■ চাঁদপুর প্রতিনিধি ■
ঘন কুয়াশার কারণে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী দুই লঞ্চের সংঘর্ষে আট যাত্রী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
হতাহত ব্যক্তিরা এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের যাত্রী। নিহত চারজন হলেন ভোলার লালমোহন উপজেলার কাজিরাবাদ এলাকার সিরাজুল ব্যাপারীর ছেলে আবদুল গনি (৩৮), একই এলাকার কালু খাঁর ছেলে মো. সাজু (৪৫), কচুখালী গজারিয়া এলাকার মো. মিলনের স্ত্রী মোসা. রিনা (৩৫) এবং চরফ্যাশন উপজেলার আহমদপুর এলাকার আমির হোসেনের ছেলে মো. হানিফ (৬০)।
আহত তিনজন হলেন লালমোহন উপজেলার মতলব ব্যাপারীর ছেলে মো. শাহাদত, আবদুল আজিজের ছেলে মোহাম্মদ মিনা (৪৫) ও চরফ্যাশন উপজেলার মো. হানিফের স্ত্রী মোসা. রহিমা (৪৫)।
এই ঘটনায় ‘এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯’ লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষয়টি জানিয়ে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ এর সহকারী পরিচালক মো. সোলাইমান বলেন, দুই লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনায় অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে।
চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক (ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য জানান, এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন যাত্রী। আরও কয়েকজন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রীদের বরাতে জানা যায়, ঘন কুয়াশার কারণে অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি এমভি জাকির সম্রাট–৩ লঞ্চের মাঝ বরাবর সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে জাকির সম্রাট–৩ লঞ্চটির দ্বিতীয় তলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নিহত নারী যাত্রী সংঘর্ষের মুহূর্তে মর্মান্তিকভাবে দ্বিখণ্ডিত হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। অপর দুই পুরুষ যাত্রীও ঘটনাস্থলে অথবা গুরুতর আহত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
যাত্রীরা জানান, লঞ্চের সাইডে অনেক যাত্রী অবস্থান করছিলেন। সংঘর্ষের তীব্রতায় বহু যাত্রী নদীতে পড়ে যান। তাদের মধ্যে কয়েকজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার কাজ চলমান থাকায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আহতদের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। স্থানীয় জেলে ও নৌযান শ্রমিকদের সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর মাঝনদীতে ক্ষতিগ্রস্ত জাকির সম্রাট–৩ লঞ্চটি ডুবো-ডুবো অবস্থায় ভাসতে থাকলে ভোলা থেকে ঢাকাগামী এমভি কর্ণফুলী–৯ লঞ্চ দ্রুত এগিয়ে এসে অনেক যাত্রীকে উদ্ধার করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
ঘটনার পরপরই নৌ-পুলিশ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার ও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। দুর্ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে।
চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এমভি অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরিশাল ও ঝালকাঠির উদ্দেশে যাচ্ছিল। অপর দিকে এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চটি ভোলা থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে আসছিল। গতকাল দিবাগত রাত ১টা ৩৮ মিনিটের দিকে চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় ঘন কুয়াশার মধ্যে মঞ্চ দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, আজ সকাল আনুমানিক ৯টা ৪৫ মিনিটে এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চটি ঢাকা সদরঘাট নৌ টার্মিনালে পৌঁছায়। সদরঘাট নৌ থানার পুলিশ নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করে এবং আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়।
অন্যদিকে এমভি অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি সকাল আনুমানিক ৯টা ১৫ মিনিটে ঝালকাঠি নৌঘাটে পৌঁছায়। তখন লঞ্চটির চারজন কর্মীকে আটক করা হয়।
চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী দুটি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেন শুক্রবার সকালে ঢাকার সদরঘাটে দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চ পরিদর্শন করেছেন।
সেখানে উপদেষ্টা বলেন, তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। ‘এডভেঞ্চার-৯’ লঞ্চের পাঁচ কর্মীকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
“তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নৌ উপদেষ্টা হতাহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সমবেদনা জানান।
উপদেষ্টা জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসায় ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া দায়ী লঞ্চ মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
