:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বড় চমক দেখিয়েছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোট ‘ইন্ডিয়া’। তারা ক্ষমতাসীন বিজেপির জোট ‘এনডিএ’-এর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছে। জোটটি অনানুষ্ঠানিকভাবে ২৩১টি আসনে জয় পেয়েছে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদির বিজেপির ‘এনডিএ’ জোট পেয়েছে ২৯৪টি আসন।
একক দল হিসেবে বিজেপি পেয়েছে ২৪০টি আসন। যার অর্থ তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে একা ২৭২টি আসনে জয় পেতে হবে।
বিজেপিকে সরকার গঠনে তাদের এবার জোটের শরীক দলগুলোর ওপর নির্ভর করতে হবে। এই বিষয়টিরই সুবিধা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে কংগ্রেস। তারা মোদির জোট ভেঙে সরকার গঠনের চেষ্টা চালাবে।
কংগ্রেস জোটভুক্ত রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদবের সঙ্গে একই বিমানে দিল্লির পথে উড়াল দিলেন নীতিশ কুমার। তাতে গুঞ্জনের ডালপালা আরও বিস্তৃত হচ্ছে। ইন্ডিয়া জোটের সাবেক শরীক নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুকে ফেরাতে পারলে দিল্লির মসনদে হতে পারে রদবদল।
এনডিটিভি জানিয়েছে, কংগ্রেসের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন সরকার গঠনের উদ্দেশ্যে তারা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং তেলেগু দিসাম পার্টির প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে কথা বলবেন— এ দুজনই মোদির বিজেপি দলের মিত্র।
‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতা উদ্ভব ঠাকরে প্রথম নেতা হিসেবে জনসম্মুখে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কংগ্রেস তাদের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী।
কংগ্রেসের অপর জ্যেষ্ঠ নেতা সালমান খুরশিদ এ ব্যাপারে কিছুটা সতর্কতা বজায় রেখে বলেছেন, “আমরা আমাদের সব মিত্র এবং অন্যদের নিয়ে একটি স্থিতিশীল সরকার গঠনে কাজ করব।” এই সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়েছে কারণ দুই জোটের মধ্যে ব্যবধান খুবই কম।
মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত যেসব ফলাফল পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যত আসন প্রয়োজন ‘এনডিএ’ জোট তার চেয়ে মাত্র ২০টি আসন বেশি পাবে।
নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর দল মিলে ২৮টি আসন পেয়েছে বলে অনানুষ্ঠানিক ফলাফলে দেখা গেছে।
যদি এ দুজন বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে এবং ‘ইন্ডিয়া’-র সঙ্গে যোগ দেয় তাহলে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন এ জোটের আসন সংখ্যা দাঁড়াবে ২৬০ এ। অপরদিকে বিজেপির ‘এনডিএ’ জোটের আসন সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ২৬০ এ।
তখন দুই জোটেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতার ম্যাজিক ফিগার ২৭২ থেকে ১২ আসন কম থাকবে। আর এই বিষয়টি তখন পূরণ করতে পারবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা সরকার গঠনে সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে পারে।
বুধবার ‘ইন্ডিয়া’ জোট দিল্লিতে বৈঠক করতে যাচ্ছে। তাদের বৈঠকে এ বিষয়টি থাকবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জোট পরিবর্তন করার জন্য ‘অখ্যাতি’ রয়েছে। তিনি গত গত ১০ বছরে পাঁচবার জোট পরিবর্তন করেছেন। সর্বশেষটি করেছেন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। ওই মাসে তিনি ‘ইনডিয়া’ জোট ছেড়ে মোদির ‘এনডিএ’-তে যোগ দিয়েছিলেন।
অপরদিকে বাবুচন্দ্র নাইডু ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগ মুহূর্তে মোদির জোট ছেড়ে দিয়েছিলেন। এরপর এবারের নির্বাচনের আগে আবার জোটটিতে যোগ দেন তিনি।
