ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে নিহত

:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::

হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ান নিহত হয়েছেন। একই হেলিকপ্টারে থাকা সকল যাত্রী দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ইরানের গনমাধ্যমগুলো। 

উত্তর-পশ্চিম ইরানে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমাতিসহ হেলিকপ্টারে থাকা সবাই নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আইআরএনএ (ইরনা) এবং আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহর নিউজ এজেন্সি।

এ সময় সবাইকে শহীদ বলে অভিহিত করেছে মেহর নিউজ। ছাড়াও একাধিক ইরানি সংবাদ সংস্থা তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।

এদিকে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার পাওয়া গেলেও এখনও দুর্ঘটনাস্থলে জীবনের কোন চিহ্ন খুঁজে পাননি উদ্ধারকারীরা।

রোববার আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে যান ইব্রাহিম রাইসি। সাথে ছিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্য কর্মকর্তারা। ফেরার পথে পূর্ব আজারবাইজানের জোলফা এলাকার কাছে দুর্গম পাহাড়ে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়।

দেশটির বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়, ৪০ জনের বেশি উদ্ধারকারীর দল এ অভিযানে নামে। অনুসন্ধানী কুকুর এবং ড্রোন দিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে তাদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হয়। 

রেড ক্রিসেন্টের এক মুখপাত্র জানান, আবহাওয়া খারাপ থাকায় দ্রুত উদ্ধার অভিযান চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। রোববার রাতে বিধ্বস্ত হওয়ার পর আজ সোমবার সকালে হেলিকপ্টারটির খোঁজ মেলে। ইরানের রেডক্রিসেন্ট প্রধান পীরহোসেন কোলিভান্দ জানান, বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটি খুঁজে পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি ভালো নয়। 

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার খবরে বলা হয়, ৬৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট রাইসি আজারবাইজান সীমান্তের কাছে ইরানের একটি জলাধার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফিরছিলেন। পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের ভার্জাকন এলাকায় জরুরি অবতরণ করার সময় তাঁর হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ভার্জাকন এবং জোলফা শহরের মধ্যে ডিজমার জঙ্গলে। হেলিকপ্টারে আরও ছিলেন পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমতি এবং সেখানে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিনিধি আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলি আলে-হাশেম। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রাইসি ইরানের উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন।

বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার পাওয়া গেলেও এখনও দুর্ঘটনাস্থলে জীবনের কোন চিহ্ন খুঁজে পাননি উদ্ধারকারীরা।

ইরানের বিমান দুর্ঘটনার ভয়ংকর রেকর্ড রয়েছে। এর অন্যতম কারণ, দেশটি বিমানের পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে পারে না। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে কোনো না কোনোভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই সময় থেকে বিমান দুর্ঘটনায় প্রায় ২০০০ ইরানি প্রাণ হারিয়েছেন। 

এমন সময় এ দুর্ঘটনা ঘটল, যখন গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের যুদ্ধংদেহী অবস্থা বিরাজ করছে। সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান। 

দুর্ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ জানান, আছড়ে পড়া হেলিকপ্টারটিতে রাইসি ছিলেন না। আবার অনেকে দাবি করেন, প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার থেকে হেডকোয়ার্টারে যোগাযোগ করা হয়েছে।

তবে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইরানি প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারে না থাকা এবং হেলিকপ্টার থেকে যোগাযোগ করার যে তথ্য ছড়ানো হয়েছে- সেগুলোর কোনোটিই সত্যি নয়।

কিন্তু যেটি সত্য সেটি হলো রাইসি এখনো নিখোঁজ রয়েছেন এবং তাকে খুঁজে পেতে অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

ইরানের সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার পর সেটি থেকে জরুরি ফোনকল এসেছিল। হেলিকপ্টারে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকা কর্মকর্তারাই ওই ফোন করেছিলেন। ফলে এ দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত হননি বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ওয়াহিদি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন, ওই হেলিকপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছিল। কথা চলার মধ্যই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারীরা যাচ্ছেন। তবে কুয়াশা ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তাদের পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

রাইসির ওই হেলিকপ্টারের সঙ্গে আরও দুটি হেলিকপ্টার ছিল। সেগুলো অক্ষত রয়েছে। প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি কোন ধরনের ছিল, তা এখনো জানা যায়নি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমাতি, তাবরিজ জুমার নামাজের খতিব হোজ্জাতোলেস্লাম আল হাশেম এবং আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি রাইসির সঙ্গে হেলিকপ্টারে ছিলেন।

দুর্ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় বর্ণনায় ‘হার্ড ল্যান্ডিং’ বলা হচ্ছে। কিন্তু এতে হেলিকপ্টারটির অবস্থা কী হয়েছে তা বলা হয়নি। এ পরিভাষায় কী বোঝানো হয়েছে তাও স্পষ্ট নয়। দেশটির ফারস নিউজ এজেন্সি প্রেসিডেন্টের জন্য দোয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্ধার অভিযানের সর্বেশেষ তথ্য নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও, দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর জন্য উদ্ধারকারী দলগুলো আন্তরিক চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়াও দুর্ঘটনার পরপর এর কারণ অনুসন্ধানে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। অপরদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতও সমর্থন দিয়েছে এবং বলেছে যে তারা ইরানের পাশে আছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উদ্ধারকাজে সহযোগিতার জন্য তুরস্ক বিশেষজ্ঞ একটি দল পাঠাচ্ছে। দেশটির সরকারের জরুরি সহায়তা সংস্থা এএফএডি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সন্ধানে ইরানকে সাহায্য করার জন্য তুরস্ক পাহাড়ে উদ্ধারকাজে বিশেষজ্ঞ ৩২ জনকে পাঠিয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *