ইতিহাসের ১৬তম কোপা শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা

:: ক্রীড়া প্রতিবেদক ::

সব ছাপিয়ে শেষ হাসি আর্জেন্টিনার। লাওতারো মার্তিনেজের শেষ সময়ের ম্যাজিকে কোপা আমেরিকায় রেকর্ড ১৬ বার শিরোপা জয়ের কীর্তি দেখাল মেসিবাহিনী। ২৩ বছর পর শিরোপার  কাছাকাছি এসেও ফিরে আসতে হয়েছে কলম্বিয়াকে।  

এবারের কোপা আমেরিকা শেষে আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারে ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছিলেন আনহেল ডি মারিয়া। ফাইনালের আগে আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনও অনেকটা আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বরণ করে নেয়। দেয় বিদায়ী উপহার, বিশেষ জার্সি। এরপর আর্জেন্টিনার হয়ে প্রায় প্রতিটি ফাইনালের মতো নেমেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখালেন ‘মিস্টার ফিদেও’। কলম্বিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের পর ম্যান অব দ্য ফাইনালের পুরস্কারও ডি মারিয়াই পেলেন।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে অনেক স্মৃতি ডি মারিয়ার। আর্জেন্টিনার প্রতিটি শিরোপা জয়ের সঙ্গে যার ছিল অসামান্য অবদান। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে আর্জেন্টিনার হয়ে ১৪৫ টি ম্যাচ খেলেছেন দি মারিয়া। গোল করেছেন ৩১টি। এর মধ্যে হয়তো তার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে তিনটি গোল—২০২১ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে তার একমাত্র গোলে শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা, এরপর ২০২২ সালে লা ফিনালিসিমা আর ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের গোল।

সোমবার মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনাকে এই ত্রিমুকুট এনে দিলেন লাওতারো মার্টিনেজ। কলম্বিয়ার বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ডি মারিয়ার বিদায়ী ম্যাচে ১১২ মিনিটে গোল করেন লাওতারো। তার গোলেই কোপা আমেরিকায় টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হল লিওনেল মেসির দল। এতে স্পেনের পর এই ত্রিমুকুট জেতা দ্বিতীয় দল এখন আর্জেন্টিনা। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা, ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৪ কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতলো আলবিসেলেস্তরা। এছাড়াও টানা দু’বার কোপা জিতে রেকর্ড ১৬ বার কোপা জেতার নজিরও তৈরি করল আর্জেন্টিনা।

দর্শক হাঙ্গামার কারণে প্রায় ৮২ মিনিট পর শুরু হয় আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার হাইভোল্টেজ এই ফাইনাল। খেলা শুরু হবার অন্তত কয়েক ঘণ্টা আগে খুলে দেয়া হয় স্টেডিয়ামের গেট। সেখানে দেখা যায় অসংখ্য কলম্বিয়ান সমর্থক বিনা টিকিটে প্রবেশের চেষ্টা করে। এর ফলে সেখানে হট্টগোল বাধে। প্রটোকল অবশ্য পুরোপুরি মানতে পারেননি হার্ড রক স্টেডিয়ামের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশেরা। কলম্বিয়ান ভক্তদের অনেকেই ঢুকে পড়েন বিনা টিকিটে। পুরো বিষয়টি নিয়েই সেখানে তৈরি হয় জটিল পরিস্থিতির। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে গ্যালারিতে প্রবেশ করার গেটগুলো বন্ধ করে দেয়।

শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের প্রথমার্ধে দুই দলই সমানে সমান লড়লো। আর্জেন্টিনার থেকে কলম্বিয়া বেশি সুযোগ তৈরি করলেও বল জালে জড়াতে পারেনি। আর্জেন্টিনা প্রচুর মিস পাস করেছে প্রথমার্ধে। বলও দখলে রাখতে পারেনি সেভাবে। প্রথমার্ধে ৫২.২ শতাংশ বলের দখল ছিল কলম্বিয়ার কাছে। তারা শট নিয়েছিল ৮টি। তার মধ্যে ৪টিই ছিল অন টার্গেটে। কর্ডোবা, রদ্রিগেজ ও লার্মার নেওয়া শট অল্পের জন্য মিস হয়। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা শট নিয়েছিল মোটে ৩টি। তার মধ্যে মাত্র ১টি ছিল অন টার্গেটে। আর্জেন্টিনা কর্নার পেয়েছিল ৪টি, কলম্বিয়া ১টি।

ম্যাচের শুরুতেই সুযোগ পেয়েছিলেন জুলিয়ান আলভারেজ। মন্টিয়েলের ক্রস বক্সের মধ্যে পান আলভারেজ। তার নেওয়া শট পোস্টের দূর দিয়ে চলে যায়। এরপর ষষ্ঠ মিনিটে লুইস দিয়াজ সুযোগ পেয়েছিলেন গোলের। তার নেওয়া নিচু শট আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্টিনেজ ধরে ফেলেন। সপ্তম মিনিটে গোলের দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েছিলেন হামেস রদ্রিগেজ। কিন্তু তার নেওয়া শট বারে লেগে ফিরে আসে।

প্রথম ২০ মিনিট সেভাবে দেখা যায়নি মেসিকে। ২০ মিনিটের মাথায় প্রথমবার দলগত আক্রমণ করে আর্জেন্টিনা। বক্সে ঢুকে শট মারেন মেসি। যদিও ডিফেন্ডার ও গোলরক্ষকের যৌথ প্রচেষ্টায় তা আটকে যায়। ৩০ মিনিটের পরে আরও কয়েকটি সুযোগ তৈরি করে কলম্বিয়া। আর্জেন্টিনার গোলের নিচে থাকা এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে পরাস্ত করা সহজ ছিল না। 

প্রধমার্ধের বিরতির পর প্রায় ৩৩ মিনিট পারফর্ম করেন কলম্বিয়ান পপ তারকা শাকিরা। তার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হন মাঠে উপস্থিত ৬৫ হাজার দর্শক। শাকিরার পারফরম্যান্সের পর শুরু হয় দ্বিতীয়ার্ধের খেলা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চালায় দুই দল। ৪৮ মিনিটে ম্যাক অ্যালিস্টার সুযোগ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তাকে গোল করতে দেননি কলম্বিয়ার রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা। ৫৮ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন ডি মারিয়া। এ সময় তার নেওয়া শট দারুণ দক্ষতায় ধরে ফেলেন কলম্বিয়ার গোলরক্ষক কামিলো ভার্গাস।

ম্যাচের ৬৬ মিনিটে মাঠ ছাড়েন লিওনেল মেসি। মাঠের চিকিৎসার পর আর্মব্যান্ড তুলে দেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার কাছে। মেসির পরিবর্তে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন নিকো গঞ্জালেস। সাইডবেঞ্চে বসেই এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন মেসি। বোঝা যাচ্ছিল, ফাইনালে খেলতে না পারার যন্ত্রণা তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। মেসি ওঠার পরে কাঁদতে দেখা যায় আর্জেন্টিনার সমর্থকদেরও। নিশ্চিতভাবেই লিওনেল মেসির জন্য এটি ছিল শেষ কোপা আমেরিকা। 

দ্বিতীয়ার্ধেও দুই দল আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে। ৪৭ মিনিটে আরিয়াসের শট একটু এদিক-ওদিক হলেই গোল পেতে পারত কলম্বিয়া। তবে আর্জেন্টিনা গোলমুখ খোলার চেষ্টায় আর্জেন্টিনা বেশি প্রেসিং শুরু করে। দি মারিয়া কলম্বিয়ার রক্ষণদুর্গ কাঁপিয়ে দেন ক্ষণে ক্ষণে। তবে কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ভারগাসের দৃঢ়তায় ৪৮ ও ৫৮ মিনিটে দুই বার গোল করতে পারেননি দি মারিয়া। উপরন্তু বিদায়ী ম্যাচে দি মারিয়াকে বাজে ট্যাকল করায় ডাগআউটে উত্তেজিত অবস্থায় দেখা গেছে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনিকে।

একের পর এক সুযোগ মিসের মহড়ার মধ্যে আর্জেন্টিনা বড়সড় এক ধাক্কা খায়। ৬৫ মিনিটে গোঁড়ালির চোটের কাছে হার মেনে মাঠেই পড়ে যান মেসি। ফিজিও এসে সেবা শুশ্রূষা করার পর আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলারকে মাঠ থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়। ডাগআউটে হতাশায় বুট ছুড়ে মারলেন, মুখ ঢেকে অঝোরে কাঁদতে লাগলেন। সে কান্না ছুঁয়ে গেল সব আর্জেন্টাইন সমর্থকদের।

ডাগআউটে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দুঃখ ভোলার উপলক্ষ প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন মেসি। ৭৫ মিনিটে আর্জেন্টিনার গোলের পর তাঁর মুখে হাসিও দেখা যায়। তবে সেটা সাময়িক সময়ের জন্য। আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার নিকোলাস তাগলিয়াফিকো অফসাইডে থাকলে গোল বাতিল করা হয়। আবারও মেসির মুখে ফিরে আসে হতাশা। ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৫ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচ হলেও কোনো দলই গোল করতে পারেনি।

নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। তখন আরও জোর গতিতে প্রেসিং করে আর্জেন্টিনা। তবে কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ভার্গাস যে ‘ধনুক ভাঙা পণ’ করে নেমেছেন। অতন্দ্র প্রহরীর মতো গোলপোস্ট পাহারা দিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নামা দি মারিয়া একের পর এক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারছিলেন না। ১১২ মিনিটে জিওভান্নি লো সেলসোর থ্রু বল থেকে ডান পায়ের শটে দারুণ এক লক্ষ্যভেদ করেন লাওতারো। শেষ পর্যন্ত ১৬তম কোপা আমেরিকা জয়ের আনন্দ নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।

কোপা আমেরিকায় সর্বোচ্চ শিরোপা জয়ের রেকর্ডের পাশাপাশি শিরোপা নিজেদের কাছে রেখে দিল আর্জেন্টিনা। ২০২১ কোপা জিতেই দীর্ঘ ২৮ বছরের শিরোপাখরা কাটিয়েছিল আকাশী-নীল জার্সিধারীরা। ক্লাব ফুটবলে একের পর এক শিরোপা জয়ী মেসিরও সেটা  আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথম শিরোপা। সেই ধারাবাহিকতায় আর্জেন্টিনা এরপর জিতল ২০২২ ফিনালিসিমা, ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ ও ২০২৪ কোপা আমেরিকা। আলবিসেলেস্তের ৩ বছরে সবশেষ ৪টি শিরোপা জয়ে জড়িয়ে আছেন মেসি। ফুটবল যে এমনই। কখনো কাