:: কলকাতা প্রতিনিধি ::
কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসের যে ফ্ল্যাটে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করা হয়েছিল সেই ফ্ল্যাটের টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক থেকে ৪ কেজি টুকরো মাংস পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার টয়লেটের সেপটিক ট্যাংকে তল্লাশি চালিয়ে ও সুয়ারেজ পাইপ ভেঙে এই মাংসগুলো উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া মাংসগুলো এমপি আনারের কিনা তা দেখতে ফরেনসিক ল্যাবে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ভূষণ শেখ নামে এক ব্যাক্তি মঙ্গলবার সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করার সময় টুকরো মাংসগুলো উদ্ধার করেন। সঞ্জীবা গার্ডেনসের অপর এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মাংসগুলো ছোট ছোট টুকরো করা। পানির মধ্যে থেকে সেগুলো সাদা হয়ে গেছে। আমাকে কোনো প্রকার ছবি তুলতে দেয়নি।’
ঢাকার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের ঘটনায় ঢাকার মামলায় গ্রেফতার তিন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে লাশ খণ্ড খণ্ড করার বিষয়টি এসেছে। লাশের মাংসের কিছু অংশ বাথরুমের কমোডে ফ্ল্যাশ করে দেওয়ার কথা জানান আসামিরা। এই বর্ণনা অনুযায়ী ধারণা করা যায়, উদ্ধার হওয়া মাংসের টুকরা আনোয়ারুলের হতে পারে।
এর আগে লাশের সন্ধানে গত বৃহস্পতিবার থেকে লাশের সন্ধানে কলকাতার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ভাঙড়ের জিরানগাছা বাগজোলা খালসহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশ। আজও ঢাকার গোয়েন্দা দলের উপস্থিতিতে কলকাতার এ খালে ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। তবে সেখানে লাশের কোনো চিহ্নও পাওয়া যায়নি। যেই অস্ত্র দিয়ে আনারের মরদেহ কাটার কথা বলা হয়েছিল, সেগুলোও উদ্ধার হয়নি।
ঢাকার তদন্তকারীরা জানান, বাংলাদেশে গ্রেফতার তিনজন ও ভারতে গ্রেফতার একজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী লাশ পেতে তল্লাশি চালানো হয়। আজ কলকাতা পুলিশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গ্রুপের (ডিএমজি) সহায়তায় দেহাংশ খোঁজা হয়। বাগজোলা খালের দুই পাশ থেকে মাছ ধরার জাল ফেলে চলে তল্লাশি অভিযান। খালটি প্রশস্ত হওয়ায় নৌকায় চড়ে জাল ফেলেও খোঁজা হয় লাশ।
ঢাকার ডিবি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। কলকাতা পুলিশের সঙ্গেও আমরা তথ্য বিনিময় করছি। এর মাধ্যমে আশা করছি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।’
এর আগে মঙ্গলবার কলকাতা সিআইডিকে আনারের দেহাংশের খোঁজে সঞ্জীবা গার্ডেনসের সেই ফ্ল্যাটের কমোড, স্যুয়ারেজ লাইন ভেঙে অনুসন্ধান করার অনুরোধ করেন ঢাকার ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ। পাশাপাশি হাতিশালা লেকও অনুসন্ধানের অনুরোধ করেন তিনি।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে স্বর্ণ ব্যবসায়ী এক বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন এমপি আনার।
বাড়ি থেকে বের হওয়ার পাঁচদিন পর গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম আনারের নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। বুধবার হঠাৎ খবর ছড়ায় কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে আনোয়ারুল আজীম আনার খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে সেখানে তার মরদেহ মেলেনি।
আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে খুন হওয়ার ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় মামলাটি করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।