ট্রাভেল পাশ নিয়ে সেন্ট মার্টিন গেলেন ৬৫৩ পর্যটক

■ কক্সবাজার প্রতিনিধি ■

প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে প্রথমবারের মতো ট্রাভেল পাস নিয়ে ৬৫৩ জন পর্যটক গেলেন এমভি বার আউলিয়া জাহাজে। সকাল ১০টায় কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজটি যাত্রা শুরু করে।

বিকাল ৪টা নাগাদ দ্বীপে পৌঁছালে পর্যটকদের ফুল দিয়ে বরণ করেন সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা। তবে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদে স্থানীয়রা মাথায় কালো ব্যাজ ধারণ করেন।

এমভি বার আউলিয়া জাহাজের পরিচালক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, রোববার তিনটি জাহাজ ছাড়ার কথা থাকলেও পর্যটক সংকটের কারণে কেবল এমভি বার আউলিয়া ছেড়েছে। জাহাজটির ধারণক্ষমতা ৮৫০ জন হলেও ৬৫৩ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে।অর্ধেক পর্যটক সেন্ট মার্টিনে রাত যাপন করবেন। বাকি অর্ধেক পর্যটক নিয়ে জাহাজটি বিকেল পাঁচটার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হবে। রাত ১১টার দিকে এমভি বার আউলিয়া কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে পৌঁছানোর কথা। তিনি আরও বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটকবাহী তিনটি (কেয়ারী সিন্দাবাদ, এমভি বার আউলিয়া ও কর্ণফুলী এক্সপ্রেস) জাহাজ চালুর কথা ছিল। তবে যাত্রীর সংকটের কারণে এমভি বার আউলিয়া ছাড়া অপর দুটি জাহাজ সেন্ট মার্টিন যেতে পারেনি।

সকালে নুনিয়াছটা জেটিঘাটে কথা হয় ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার ব্যবসায়ী ওবাইদুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে আছেন পরিবারের চার সদস্য। ওবাইদুর রহমান বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দেখার ইচ্ছা দীর্ঘদিনের। কক্সবাজার ভ্রমণে এসে সুযোগটি হাতছাড়া করেননি। দুই দিন থাকার পরিকল্পনা নিয়ে তাঁরা সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন।

ঢাকার আরমানিটোলার আরেক ব্যবসায়ী সাদিকুল ইসলাম বলেন, তিন বছর আগে তিনি একাই একবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ করেছিলেন। দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা শুনে পরিবারের সদস্যরা মুগ্ধ। পরে তাঁরাও সেন্ট মার্টিন দেখার আগ্রহ পুষে রাখেন। তাই এবার তাঁদের নিয়ে যাচ্ছেন। সেন্ট মার্টিনে দুই রাত থেকে তারপর ঢাকার ফেরার কথা আছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। তবে সেদিন কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজ পর্যটক সংকটের কারণে যাত্রা বাতিল করে।

সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ১৯ নভেম্বর একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। 

কমিটির আহবায়ক কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। কমিটির সদস্যসচিব পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক জমির উদ্দিন।

গতকাল সকালে জেটিতে জাহাজে ওঠার সিঁড়িতে পর্যটকদের হাতে পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক আছে কিনা তদারকি করতে দেখা যায় পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। ভ্রমণকারীরা যাতে জাহাজে পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন। 

তিনি বলেন, পর্যটকদের পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। জাহাজে যাতে কোনোভাবে পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর থাকবে পরিবেশ অধিদপ্তর।

কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, পর্যটকদের ট্র্যাভেল পাস নেওয়ার মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত দৈনিক সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের পরিবেশ সচেতন করতে ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে পলিথিন এবং প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জাহাজে পর্যটকদের পাটের ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নভেম্বর মাসে পর্যটকরা সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন, তবে তারা রাতে থাকতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক যেতে পারবেন ও রাতেও থাকতে পারবেন। ফেব্রুয়ারিতে দ্বীপে কোনো পর্যটক যেতে পারবেন না, তখন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হবে।

এদিন সকালে পর্যটকবাহী জাহাজ পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক ভ্রমণ এবং জাহাজ চলাচলের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে শহর থেকে জাহাজ চলাচলের ঘাট নির্ধারণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা কার্যকর করতে এ সংক্রান্তে গঠিত কমিটি কাজ করবে। 

গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজ নিয়ন্ত্রণে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আদেশে বলা হয়, সেন্টমার্টিনে যেতে হলে পর্যটকদের নিবন্ধনসহ নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। ওই মন্ত্রণালয়ের গঠন করা যৌথ কমিটি এসব বিষয় দেখভাল করবে। কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালককে করা হয়েছে সদস্যসচিব।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটনের জাহাজ চলাচল বন্ধ হওয়ার পর ইনানী সৈকতে স্থাপিত নৌ-জেটি ব্যবহার করে সেন্টমার্টিনে পর্যটক পরিবহন হতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে ইনানী জেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখান থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে।

প্রতিবছর সরকারের পক্ষ থেকে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ছয় মাস টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। বাকি ছয় মাস সাগর উত্তাল থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *