:: নাগরিক বিনোদন ::
বিটিভিতে ১৯৯৯ সালে সম্প্রচারিত হুমায়ূন আহমেদের লেখা জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘আজ রবিবার’-এর নির্মাতা মনির হোসেন জীবন মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।
মৃত্যুকালে স্ত্রী ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।
বুধবার (২৬ জুন) দিবাগত রাত ১২টা ৫৩ মিনিটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
জীবনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাট্য নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান সাগর।
কামরুজ্জামান সাগর জানান, ব্রেইন স্ট্রোক করেছিলেন মনির হোসেন জীবন। পরে তাঁকে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন জীবন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জীবনের মরদেহ রাখা হয়। সেখানেই অনুষ্ঠিত হয় তাঁর প্রথম জানাজা। পরে তাঁর লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার মনোহরদীতে রওনা দিয়েছে তাঁর পরিবার। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে জীবনকে।
মনির হোসেনের মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাখা হবে। শ্রদ্ধা শেষে বেলা ১১টায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে মরহুমের মরদেহ পিতৃনিবাস নরসিংদীর মনোহরদীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় সমাহিত করা হবে তাকে।
১৯৯৩ সালে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে পরিচয় মনির হোসেন জীবনের। তার ‘আগুনের পরশমণি’ সিনেমাতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন মনির হোসেন। পরে ‘নক্ষত্রের রাত’ নাটকে প্রধান সহকারী হিসেবে কাজ করেন তিনি। ১৯৯৯ সালে ‘আজ রবিবার’ নাটক দিয়েই টিভি মিডিয়াতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন মনির হোসেন জীবন। এরপর অসংখ্য নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি।
মনির হোসেন ১৯৬৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মনোহরদীর কুতুবদী (বড় বাড়ী) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এম এ আজিজ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি আশির দশকে বাংলাদেশ আনসার দলের খেলোয়াড় ছিলেন। পাশাপাশি বিনোদন চর্চা করতেন ঊদিচী শিল্পী গোষ্ঠিতে।
১৯৯০ সালে চাচা চলচ্চিত্র পরিচালক বদিউল আলম খোকনের হাত ধরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বিটিভির প্রথম প্যাকেজ ধারাবাহিক নাটক মামুনুর রশিদের ‘শিল্পী’ এবং হুমায়ূন আহমেদের ‘নক্ষত্রের রাত’ নাটকের প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন মনির হোসেন জীবন। তাঁর কাজের এবং মেধার দক্ষতা দেখে হুমায়ূন আহমেদ তাঁকে ‘নুহাশ চলচ্চিত্রের’ প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেন।
২০০০ সাল থেকে মনির হোসেন জীবন তার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘স্বাধীন চলচ্চিত্র’ গঠন করেন। তার প্রযোজনা সংস্থা থেকে তিনি অসংখ্য একক নাটক নির্মাণ করেন। এর মধ্যে ‘সাদা কাগজ’, ‘বন্যার চোখে জল’, ‘অপ্রত্যাশিত প্রত্যাশা’, ‘অতঃপর নিঃস্বঙ্গতা’, ‘একজন ময়না’, ‘গানম্যান’, ‘বিবাহ সংকট’, ‘কোরবান আলীর কোরবানী’ উল্লেখযোগ্য।
আলোচিত টেলিফিল্মের মধ্যে ‘কালা গলার মালা’, ‘ঢুলি বাড়ী’, ‘হতাই’, ‘ফজর আলী’, ‘অজ্ঞান পার্টি’, ‘তুচ্ছ’, ‘কথা আছে’, ‘বংশ প্রদীপ’, ‘অহম’, ‘বাঙ্গালির বিয়ে’, ‘নিজের সংগে দেখা’, ‘তুমি এলে তাই’, ‘ফোর ষ্টুপিড’ সহ প্রচুর টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছেন মনির হোসেন জীবন।
আলোচিত ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে ‘চোর কাঁটা’, ‘আলী বাবা চল্লিশ স্মাগলার’, ‘অভিমানী’, ‘ফৈজু কবিরাজ’, ‘সেই করেছো ভাল’, ‘নীল ছায়া’, ‘খন্ডচিত্র’, ‘গুজব’, ‘ভবের মানুষ’, ‘ফটিক চোর না সবাই’। এছাড়া ‘গুনীন’, ‘আগন্তুক’, ‘থানার নাম শনির আখড়া’ সহ অসংখ্য ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি।
শর্টফিল্ম ‘বাঁচার জন্য’, ‘গম্ভীরা’, ‘আর্সেনিক’, ‘দ্যা রিপোর্টার’, ‘লেডি মাস্তান’, ‘সেনিটারি লেট্রিন ছাড়া কোন গতি নাই’, ‘শিক্ষার আলো’ সহ বেশকিছু শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেন।
এছাড়াও অসংখ্য প্রামান্যচিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘প্রাথমিক ও গনশিক্ষা’, ‘ক্ষুদ্ররিন’, ‘ওয়াটার চুল্লি’, ‘এক চাবিতে তিন দরজা’, ‘বিষের নাম আর্সেনিক’, ‘সেনিটারী লেট্রিন’, ‘ঢাকা ওয়াশা’, ‘মধুমতি মডেল টাউন’, ‘মশা’, ‘পুলিশ ডকুমেন্টরী’, ‘বিবিএস কেবলস’, ‘নাহি এসএস পাইপ’, ‘নাহি জিও টেক্সটাইল’, ‘ডায়নামিক কার’ সহ অসংখ্য এভি নির্মাণ করেছেন।
আর দর্শক নন্দিত বিভিন্ন কোম্পানীর প্রচুর বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাণ করেছেন যা অনেক আলোচিত হয়েছে। মিডিয়াতে ৩০ বছর ধরে অত্যন্ত সুনাম এবং দক্ষতার সহিত কাজ করে গেছেন।
মনির হোসেন জীবন তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মেরিল প্রথম আলোসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।