:: সামছুদ্দোহা সাফায়েত ::
গল্প বলা বা স্টোরিটেলিং [Storytelling], বিজ্ঞাপনের মূল বিষয়ই হলো ”দ্য আর্ট অফ স্টোরিটেলিং”। পুঁজিবাদ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্র্যান্ডগুলো তার বেশিরভাগ স্টোরিটেলিং করে থাকেন বিজ্ঞাপন দিয়ে। বিজ্ঞাপন আধুনিক সময়ের একটি বহুল ব্যবহৃত বিপণন কৌশল! যার মাধ্যমে চিহ্নিত গ্রাহক বা ভোক্তাকে পণ্যের সঠিক বার্তা পৌঁছানো হয়। যা পণ্যের বা সেবার ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়াতে, ব্র্যান্ড পার্সোনালিটি তৈরি, বিক্রয় প্রসার এবং জনসংযোগ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
বিপণনের অনেকগুলো ধরন বা শাখা চলমান। তারপরও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাবনা ও কৌশল আবিষ্কৃত হচ্ছে যা গ্রাহকে আরো আকর্ষণ করতে পারে এবং দীর্ঘ সময় গ্রাহকে বড়শির মতো বিঁধে রাখতে পারে।
অনেকগুলো ধরনের একটি ধরন হচ্ছে RTM: Real Time Marketing! আমাদের মাঝে যারা বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও ব্র্যান্ড মার্কেটিং নিয়ে কাজ করেন তাদের কাছে এই বিষয়টা বেশ পরিচিত। RTM এর ধারনাটা তুলনামূলক বিজ্ঞাপনের কিছুটা আধুনিক রূপ। ৯০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে এর ধারনা শুরু হয়ে ২০০০ এর পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাবের সাথে এর ব্যবহারিক রূপ বিস্ফোরিত হয়।
রিয়েল-টাইম মার্কেটিং হলো এক ধরনের গতিশীলভাবে তৈরি বিষয়বস্তু যা প্রধান সংবাদ বা প্রচলিত প্রবণতা থেকে প্রাপ্ত। এটি একটি বিষয়বস্তু বিপণন কৌশল যা বুদ্ধি, সৃজনশীলতা এবং চলমান ইভেন্টগুলির দ্রুত প্রতিক্রিয়াকে একত্রিত করে। এর মাধ্যমে, ব্র্যান্ডকে একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপটে ফেলে দেয়া হয় – যার সম্পর্কে সবাই কথা বলে। এটির সরাসরি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার উপর বেশ প্রভাব থাকে।
বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কেমন যাচ্ছে? অনেক কিছুতে না গিয়ে শুধু ২টা বিষয় উপস্থাপন করি-
১. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ১৩ জন স্নাতকে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের কারণে তাদের ডিগ্রি প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং এর শেষ স্নাতক অনুষ্ঠান থেকে ব্যাপক ছাত্র-ছাত্রী ওয়াকআউট করেছে।
২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি ২০২৪ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হলে কলেজ ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভ দমন করবেন। এমনকি বিক্ষোভকারীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করবেন।
এই দুটি উদাহরণ থেকেই বোঝা যায় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল সহ জাতীয় পর্যায়ে মানুষের মন-মানসিক আবস্থা।
সমসাময়িক এই অবস্থায় কোকা-কোলা একটা বিজ্ঞাপন তৈরি করেছেন তাদের ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়াতে! যা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছে! এর আগেও দেশ জুড়ে এই ইস্যুতে বয়কটের মুখে পড়ে বিক্রি কমে গেছে কোকাকোলার। বাংলাদেশে কোকাকোলার পরিবর্তে মানুষ দেশীয় ব্র্যান্ডগুলো খুঁজে নিচ্ছে। শুধু কোকা-কোলা নয় আন্তর্জাতিক বাজারে বিখ্যাত ফাস্ট ফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ডস, কফিশপ স্টারবাকসের একই অবস্থা। সবাই বিক্রিতে বেশ বড়সড় ধাক্কা খাচ্ছে।
অনেকে বলছেন কোক এটা ইচ্ছে করে (নেগেটিভ মার্কেটিং) করেছে, কৌশলগত উপস্থাপন! সাইকোলজিক্যাল গেইম, মানুষের মনে দাগ কাটার জন্য!
কোকা-কোলার মতো গ্লোবাল ব্র্যান্ড কিভাবে এমন উপস্থাপন করতে পারে, তার প্রশ্ন এখন বিপণন ও বিজ্ঞাপন পাড়ার জনে জনে…
সবচেয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে এই ডায়লগ গুলো:
”এমনকি ফিলিস্তিনে কোকাকোলার ফ্যাক্টরি রয়েছে।”
”কোকে একটা ঢোক দেন… তারপর একটা সার্চ দেন।”
বিভ্রান্ত না হয়ে গুগলে সার্চ দিয়ে নিশ্চিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিজ্ঞাপনটিতে।
যদিও ঢোক না দিয়েই সার্চ বেশি দিচ্ছে মানুষ!
সৃজনশীলতা, রূপকল্প এবং দক্ষতা হয়তো সব কিছুই ছিলো কিন্তু যাদের উদ্যেশে গল্পটা বলা হবে তাদের প্রতি কি যত্নটা ছিলো?
কোক কি বিজ্ঞাপনে গল্প বলতে পেরেছে?
লেখক: ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন প্রফেশনাল, ভিজ্যুয়াল শিল্পী ও প্রশিক্ষক