এই অবস্থায়ও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়ার পক্ষে জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা আছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। এই সম্ভাবনা মূলত বিহারের জনতা দল (ইউনাইটেড) ও তেলেগু দেশাম পার্টিকে যদি জোটটি নিজেদের পক্ষপুটে আনতে পারে তবেই বাস্তবায়ন সম্ভব। বাস্তবে এ দুটি দলই মূলত ‘কিং মেকারের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ দুটি দল ছাড়া খোদ বিজেপিও একা সরকার গঠন করতে পারবে না।
নিতীশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নাইড়ুর টিডিপির মোট আসনসংখ্যা ২৮। সে ক্ষেত্রে এ দুটি দল বিজেপির এনডিএ জোট থেকে বের হয়ে এলে জোটের আসনসংখ্যা হবে ২৬৭, যা সরকার গঠনের চেয়ে মাত্র ৫টি আসন কম। বিপরীতে এই দুটি দল ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিলেও তাদের আসন হবে ২৫৯। তার পরও আরও ১৩টি আসন বাকি থাকবে সরকার গঠনের জন্য।
এ ক্ষেত্রে বাকি যে দলগুলো বা স্বতন্ত্র (১৭টি) প্রার্থীরা আছেন, তাঁরা ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিলে তাদের জন্য সরকার গঠন সম্ভব হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইন্ডিয়া জোটের আসন হবে ২৭৬টি। তবে যেই সরকার গঠন করুক না কেন, ভারতের আগামী লোকসভা একটি ‘হ্যাং পার্লামেন্ট’ বা ঝুলন্ত সংসদ হতে যাচ্ছে।
কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন করবে, নাকি বিরোধী দলের সিটেই থাকবে তা নিয়ে আজ বুধবার সিদ্ধান্ত হবে। জোটের নেতারা আজ বৈঠক করবেন। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সরকার গঠন বা বিরোধী দলে থাকার বিষয়টি। বিহারের নিতীশ কুমারের দল জনতা দল (ইউনাইটেড) এবং চন্দ্রবাবু নাইড়ুর তেলেগু দেশাম পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে কি না, সে বিষয়েও সিদ্ধান্তে নেওয়া হবে আজ।
ঠিক এমনটাই ভাবছেন কংগ্রেসের পোস্টারবয় রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছেন, ‘যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা সর্বসম্মতভাবেই নেওয়া হবে।’ নিতীশ ও চন্দ্রবাবুর দলের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি ইঙ্গিত করে রাহুল বলেন, ‘এটি খুবই ভালো বিষয় হবে।’ গতকাল মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘আজ হয়তো আমাদের কাছে (জোট গঠনের সিদ্ধান্ত) কোনো জবাব নেই, তবে কাল আমরা জবাব পেয়ে যাব।’
সোজা কথায় রাহুল গান্ধী বিষয়টিকে উড়িয়ে দেননি। প্রায়ই একই ধরনের অবস্থান ইন্ডিয়া জোটের অংশীদার ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির নেতা শারদ পাওয়ারের। তিনি বলেছেন, তিনি এখনো চন্দ্রবাবু নাইড়ু বা নিতীশ কুমারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেননি। তবে কংগ্রেসের প্রধান মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে কথা বলার পর এবং আজকের বৈঠকের পর তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন।
শারদ পাওয়ারের কথা থেকে এটি স্পষ্ট যে, ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন বা বিরোধী দলে থাকার বিষয়টি নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত না নিলেও তাঁরা সরকার গঠনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি। তবে রাহুল সরকার গঠন বা বিরোধী দলে থাকার বিষয়টি নিয়ে রাখঢাক করলেও শিব সেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন। উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া জোটকে অবশ্যই সরকার গঠনের ক্ষেত্রে দাবি রাখতে হবে।’ এ সময় তিনি আরও জানান, আজকের বৈঠকে বিষয়টি এজেন্ডায় রাখবেন।