:: কুটনৈতিক প্রতিবেদক ::
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে ঢাকা ও নয়াদিল্লি। এসব স্মারকের মধ্যে সাতটিই নতুন। তিনটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে।
শনিবার নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও দুই দেশের প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর এসব সমঝোতা স্মারক সই হয়। দুই দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ভারত বাংলাদেশকে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে চাপ দিচ্ছে। সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ ভারতের এ দাবিতে নীতিগতভাবে রাজি হলেও কীভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী দুই দেশের নাগরিকদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়ে থাকবে। এতে দুই দেশের নাগরিকরা সরাসরি কাজ ও চাকরির সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের শ্রমবাজার ভারতীয় নাগরিকদের জন্য খুলে দেওয়া হলে তাদের নাগরিকরা বাংলাদেশে সব ধরনের কাজ করতে পারবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অভিযোগ আছে ছয় লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে অবৈধভাবে কাজ করে। যাদের বেশিরভাগই ভ্রমণ ভিসায় এসে কাজ করছেন। এদের বৈধ করার পাশাপাশি ভারতীয়দের নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির জন্য এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভারত বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ সরকারকে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার বিষয়ে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু সরকারিভাবে ভারতীয়দের বাংলাদেশে চাকরির সুযোগ দিলে বাংলাদেশিদের চাকরির সুযোগ কমবে, অনেকে চাকরি হারাবে এবং এতে বেকারত্ব বাড়বে।
তারা আরো বলছেন, ভারতে বাংলাদেশিরা চাকরির সুযোগ কতটা পাবে, সে প্রশ্নও রয়েছে। এখানে কারিগরি, ভাষাগত দক্ষতার বিষয়গুলোও রয়েছে।
এদিকে শনিবার দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারতের প্রধানমনত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে বলেছেন, নতুন নতুন ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার জন্য একটি ভবিষ্যতমুখী ভিশন তৈরি করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, নীল অর্থনীতির (ব্লু ইকোনমি) নামে মোংলা ও পায়রা বন্দর ব্যবহারে জন্য ভারত দাবি জানিয়েছে। ভারতের এ আব্দার অনেক পুরানো হলেও বাংলাদেশ অনেকদিন ধরে এটা নিয়ে ইতস্তত করছিল চীনের কারণে।
এর আগে মোংলা বন্দরে বিনিয়োগের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার চীনের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা নিয়েছে। আর মোংলা বন্দরে একটি টার্মিনাল নির্মাণের কথা বিবেচনা করছে ভারত।
দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে সংযোগ, জ্বালানি, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, সমুদ্রসম্পদ, বাণিজ্য, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন অংশীদারত্ব প্রাধান্য পায়। পরে দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক হয়। এরপর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সমুদ্র অর্থনীতি ও সামুদ্রিক সহযোগিতা, রেলওয়ে, সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, একাডেমিক সহযোগিতা, মৎস্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক বিনিময় প্রত্যক্ষ করেন।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের সাতটি নতুন সমঝোতা স্মারকের মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সমুদ্র অর্থনীতি ও সমুদ্র সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারত মহাসাগরে সমুদ্রবিজ্ঞান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যৌথ গবেষণার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) এবং ভারতের কাউন্সিল অব সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (সিএসআইআর) মধ্যে আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ডিজিটাল পার্টনারশিপের দুটি পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি ও একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ভারত-বাংলাদেশ সবুজ অংশীদারত্বের অভিন্ন ভিশন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে রেল সংযোগের একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছে।
একটি যৌথ ক্ষুদ্র উপগ্রহ প্রকল্পে সহযোগিতার লক্ষ্যে ভারতের জাতীয় মহাকাশ প্রচার ও অনুমোদন কেন্দ্র (ইন-স্পেস) ও মহাকাশ বিভাগ, ভারত প্রজাতন্ত্রের সরকার, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ (ডিএসসিসি), ওয়েলিংটন ও ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) মিরপুরের মধ্যে কৌশলগত ও অপারেশনাল স্টাডিজ’র ক্ষেত্রে সামরিক শিক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়।
তিনটি নবায়নকৃত সমঝোতা স্মারক হলো-মৎস্য সহযোগিতা স্মারক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্মারক এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধের সহযোগিতার ক্ষেত্রবিষয়ক সমঝোতা স্মারক।
নতুন ৭টি সমঝোতা স্মারক
* বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সমুদ্র অর্থনীতি ও সমুদ্র সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
* ভারত মহাসাগরে সমুদ্রবিজ্ঞান ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে যৌথ গবেষণার জন্য বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) এবং ভারতের বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলের (সিএসআইআর) মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
* ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রেল সংযোগ নিয়ে সমঝোতা স্মারক ছাড়াও ভারত-বাংলাদেশ ডিজিটাল পার্টনারশিপ এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ভারত-বাংলাদেশ সবুজ অংশীদারত্ব বিষয়ে ‘শেয়ার্ড ভিশন’ স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
* যৌথ ক্ষুদ্র উপগ্রহ প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য ভারতীয় জাতীয় মহাকাশ প্রচার ও অনুমোদন কেন্দ্র (IN-SPACE) ও ভারতের মহাকাশ বিভাগ এবং বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
* ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজ (ডিএসসিসি), ওয়েলিংটন এবং ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) মিরপুরের মধ্যে কৌশলগত ও পরিচালনগত ক্ষেত্রে সামরিক শিক্ষাসংক্রান্ত সহযোগিতার জন্য সমঝোতা স্মারক।
* এ ছাড়া তিনটি নবায়নকৃত সমঝোতা স্মারক হলো—মৎস্য খাতে সহযোগিতা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধের ক্ষেত্রে সহযোগিতা।