:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সোমবার (২০ মে) দুপুরে গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, দুর্মূল্যের বাজারে মেহেনতি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বিবেচনা ও দ্রব্যমূল্যের কথা চিন্তা করে সিটি এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিআরটিএকে আমি বলেছি, এদের প্রতিনিধিদের ডাকবেন, কথা বলবেন। ড্রাইভারদের ট্রেনিং, গাড়ির সাইজ একটা নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। গাড়ির সাইজ, চাকা এগুলো যেন বাস্তবসম্মত হয়। এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সবাইকে বিআরটিএ পৌঁছে দেবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।’
১৫ মে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম বৈঠকে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে অভিযানে নামে পুলিশ। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল রোববার রাজধানীর মিরপুরে দিনভর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চালকেরা।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে। তিনি স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, তাঁদের জীবিকার বিষয়টি উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তাঁদের জীবিকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে। একটি বিধিমালার মাধ্যমে এটি রেগুলেট করতে হবে এবং তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দিতে হবে। এর বাইরে তাঁরা যাবেন না। তবে কোনো অবস্থাতেই যেন মহাসড়ক বা বড় সড়কে না যান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটি (ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্ত) প্রধানমন্ত্রী জানতেন না। তিনি বলেছেন তাঁর নজরে আনা হয়নি। জীবিকার ব্যবস্থা না করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াটা যৌক্তিক মনে করেননি প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশার যন্ত্রের সঙ্গে উপযুক্ত কাঠামো বা মডেল করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, ওই দিন বিকেল থেকে শনিবার পর্যন্ত ২ হাজার ২৪১টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ২৩৯টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ১১৩টি ইজিবাইক জব্দ করার পর ডাম্পিং করা হয়। চালকদের ভাষ্য, এতে রুটি-রুজির ওপরে আঘাত এসেছে। এর প্রতিবাদে রোববার রাস্তায় নামেন অটোরিকশাচালকরা।
রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন চালকরা। এ সময় মিরপুর ও পল্লবীর কালশীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। বিকেলে কালশীর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ চালকরা। এর আগে সকালে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষাভ করে তারা। এ সময় ১০-১২টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। দীর্ঘ সময় সেখানে যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটে দুর্ভোগে পড়েন অনেকে। থেমে থেমে দিনভর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক বন্ধ করে প্রতিবাদ করে অটোরিকশাচালকরা। তাদের বিক্ষোভের কারণে রাত পর্যন্ত যানজটে দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে।
তবে দেশের ২২টি মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে ডিএমপি থেকে বলা হয়েছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা কোথায় কিভাবে চলবে এ বিষয়ে নির্দেশনার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকার যে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দেবে সেটিই প্রতিপালন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাইনি। তবে মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকবে।সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনার পর আমরা ব্যবস্থা নেব, কোথায় চলবে কোথায় চলবে না।’
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪২ ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক কারাগারে
ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ৪২ জন চালককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আজ সোমবার পৃথক তিন মামলায় তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
বিকেলে ৪২ জন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালককে আদালতে হাজির করে মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুল থানা-পুলিশ। মিরপুর থানার মামলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মইনুল ইসলাম, পল্লবী থানার মামলায় মো. শাকিল আহাম্মদ এবং কাফরুল থানার মামলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আখতারুজ্জামান তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আদালতের প্রসিকিউশন কার্যালয়ের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মিরপুর থানার মামলায় কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন অনিক, মো. আবু বক্কর, মো. আলী হোসেন, মো. সাগর মৃধা, মো. সাহর শেখ, মো. বকুল হোসেন, মো. নুরুল ইসলাম, মো. মাজেদ আলী, মো. মোতাহার হোসেন, মো. দুলু মিয়া ওরফে বুলু, নবী হোসেন, মো. সাহাবুদ্দিন, রুহুল আমিন, মো. জুনায়েদ ও মো. জাকির হোসেন।
পল্লবী থানার মামলায় কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন রানা চৌধুরী, রাসেল, জাকির হোসেন, মেহেদী হাসান, জালাল শরীফ, মো. আব্দুল মোতালেব, মোরসালিন মিয়া, মো. শাহাজাহান মিয়া, মো. রাসেল, মো. ওয়াজিব, আনোয়ার হোসেন, মো. আতাউর রহমান, মো. সুমন, নূর মোহাম্মদ ও শরিফ।
কাফরুল থানায় গ্রেফতার যাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তাঁরা হলেন ফকরুল ইসলাম, কামাল মিয়া, আল আমিন মিয়া, সুপ্ত রায়, ওসমান গণি, শাকিল হোসেন, আব্দুল হামিদ, আজিজুল হক, আমির, শহিদুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম ও রাসেল।