সড়ক দুর্ঘটনায় শেষ ডলির ১৭ দিনের সংসার

:: কুমিল্লা প্রতিনিধি ::

পলাশ এবং ডলির সংসার শুরু হয়েছে মাত্র ১৭ দিন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছিলেন নাসির উদ্দীন পলাশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি। এই দুর্ঘটনায় মারা যান পলাশসহ পাঁচ জন।

শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপজেলার বসন্তপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

একটি ঘাতক বাস শেষ করে দিল এক নবদম্পতির সংসার। নববধূ ডলি আক্তারের বাড়ি চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া। আর নিহত পলাশের বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলে। পলাশ ছিলেন পাইপ ফিল্টারের ঠিকাদার।

স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে ভাইকে নিয়ে চৌদ্দগ্রামে ছুটে এসেছেন ডলি। স্বামীর মরদেহ দেখেই হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

কান্নারত অবস্থায় ডলি বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। বলেন, স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল ভোররাতে মোবাইল ফোনে। স্বামী বলেছিলেন, ‘তিন ঘণ্টা পর দেখা হবে, তুমি ঘুমাও।’

নিহত নাসিরের স্ত্রী ডলি জানান, ১ মে আমাদের বিয়ে হয়। স্বামী ঢাকায় বাসা নিয়েছেন। সেখানে আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সে উদ্দেশ্যেই তিনি সীতাকুণ্ড আসছিলেন। আমাকে নিয়ে তার আর ঢাকা যাওয়া হলো না। এসব বলতে গিয়েই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি।

ভাইকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী পলাশের লাশ নিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন ডলি

চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী রিলাক্স পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। পরে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় গাড়ির ভেতর থেকে নিহত পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বসন্তপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে টেকনাফগামী রিলাক্স পরিবহন-এর ডাবলডেকের একটি বাস উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হয় পাঁচ যাত্রী। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশ সদস্যরা নিহত ও আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে। পরে থানায় আনা হয় দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি।

দুর্ঘটনায় নিহত আরেক যাত্রী টেকনাফের আহমেদ হোসেন। মালয়েশিয়াপ্রবাসী বড় ভাইকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে যান তিনি। পরে টেকনাফে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মারা যান আহমেদ। আহত হন সঙ্গে থাকা দুই ভাই। এ দুর্ঘটনায় নিহত আরও দুই যাত্রী হলেন, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরের মাসুক মিয়া ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী বদরুল হাসান রিয়াদ।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রবিউল হাসান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ১৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চারজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম লোকমান হোসাইন বলেন, ‘বাসটি সকালে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বসন্তপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় পাঁচজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়। দুর্ঘটনার পর বাসের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছেন। বাসটি উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের সঙ্গে আমরা কথা বলে জানতে পেরেছি, ভোরে সড়ক ফাঁকা থাকার কারণে বেপরোয়া চালাচ্ছিলেন চালক। যাত্রীদের নিষেধের পরেও গতি কমাননি। চালক ও সহযোগীকে না পেলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কাজ চলছে।’

কুমিল্লা হাইওয়ে রেঞ্জের পুলিশ সুপার খায়রুল আলম বলেন, ‘চালকের চোখে ঘুম নাকি অতিরিক্ত গতির কারণে পাঁচজনের প্রাণ ঝরেছে সে বিষয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কারণ শনাক্ত করা হবে।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *