিজিটাল ডায়ালিং (Random Digit Dialing-RDD) পদ্ধতিতে। বাংলাদেশ টেলিকম্যুনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের সর্বশেষ প্রকাশিত (২০১৭) অফিসিয়াল টেলিফোনে প্ল্যান থেকে বাংলাদেশের মোবাইল নম্বরগুলোর সম্ভাব্য সবধরণের কম্বিনেশন থেকে করা ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড-এর নিজস্ব ডেটা-বেইজ থেকে জরিপটির স্যাম্পল নেয়া হয়েছে। একটি আর-বেইজড প্রোগ্রাম ব্যবহার করে সিম্পল র‍্যান্ডম স্যাম্পলিং (এসআরএস) এর মাধ্যমে জরিপটির নমুনা বাছাই করা হয়েছে।

জরিপ পরিচালনা কাজে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীদের মাধ্যমে ওআরজি-কোয়েস্ট রিসার্চ লিমিটেড-এর ঢাকা অফিসের কল সেন্টার থেকে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ফোন করা হয়।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন জরিপটিতে মার্জিন অফ এরর ৩.১ শতাংশ। জরিপটির উত্তরদাতারা প্রায় একমাস আগে যেহেতু তাদের মতামত জানিয়েছেন তাই এখন জরিপটি করলে এর ফলাফল অনেকক্ষেত্রেই ভিন্ন হতে পারে।

এই জরিপের ফলাফল নিয়ে আগামী কয়েকদিন কয়েক পর্বে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে ভয়েস অফ আমেরিকা। আজ থাকছে এর প্রথম পর্ব।


জরিপে অংশ নেয়া শহরের জনগণের ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ ও গ্রামে বাস করেন তাদের ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ আগামী এক বছরের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন চান। জরিপে অংশগ্রণকারী পুরুষদের ৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ নির্বাচন চান এক বছরের মধ্যে।

তরুণদের মধ্যে (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী) ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ এক বছরের মধ্যে আগামী নির্বাচন চান আর ৩৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের যারা জরিপে অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে এক বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন চান ৫৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

শহরাঞ্চলের ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ ও গ্রামীণ এলাকার ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ জরিপে অংশগ্রহণকারী চান আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন জরিপে অংশ নেয়া পুরুষদের ২০ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীদের ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। ১৮ থেকে ৩৪ বছরের তরুণদের ১৫ দশমিক ২ ও ৩৫ ও তার চেয়ে বেশি বয়সের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২২ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করেন দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আগামী নির্বাচন হওয়া উচিত।

১৮ মাসের মধ্যে আগামী নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন শহরের ১০ দশমিক ৩, গ্রামের ৮, পুরুষদের ১২ নারীদের ৫ দশমিক ২, তরুণদের (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী) ৮ দশমিক ৬ এবং ৩৫ বছর বা এর থেকে বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী।

চার বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছেন, শহরের ৬ দশমিক ২, গ্রামের ৫ দশমিক ৭, পুরুষদের ৬ দশমিক ৯, নারীদের ৪ দশমিক ৮, তরুণদের (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী) ৭ দশমিক ৬,৩৫ বছর বা এর থেকে বেশি বয়সীদের ৪ শতাংশ মানুষ।

অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণের পর থেকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে দ্রুত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে।

কিন্তু, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনো নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। তাদের বক্তব্য, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করার পরই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায়োরিটি ‘সংস্কার’।

এদিকে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের প্লাটফর্ম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে রাষ্ট্র সংস্কার এর কাজগুলো শেষ হবার আগে নির্বাচন হলে আবার নতুন করে তাদের ভাষায় ‘ফ্যাসিবাদের’ আবির্ভাব ঘটবে। তারা বলছে, কেবল একটি নির্বাচন করার জন্য ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান হয়নি।

সেপ্টেবরের ২৩ তারিখ (২৪ তারিখ প্রকাশিত) বাংলাদেশের সেনাপ্রধান রয়টার্সের সাথে এক সাক্ষাৎকারে জানান, আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হতে পারে, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে এই সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর ইউনূসকে ভয়েস অফ আমেরিকাতে দেয়া তার এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদই নির্বাচনের তারিখ জানাবে।

