:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয় স্কিম’-এর প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে।
সোমবার (১ জুলাই) কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের দাবি হলো তিনটি। এগুলো হলো প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল।
রোববার (৩০ জুন) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মূল ফটকে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতির মোর্চা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, আমরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছি। সারা দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এতে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। সরকারের কাছে আমরা তিনটি দাবি জানিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।
একই দাবিতে রোববার (৩০ জুন) পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এত দিন কর্মবিরতিতে পরীক্ষা এর আওতার বাইরে ছিল। কিন্তু ১ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ দাপ্তরিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন শিক্ষকেরা।
সর্বাত্মক কর্মবিরতির ডাক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিরও। একই দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও।
শিক্ষক সমিতির গতকালের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়— সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক পূর্ণদিবস কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পিজিডি প্রোগ্রামের সকল কার্যক্রম ও ক্লাস বন্ধ থাকবে, সকল প্রকার পরীক্ষা বর্জন করা হবে, ডিন অফিস, চেয়ারম্যান অফিস, সেমিনার বন্ধ থাকবে, প্রশ্নপত্র মডারেশন, নিয়োগ ও সিলেকশন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে না, ইন্সটিটিউটের সকল কার্যক্রম- অফিস, ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ থাকবে, বিভিন্ন গবেষণামূলক কার্যক্রম, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, কনফারেন্স ও ওয়ার্কশপ বন্ধ থাকবে। এছাড়াও গ্রন্থাগার অফিস ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাঠক সেবা বন্ধ থাকবে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শিক্ষক সমিতি অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, ‘প্রত্যয়’ পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা (দুটির মধ্যে যেটি কম) বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে। এর সঙ্গে সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা। এই অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপরীতে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের অ্যাকাউন্টে জমা হবে। যেমন, এ স্কিমে ৩০ বছর মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে চাঁদা দিলে একজনের বেতন থেকে যাবে ৯ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সংস্থা জমা করবে আরও ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর মোট চাঁদা হবে ১৮ লাখ টাকা। জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ও মেয়াদের ভিত্তিতে অবসরকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী পেনশন ভোগ করবেন। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি যদি ৭৫ বছর বয়সে মারা যান, তাহলে অবসরের ১৫ বছরে পেনশন পাবেন ১ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ টাকা, যা তার জমার ১২ দশমিক ৪৭ গুণ। বলা হচ্ছে, এই পেনশন কর্মসূচি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় এর অর্থ আয়করমুক্ত, শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ।
তবে সিদ্ধান্তটিকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে এর বিরোধিতা করছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। তাদের বিরোধিতার জায়গাটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তাদের বক্তব্যকে আমলে নেওয়া দরকার। গত দু’মাসে বেশ কয়েক দফা কর্মবিরতিও পালন করেছেন তারা। তবে সোমবার থেকে এ কর্মবিরতি অনির্দিষ্টকালের জন্য শুরু হয়েছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধসহ ‘প্রত্যয়’ স্কিম প্রত্যাহারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ৯টি কর্মসূচি দিয়েছে। এর আগের দিনও পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা।
শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে সেশনজট তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ শঙ্কার যৌক্তিকতাও রয়েছে, কারণ গত দু’মাসে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করলেও পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এবারের কর্মসূচিতে ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে। বন্যাসহ নানা কারণে এমনিতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একাডেমিক ক্যালেন্ডার পিছিয়ে গেছে, তার ওপর শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি যে শিক্ষার্থীদের পাঠগ্রহণকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তা বলাই বাহুল্য।
আমরা মনে করি, শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থা দীর্ঘ হওয়া সমীচীন নয়। এ পেনশন স্কিম আসলেই বৈষম্যমূলক কিনা কিংবা এর মাধ্যমে শিক্ষিত জাতি গড়ার কারিগরদের সুযোগ-সুবিধা আসলেই হ্রাস পাচ্ছে কিনা, তা শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের খতিয়ে দেখা উচিত। আশার কথা, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। আমরা আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার আশু সমাধান হবে।
বন্ধ গ্রন্থাগারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ
সকালে ঢাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পড়াশোনা করতে আসেন অনেক শিক্ষার্থী। গেট বন্ধ পেয়ে তারা অপেক্ষা করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় গ্রন্থাগারের গেট না খোলায় তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গেটে ধাক্কাধাক্কি করেন। এতে গ্রন্থাগারের গেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনে লাইব্রেরি কেন বন্ধ থাকবে? গ্রন্থাগার বন্ধ থাকলে লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হবে।’
ঢাবি মেডিকেল সেন্টারের হোমিওপ্যাথি বিভাগে সেবা না পেয়ে ফিরে আসার অভিযোগ করেন কয়েক শিক্ষার্থী। তবে চক্ষু-দন্তসহ অন্যান্য বিভাগ চালু রয়েছে।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন খোকা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মেডিকেল সেবা বন্ধ ছিল না। কেউ এভাবে হাসপাতাল সেবা বন্ধ করে না।’ বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুজাব আলীর অভিযোগ, কর্মবিরতির কারণে তাঁকে সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন হোমিওপ্যাথি বিভাগের চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে হোমিওপ্যাথি বিভাগের চিকিৎসক হালিমা সাদিয়া বলেন, ‘যখন কর্মবিরতি শেষ হবে তখনই সেবা পাওয়া যাবে।’ প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. তানভীর আলী বলেন, ‘জরুরি বিভাগগুলো চালু রয়েছে। হোমিওপ্যাথি বিভাগের ডাক্তার হয়তো বুঝতে পারেননি। তাঁকে সতর্ক করা হবে।’
কর্মবিরতির কারণে বন্ধ রয়েছে ঢাবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের কার্যক্রম। ‘কর্মবিরতি’ পোস্টার লাগিয়ে কিছু কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। দূরদূরান্ত থেকে এসে অনেকে অপেক্ষা করছেন।
অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল পরীক্ষা স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল পরীক্ষা স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কলাভবন ও কার্জন হল কেন্দ্রের পরীক্ষাগুলো বর্জন করা হয়। তিনি জানান, অন্যান্য পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো স্ব স্ব অনুষদ, ইনস্টিটিউটের অধীন। যেহেতু সকল শিক্ষক কর্মবিরতিতে, তাই এটি বলা যায় সেখানেও পরীক্ষা হবে না।
সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, বিভিন্ন কমিটির সভা বর্জন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধসহ ১০টি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে তারা। একইসঙ্গে কর্মসূচি চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল ভবনের নিচে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
এদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলাম বলেন, আমরা এই আন্দোলন নিজেদের জন্য করছি না। বরং আগামী প্রজন্মের জন্য করছি। দেশে এত দুর্নীতির কথা আমরা শুনি। সেসব কী শিক্ষকরা করেছে? তাহলে কেন তাদের সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এই প্রত্যয় স্কিম বৈষম্যমূলক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমরা তিন মাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। প্রথমে মানববন্ধন করেছি; এক ঘণ্টার কর্মবিরতি, দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি দিয়েছি। পরে অর্ধদিবস, পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছি। তখন পরীক্ষা চলমান ছিল। কিন্তু আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য আমরা আন্দোলন করছি। কারণ, আমাদের যেটুকু সুবিধা ছিল, সেটুকু বাতিল হলে এই পেশায় আর মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসবে না। মেধাবীরা শিক্ষকতায় না এলে জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
রাবি-রুয়েট: সরকারি চাকরিতে সর্বজনীন পেনশন নীতিমালা ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মসূচি পালন চলছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্লাস-পরীক্ষা ও দাফতরিক কার্যক্রম বর্জনে গতকাল ক্যাম্পাসে শাটডাউন পরিস্থিতি বিরাজ করে। রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, দাবি আদায়ে শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না দাবি আদায় হচ্ছে, আন্দোলন চলবে। রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা রাস্তায় নেমেছেন। যা মোটেও কাম্য ছিল না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। অনিবার্য কারণ দেখিয়ে স্নাতক প্রথমবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা চলছে। অনেক বিভাগে চলতি মাসে পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বাত্মক কর্মসূচির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বশেমুরকৃবি : প্রত্যয় স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস, পরীক্ষা, সভা, সেমিনার বন্ধ থাকবে বলে বশেমুরকৃবি শিক্ষকরা জানান। বশেমুরকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. অহিদুজ্জামান, অনতিবিলম্বে সরকার এ প্রত্যয় স্কিম বাতিল করে শিক্ষকদের তাদের ক্লাস, পরীক্ষা ও গবেষণা কাজে ফিরিয়ে আনার আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পবিপ্রবি : বৈষম্যমূলক পেনশন প্রজ্ঞাপন বাতিল, সুপার গ্রেড ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে সারা দেশের মতো পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লাগাতার কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে পবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে এ অবস্থান ধর্মঘট শুরু হয়।
হাবিপ্রবি : দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারাও সর্বাত্মক কর্মসূচি পালন করেছেন। শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু তবুও কোনো উপায় না পেয়ে আমাদের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। আমাদের দাবি মেনে নিলেই আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাব।
বেরোবি : শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) নিয়মিত শিক্ষা-কার্যক্রমে। একাডেমিক ব্যস্ততার জায়গাগুলোয় বিরাজ করছে নীরবতা। শিক্ষকদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির কারণে শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে আসেনি, অনুষ্ঠিত হয়নি কোনো পরীক্ষাও। অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষা কক্ষগুলো তালাবদ্ধ ছিল। বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিজন মোহন চাকী বলেন, শিক্ষকদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস, পরীক্ষা, সমন্বয় সভা, ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
শাবি-সিকৃবি : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শিক্ষকরা গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন। শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে গতকাল শাবিতে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রত্যয় পেনশন স্কিম চরম বৈষম্যমূলক। আগের পেনশন স্কিমের সবগুলো সুবিধা থেকে শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
চবি : প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে আটকে গেছে চবির সাত বিভাগের পরীক্ষা। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের উদ্বোধনী ক্লাসও বাতিল করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের এ ক্ষতি অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে পুষিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবু নোমান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন স্কিম বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।