:: ক্রীড়া ডেস্ক ::
ক্রিকেটে বৃষ্টি আইনকে সংক্ষেপে বলে ডিএল মেথড। বিস্তার করলে হয় ডাকওয়ার্থ লুইস মেথড (ডিএলএস)। এই বৃষ্টি আইনের একজন আবিষ্কারকের নাম ফ্র্যাঙ্ক ডাকওয়ার্থ। শুক্রবার তিনি ৮৪ বছর বয়সে মারা গেছেন।
এর আগে তার অন্যতম সহযোগী ও নিয়মটির আরেক প্রবর্তক টনি লুইস ২০২০ সালের এপ্রিলে ৭৮ বছর বয়সে মারা যান। এবার আরও এক ক্রিকেটীয় আইনপ্রণেতার মৃত্যু হয়ে গেল। ওই নিয়মে আরও একজন অংশীদার আছেন, তিনি হচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার পরিসংখ্যানবিদ স্টিভেন স্টার্ন। ফলে তিনজনের নাম মিলিয়ে নিয়মটি দাঁড়িয়েছে ‘ডাকওয়ার্থ লুইস স্টার্ন’ নামে।
ডাকওয়ার্থ তাঁর বন্ধু টনি লুইসের সঙ্গে মিলে তিনি ক্রিকেটে নতুন নিয়ম প্রবর্তন করেন। তার আইন প্রয়োগ করে বৃষ্টির উপদ্রবে সংক্ষিপ্ত হওয়া অনেক ক্রিকেট ম্যাচের ফল দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। তারাই প্রথম প্রস্তাব করেন, বৃষ্টির কারণে যদি ম্যাচে ওভার কমে, তা হলে খেলার হিসাব বা নিয়ম কী হবে? আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) নব্বইয়ের দশকে প্রথমবার ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়ম চালু করে ক্রিকেটে।
সবচেয়ে বিপর্যয়কর উদাহরণটি ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে। ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে কপাল পুড়েছিল প্রোটিয়াদের। বৃষ্টির আগে দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল ১৩ বলে ২২ রান। বৃষ্টি থামার পর তাদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১ বলে ২১ রান। ২ ওভার কমিয়ে রান কমানো হয় মাত্র একটি। ডাকওয়ার্থ নিজের বইয়ে লেখেন, ‘আমি রেডিওতে শুনছিলাম, ধারাভাষ্যকার বলছেন, নিশ্চয়ই কেউ আরও ভালো, আরও কার্যকর কোনো আইডিয়া নিয়ে আসবেন, আমি তখন গাণিতিক সমস্যাটা অনুধাবন করি।’
প্রাথমিকভাবে ১৯৯৭ সালে প্রথম ডিএলএস পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় ক্রিকেট ম্যাচে। তারও আগে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সতীর্থ গণিতবিদ ফ্র্যাঙ্ক ডাকওয়ার্থকে সঙ্গে নিয়ে ক্রিকেটে বৃষ্টির প্রভাব কমিয়ে আনার জন্য ওই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন টনি লুইস। তাদের দুইজনের নামের শেষাংশ থেকেই এর নামকরণ করা হয় ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথড। প্রায় দুই বছর পরীক্ষামূলকভাবে দেখার পর ১৯৯৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথড গ্রহণ করে আইসিসি। ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি সর্বপ্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে এই নিয়মের ব্যবহার হয়েছিল।
ক্রিকেট ম্যাচে নিয়মটির প্রভাব পড়তে শুরু করে ধীরে ধীরে। তবে ২০০৬ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আবিষ্কারের পর এই নিয়মের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। কেননা সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে উইকেটের সঙ্গে রানের ভারসাম্য রেখে খেলার কথা খুব কম দলই ভাবে। সমস্যা হয়েছে মূলত টনি-ফ্র্যাঙ্ক যখন তাদের নিয়ম আবিষ্কার করেন, তখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছিল না। ফলে এ বিষয় মাথায় রাখেননি তারা। পরে এর সমাধান করেন স্টিভেন স্টার্ন। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান এই অধ্যাপক আরও কার্যকরীভাবে এই নিয়মের হালনাগাদ করেন। যার ফলে এখন এটি ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন মেথড বা সংক্ষেপে ডিএলএস মেথড নামেই পরিচিত।
বৃষ্টি আইন প্রণয়নের কারণে ২০১০ সালের জুন মাসে ডাকওয়ার্থ ও লুইস দুজনকেই এমবিই (মেম্বার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) সম্মান দেওয়া হয়। ক্রিকেটে ডিএলএস নিয়মে খেলার ভাগ্য বদল হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে। যতদিন ক্রিকেট থাকবে, হয়তো উদাহরণ বাড়তেই থাকবে।
সেই ঘটনার অনেক পরে ২০১৪ সালে এ নিয়মের সংস্কার করা হয়। নতুন নিয়মের নাম ডাকওয়ার্থ লুইস স্টার্ন (ডিএলএস)। ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মে কিছু বদল করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার রাশিবিজ্ঞানী স্টিভেন স্টার্ন। সে কারণে আইনের সঙ্গে তার নামও যোগ করা হয়।
চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের ওপর নির্ভর করছিল তিনটি দলের ভাগ্য। সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার। ম্যাচ চলাকালীন তিনবার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত ডাকওয়ার্থ লুইস নিয়মে বাংলাদেশকে ৮ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে আফগানিস্তান।