ডক্টর ইউনূস এখনো নির্বাচনের কোনো রোডম্যাপ ঘোষণা না করলেও অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ১৭ নভেম্বর তিনি বলেছেন, নির্বাচনী সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপও (রূপরেখা) পাওয়া যাবে। প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারের কাজ শেষ করেই নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। অবশ্য সংস্কারের জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ডক্টর আসিফ নজরুল ১৯ নভেম্বর বলেছেন, অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেয়া হবে।

সর্বশেষ, ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশের দৈনিক, বণিক বার্তাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে (২০ নভেম্বর প্রকাশিত) কবে নির্বাচন হবে সে প্রসঙ্গে ডক্টর ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার না চাইলে তিনি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেবেন।

এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়ী, ভোটার, উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো, জাতিসংঘ সহ দেশি বিদেশি স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক চলছে।

ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার জনমত জরিপে তাই সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ এই বিষয় দুটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচন চান ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ

বেশির ভাগ মানুষ (৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ) মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে তার সবগুলো করার পরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত আর শুধুমাত্র নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরি সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতার।


“আপনি কি মনে করেন অন্তবর্তী সরকার যা যা সংস্কার করা প্রয়োজন মনে করবে সব সংস্কার করার পর নাকি শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত জরুরী সংস্কার করার পর নির্বাচন আয়োজন করা উচিত?”…সম্প্রতি ভয়েস অফ আমেরিকার পরিচালিত এক জরিপে এই প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য উঠে এসেছে।

১ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না এবং দশমিক ৫ শতাংশ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেছেন।

উত্তরদাতাদের মধ্যে যারা মনে করেন যে অন্তর্বর্তী সরকার যে যে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন সেসবগুলো সংস্কার শেষ করেই আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা উচিত তাদের অধিকাংশ বিচার বিভাগ, সংবিধান, অর্থনৈতিক খাত, পুলিশ, ও নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত সংস্কারগুলো করার পক্ষে মত দিয়েছেন।

এদের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯৬ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। পুলিশ সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯২ দশমিক ৩ শতাংশ, বিচার বিভাগ সংস্কারের পক্ষে ৯৫ দশমিক ৩ শতাংশ, এবং অর্থনৈতিক খাতে সংস্কার এর পক্ষে ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা মত দিয়েছেন। সংবিধান সংস্কার চান ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় দেশ পরিচালনায় ভালো করছে

বাংলাদেশের ৫৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় দেশ পরিচালনায় ভালো করছে।

যদিও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের মতে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ শাসনে আওয়ামী লীগের চেয়ে খারাপ করছে বা একই রকম পারফর্ম করছে। যারা মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে দেশ শাসনে খারাপ করছে তাদের সংখ্যা ২০ দশমিক ৪ শতাংশ আর একই রকম করছে বলে মত দিয়েছেন ২০ দশমিক ১ শতাংশ।

“আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় ভালো, খারাপ নাকি একইরকম করছে?”- এই প্রশ্নের জবাবে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা এ মতামত দেন।


জরিপে অংশ নেয়াদের মধ্যে দশমিক ৮ শতাংশ এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন তারা জানেন না আর দশমিক ৩ শতাংশ এ প্রশ্নের উত্তর দিতে রাজী হননি।

শহরে থাকেন, তুলনামূলকভাবে বেশি সংখ্যায় সেসব উত্তরদাতারা (৬১ দশমিক ৯ শতাংশ) যারা গ্রামে থাকেন তাদের চেয়ে (৫৭ দশমিক ৩ শতাংশ) অন্তর্বর্তী সরকার বেশি ভালো করছে বলে মত দিয়েছেন। পুরুষ উত্তরদাতারা (৬২ শতাংশ) নারী উত্তরদাতাদের (৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ) তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পরিচালনায় বেশি ভালো বলে মত দিয়েছেন। তরুণ উত্তরদাতাদের (১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী) মধ্যে ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে ভালো করছে আর ৩৫ বা তারচেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে এই মত জানিয়েছেন ৫৮ দশমিক ১ শতাংশ উত্তরদাতা।

৬৩ দশমিক ২ শতাংশর মতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে ভালো করছে

গত ৮ অগাস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেসব ক্ষেত্রে ভালো কাজ করছে বলে জরিপের উত্তরদাতারা মনে করছে তার মধ্যে একটি হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, যা ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন প্রশাসনের অন্যতম উদ্বেগের বিষয় ছিল।

এ প্রেক্ষাপটে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। পরবর্তীতে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গত ১৫ নভেম্বর সেনাবাহিনীকে দেয়া ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আরো দুমাসের জন্য বাড়িয়েছে সরকার।


তবে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরদাতা (৬৩ দশমিক ২ শতাংশ) মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে ভালো করছে।

২১ দশমিক ৪ শতাংশ মনে করেন এটি এখন আরও খারাপ, আর ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ মনে করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুই সরকারের আমলে একই।

উত্তরদাতাদের মধ্যে পুরুষরা (৬৭ শতাংশ) অন্যদের তুলনায় বেশি সংখ্যায় মত দিয়েছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত ভালো নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। নারীদের মধ্যে এমনটি মনে করেন ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা। তরুণদের (১৮ থেকে ৩৪) মধ্যে ৬২ দশমিক ৭ এবং ৩৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সীদের ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগের চেয়ে সফলতর। আর শহরের উত্তরদাতাদের ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ ও গ্রামের উত্তরদাতাদের ৬২ দশমিক ৭ শতাংশ একই মত জানিয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের চেয়ে ভালো করছে, উত্তরদাতাদের (৬৩ দশমিক ২ শতাংশ) এই মত অবশ্য জনগণের নিরাপত্তার মতো একটি বড় অনুভূতিতে সেভাবে রূপান্তরিত হয়নি। যদিও প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা (৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ) মনে করেন যে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ, প্রায় একই সংখ্যক উত্তরদাতা জানিয়েছেন (৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ) তারা আওয়ামী আমলেই বেশি বা একই রকম নিরাপদ বোধ করেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বেশি নিরাপদ বোধ করেন ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ

প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা (৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ) মনে করেন যে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ। প্রায় একই সংখ্যক উত্তরদাতা জানিয়েছেন (৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ) তারা আওয়ামী আমলেই বেশি বা একই রকম নিরাপদ বোধ করেছেন।

আওয়ামী আমলেই নিজেদের অন্তর্বর্তী সরকারের সময় থেকে বেশি নিরাপদ বোধ করছে এমন উত্তরদাতাদের সংখ্যা ২৩ শতাংশ, আর ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ মনে করেন দুই সরকারের আমলে নিরাপত্তার দিক থেকে তারা একই রকম বোধ করছেন।


অপেক্ষাকৃত বয়স্ক (৩৫ বছরের উপর) পুরুষ ও শহরাঞ্চলের উত্তরদাতাদের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তারা আওয়ামী লীগ আমলের চেয়ে বেশি নিরাপদ এই মতটি তরুণ (১৮ থেকে ৩৪), নারী ও গ্রামে বাসকারী উত্তরদাতাদের তুলনায় বেশি।

শহরের উত্তরদাতাদের ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ আমলের তুলনায় বেশি নিরাপদ বোধ করেন যেখানে গ্রামীণ উত্তরদাতাদের মধ্যে এমনটি বোধ করেন ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ। পুরুষ উত্তরদাতাদের ৫২ দশমিক ১ ও নারী উত্তরদাতাদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আগের সরকারের সময়ের থেকে বেশি নিরাপদ বোধ করেন।

এই আমলে, আওয়ামী লীগ আমলের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি নিরাপদ বোধ করার কথা জানিয়েছেন ৩৫ প্লাস উত্তরদাতাদের ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং তরুণদের মধ্যে (১৮ থেকে ৩৪) ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *