দাবা খেলতে খেলতেই মারা গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া

:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::

জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের ১২তম রাউন্ডের খেলা চলাকালীন সময় অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। পরে চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত আর বাঁচানো যায়নি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫০ বছর।

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার মৃত্যুতে তাঁর স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্য, সন্তান তাহসিন তাজওয়ারসহ অন্যান্য তারকা দাবাড়ুরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।

বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনে চলছিল জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতার ১২তম রাউন্ডের খেলা। আজ গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান খেলছিলেন আরেক গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব এর বিপক্ষে। ৩টায় শুরু হওয়া ম্যাচটিতে খেলতে খেলতেই ৫টা ৫২ মিনিটে লুটিয়ে পড়েন জিয়াউর। তাঁর সহখেলোয়াড়সহ আরও অনেকেই এগিয়ে এসে তাঁকে তুলে ধরেন। হঠাৎ দাবা ফেডারেশনের রুমে দুই দাবাড়ু শাকিল ও নাইম হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে এসে জানান, ‘জিয়া ভাই মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।’ সবাই ধরাধরি করে নিচে নামিয়ে নয় মিনিটের ব্যবধানে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দাবা ফেডারেশন থেকে হাসপাতালে পৌঁছাতে ৯ মিনিট সময় লাগে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা দ্রুতই তাঁর চিকিৎসা শুরু করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর বহু চেষ্টায়ও জিয়ার পালস খুঁজে পাননি চিকিৎসকরা। পরে জিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন তারা।

ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে আরবির্টেরটর হারুন অর রশিদ নাগরিক নিউজকে জিয়ার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। 

দাবা খেলতে খেলতেই মারা গেলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়া
১৯৯৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল আর ২০০২ সালে দেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব অর্জন করেন। বাংলাদেশি দাবাড়ুদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫ শো ৭০ ফিদে রেটিংও তার। ১৯৮৮ সালে প্রথমবার জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হন জিয়াউর রহমান। টুর্নামেন্টে রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নও তিনি। যেখানে বাকি চার গ্র্যান্ডমাস্টার সম্মিলিতভাবে জিতেছেন ১৬ বার।

দাবা ফেডারেশনের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত চিকিৎসকেরা তাঁর পালস খুঁজে পাননি। পরে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা গেছেন জিয়া। এই গ্র্যান্ডমাস্টারের মৃত্যুসনদ চিকিৎসকেরা দিয়েছেন ৭টা ২০ মিনিটের দিকে।

সাধারণত ৫ মিনিট অপেক্ষা করা হলেও জিয়ার জন্য চিকিৎসকরা ২০ মিনিট চেষ্টা করেছেন। চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে আর নেই বললেও, তার স্ত্রী তাসমিন সুলতানা লাবণ্য অশান্ত হয়ে পড়েন ও অন্য হাসপাতালে নেওয়ার উদ্যোগ নেন। ফেডারেশন ও দাবাড়ুরা তাকে কয়েক দফা বোঝান। এক ঘণ্টা পর তিনি ও তার পরিবার আশ্বস্ত হলে মৃত্যুসনদ ইস্যু করা হয়।

হাসপাতালে পৌঁছানোর পরই জিয়ার স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন। চিকিৎসকদের কাছ থেকে মৃত্যুসনদ পাওয়ার পর কান্নার সেই বেগ আরও বাড়ে। কারও সান্ত্বনাই থামাতে পারছিল না তাঁর সেই কান্না।

হাসপাতালে পৌঁছানোর পরই জিয়ার স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন। চিকিৎসকদের কাছ থেকে মৃত্যুসনদ পাওয়ার পর কান্নার সেই বেগ আরও বাড়ে। কারও সান্ত্বনাই থামাতে পারছিল না তাঁর সেই কান্না।

জিয়ার অকালমৃত্যুতে দাবাসহ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশে দাবা ফেডারেশনের ইন্টারন্যাশনাল জাজ হারুনুর রশিদ।

অ্যাসেসিয়েশন অব চেস প্লেয়ার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শওকত বিন ওসমান শাওন টেলিফোনে নাগরিক নিউজকে জানিয়েছেন, ‘প্রায় ১৫ মিনিট চিকিৎসকেরা তার পালস খুঁজে পাননি। প্রাণপণ চেষ্টার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’

মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা কী বলেছেন জানতে চাইলে শওকত বিন ওসমান শাওন বলেন, ‘তাৎক্ষনিকভাবে চিকিৎসকরা বলেছেন হয় বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক অথবা ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে।’

১৯৭৪ সালে জন্ম নেওয়া জিয়া ১৯৯৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল আর ২০০২ সালে দেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাব অর্জন করেন। বাংলাদেশি দাবাড়ুদের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৫ শো ৭০ ফিদে রেটিংও তার। ১৯৮৮ সালে প্রথমবার জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হন জিয়াউর রহমান। টুর্নামেন্টে রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নও তিনি। যেখানে বাকি চার গ্র্যান্ডমাস্টার সম্মিলিতভাবে জিতেছেন ১৬ বার।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *