:: নাগরিক নিউজ ডেস্ক ::
ভারতের উত্তরপ্রদেশে একটি ধর্মীয় সমাবেশে পদদলিত হয়ে নারী ও শিশুসহ অন্তত ১০৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) উত্তরপ্রদেশের হাতরাশ এলাকায় মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে।
হিন্দু দেবতা শিবের পূজা উপলক্ষে পুণ্যার্থীরা রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরে হাতরাস শহরে ওই আয়োজনে সমবেত হয়েছিলেন।
জানা গেছে, স্থানীয় এক ধর্মীয় নেতার ‘সৎসঙ্গ’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন অসংখ্য নারী-পুরুষ। পরে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে মানুষেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতে শুরু করে। এ সময় পদদলিত হয়ে নিহতের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, বাস এবং টেম্পোতে করে নিহতের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে বহন করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তীব্র গরমে অনুষ্ঠানস্থলে দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে সমবেত পুণ্যার্থীরা দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। এ সময় পদদলিত হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সেখানে সমবেত লোকজন হুড়াহুড়ি করে অনুষ্ঠানস্থল ছাড়তে শুরু করেন। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলের পাশে পদদলিত হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনার একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, বাস এবং টেম্পোতে করে নিহতের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে বহন করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, আহত অবস্থায় অনেককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত হয়ে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তি বলেন, ‘সেখানে বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। বের হওয়ার কোনো উপায়ই ছিল না। এর মধ্যেই সবাই একযোগে বের হওয়ার চেষ্টা করলে একজন আরেকজনের ওপর পড়তে থাকে। আমি যখন সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করি, দেখি একটি মোটরসাইকেল দাঁড়ানো। পরে কোনোমতে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হতে সমর্থ্য হই।’
পদদলিত হয়ে মৃত্যুর এ ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ঘটনার তদন্তে একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। নিহত ও তাঁদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও।
দুর্ঘটনার বিষয়ে উত্তরপ্রদেশের ইতাহ জেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উমেশ কুমার ত্রিপাটি শুরুতে ২৭ জনের প্রাণহানির খবর দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণের ব্যবধানেই এই সংখ্যাটি দ্রুত বাড়তে শুরু করে। এই ঘটনায় আহত অনেকেই এখন হাসপাতালে আছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে ইতাহের পুলিশ সুপার রাজেশ কুমার জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশুও রয়েছে।
ভারতে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের সময় মন্দিরে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ২০১৬ সালে কেরালায় একটি মন্দিরে হিন্দুদের নতুন বছর উদ্যাপনের সময় আতশবাজির সময় ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অন্তত ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
মধ্যপ্রদেশে ২০১৩ সালে একটি মন্দিরের কাছে সেতুতে পদদলিত হয়ে ১১৫ জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়ছিল। সে সময় সেখানে চার লাখের মতো মানুষ জড়ো হয়েছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল সেতুটি ধসে পড়বে, আর তখনই এই পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালেও রাজস্থানের যোধপুরে পদদলিত হয়ে ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।