গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা, এখন পর্যন্ত গ্রেফতার ৭

■ গাজীপুর প্রতিনিধি ■ 

গাজীপুর মহানগরীর চন্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. মিজান ওরফে কেটু মিজান, তার স্ত্রী গোলাপি, আল আমিন, মো. স্বাধীন, শাহজালাল, ফয়সাল হাসান ও মো. সুমন।

গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার রবিউল হাসান। তিনি বলেন, শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাতে পুলিশের তিনটি ইউনিট পৃথক পৃথক জায়গায় অভিযান চালিয়ে ওই সাতজনকে গ্রেফতার করে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ভিডিও করা নিয়ে প্রকাশ্যে তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দাঁড়িওয়ালা ও মাথায় ক্যাপ পরা ফয়সাল ওরফে কেটু মিজান চাপাতি হাতে দৌড়াচ্ছেন। তার সঙ্গে শাহজামাল, বুলেট ও সুজনসহ আরও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশ বলছে একাধিক টিম এখনো পলাতক। গোলাপি ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

স্থানীয় মানুষ, ব্যবসায়ী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চৌরাস্তা এলাকায় একাধিক ফিটিংস পার্টি ও ছিনতাইকারী রয়েছে। তারা চাঁদাবাজি, ছিনতাই কাজে জড়িত। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার কিছু আগে এটিএম মেশিন থেকে টাকা তুলেন বাদশা মিয়া নামে এক চাকরিজীবী। টাকা তোলার সময় ফিটিং চক্র তাকে অনুসরণ করে। এক সময় তাদের চক্রের এক নারী সদস্যকে লেলিয়ে দেয়। পরে কিলার সদস্যরা অস্ত্র হাতে বাদশাকে ধাওয়া করে। এ সময় তুহিন সেটি দেখে ভিডিও করেন। ভিডিও করার অপরাধে ওই সন্ত্রাসীরা তুহিনের ওপর হামলা চালায়।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তাহেরুল হক চৌহান বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে আমরা পাঁচজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। ঢাকা ও এর বাইরে তিনিটি জায়গায় আমাদের টিম অভিযান চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই ঘটনায় দুজন ভুক্তভোগী। তুহিন ছাড়া অন্যজন বাদশা মিয়া। তিনি আহত হয়েছেন।

তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মো. সেলিম বাদী হয়ে শুক্রবার সকালে বাসন থানায় একটি মামলা করেছেন।  এতে ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরিবারসহ সাংবাদিক তুহিন গাজীপুর মহাগরীর চৌরাস্তা এলাকায় থাকতেন।  ভিডিও করা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে কয়েকজন দুর্বৃত্ত চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তাকে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। এ সময় তিনি দৌড়ে ঈদগাঁ মার্কেটের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন। পরে দুর্বৃত্তরা তাকে দোকানের ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। একপর্যায়ে তিনি মারা গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

এর কিছুক্ষণ পরেই স্থানীয় একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়।  ওই ফুটেজে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দেখা যায়। ওই ঘটনায় পুলিশ রাতেই মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে।

রবিউল হাসান বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। এরপর থেকেই তাদের গ্রেফতার করতে পুলিশের তিনটি টিম ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। এর মধ্যে শুক্রবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর এলাকা থেকে কেটু মিজান ও তার স্ত্রী গোলাপিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের অপর একটি টিম গাজীপুর শহরের পাশ থেকে স্বাধীনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া তুরাগ থানা এলাকা থেকে আলামিন নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। আরেক আসামি শাহ জালালকে ময়মনসিংহের গফরগাঁও এবং সুমন ও ফয়সালকে বাসন এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রত্যেকেই সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত৷ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঠিক কি কারণে হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক তথ্য বের করা হচ্ছে। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানানো হবে৷

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *