■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এবছর পাসের হার ৭৭.৭৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন শিক্ষার্থী।
২০২৩ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯২ হাজার ৩৬৫ জন। ফলে, গত বছরের তুলনায় এ বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৫৪৬ জন।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে সব শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল একসঙ্গে প্রকাশ করা হয়।
সাবজেক্ট ম্যাপিংয় করে ফল প্রকাশের কারণে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
ফল প্রকাশের পর আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার এ তথ্য জানান।
গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে। গত বছর ১১টি বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং ছাত্রদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ বছর পাসের হার কমেছে দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে গতবছরের চেয়ে এ বছর ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ ছাত্রী বেশি পাস করেছে।
এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের দুই হাজার ৬৯৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। সেখানে পাস করেছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন শিক্ষার্থী।
অংশগ্রহণকারী ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫ জন ছাত্রীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৭১৪ জন। অন্যদিকে ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩ জন ছাত্রের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯৫ জন।
২০০১ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। তবে এবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তা করছেন না বলে বোর্ডসূত্রে জানা গেছে। স্ব স্ব শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরাই ফল প্রকাশ করেন।
গত ৩০ জুন থেকে শুরু হয়ে সাতটি পরীক্ষার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লে পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। পরে বাকি পরীক্ষাগুলো নেয়ার সিদ্ধান্ত হলে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে তা বাতিল করতে বাধ্য হয় শিক্ষা বিভাগ।
বাতিল পরীক্ষাগুলোর নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং করে)। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ফলাফল প্রকাশ করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো।
২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয় গত ৩০ জুন থেকে। তবে বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় ৯ জুলাই। এর মধ্যেই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাতটি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বোর্ডের বেশ কয়েকটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এরপরই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। স্থগিত হওয়ার আগে ছয় থেকে সাতটি পরীক্ষা হয়েছিল। বাকি বিষয়গুলোর লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা বাকি ছিল।
প্রথমে গত ১৮ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তারপর একসঙ্গে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু পরে জানানো হয়, ১১ আগস্ট পরীক্ষা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বিভিন্ন এলাকায় থানায় হওয়া হামলায় প্রশ্নপত্র রাখা ট্রাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য ১১ আগস্ট থেকে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছিল। সর্বশেষ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল শিক্ষা বোর্ড। কিন্তু ২০ আগস্ট শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে বাকি পরীক্ষা বাতিল করে সরকার।
সবচেয়ে বেশি পাসের হার সিলেটে
এবার সবচেয়ে বেশি পাসের হার সিলেট বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এছাড়া সবচেয়ে কম পাসের হার ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ।
এছাড়া ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ, যশোর বোর্ডে পাসের হার ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ,
এ ছাড়া, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ০৯ শতাংশ।
৬৫টি কলেজের একজনও পাস করেনি
এবার কোনো শিক্ষার্থী পাস করেননি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৫, যা গত বছর ছিল ৪২। অর্থাৎ, গত বছরের চেয়ে এবার কোনো শিক্ষার্থী পাস করেননি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ২৩। তবে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৪৩৫টি।
মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পর আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, এবার এইচএসসিতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ১৯৭, মোট কেন্দ্র ছিল ২ হাজার ৬৯৫টি। শিক্ষার্থীদের শতভাগ পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৩৮৭টি। গত বছর মোট প্রতিষ্ঠান ছিল ৯ হাজার ১৮৭টি, কেন্দ্র ছিল ২ হাজার ৬৫৭টি। শতভাগ পাস করেছে ৯৫৩টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।
এতে দেখা যায়, এবার মোট প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১০টি, কেন্দ্র বেড়েছে ৩৮টি।
আলিমে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯৬১৩ জন
৯টি সাধারণ ও মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তবে এবার মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার বেড়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১টার আগে স্ব-স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ওয়েবসাইটে একযোগে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এবার আলিমে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। যেখানে গত বছর ছিল ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ফলে এবার প্রায় তিন শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া এ বছর আলিমে মোট জিপিএ পেয়েছেন ৯ হাজার ৬১৩ জন।
এবার এইচএসসি ও সমমানে জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। আর ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী। সে হিসেবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৫৪৬ জন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৯২২ জন
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি ভোকেশনাল, বিএম, ডিপ্লোমা ইন কমার্স পরীক্ষার ফলাফল আজ মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। এতে পাসের হার ৮৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এ বছর কারিগরি বোর্ডের অধীন জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৯২২ জন।
এর আগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল আজ বেলা ১১টার দিকে একসঙ্গে প্রকাশ করা হয়। নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
২০০৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এইচএসসিতে জিপিএ-৫ বৃদ্ধির চিত্র
২০০৩ সাল থেকে এইচএসসিতে জিপিএ পদ্ধতি চালু হয়। ২০০৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ৭৬ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন। ২০০২ সালে ৩২৭ জন, ২০০৩ সালে ১ হাজার ৩৮৯ জন, ২০০৪ সালে ৮ হাজার ৫৯৭ জন, ২০০৫ সালে ১৫ হাজার ৬৩১ জন, ২০০৬ সালে ২৪ হাজার ৩৮৪ জন, ২০০৭ সালে ২৫ হাজার ৭৩২ জন, ২০০৮ সালে ৪১ হাজার ৯১৭ জন।
২০০৯ সালে ৪৫ হাজার ৯৩৪ জন, ২০১০ সালে ৫২ হাজার ১৩৪ জন, ২০১১ সালে ৬২ হাজার ২৮৮ জন, ২০১২ সালে ৮২ হাজার ২১২ জন, ২০১৩ সালে ৯১ হাজার ২২৬ জন, ২০১৪ সালে ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন, ২০১৫ সালে ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন, ২০১৬ সালে ১ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ জন, ২০১৭ সালে ১ লাখ ৪ হাজার ৭৬১, ২০১৮ সালে ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯, ২০১৯ সালে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন পরীক্ষার্থী। ২০২০ সালে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। ২০২১ সালে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন। ২০২২ সালে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী।
যেভাবে জানা যাবে ফলাফল
সম্প্রতি ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে কীভাবে শিক্ষার্থীরা ফলাফল পাবেন, তা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উল্লিখিত যেকোনো পদ্ধতিতে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট www.dhakaeducationboard.gov.bd, www.educationboardresults.gov.bd ও www.eduboardresults.gov.bd-এ রেজাল্ট কর্নারে ক্লিক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের EIIN এন্ট্রি করে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে এবং রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের মাধ্যমে রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করতে পারবেন।
পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর খুদে বার্তার মাধ্যমেও মিলবে ফলাফল। খুদে বার্তায় ফলাফল সংগ্রহ করা যাবে : HSC Board name (first 3 letters) Roll Year টাইপ করে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে। উদাহরণ : HSC Dha 123456 2024 লিখে 16222-তে পাঠাতে হবে।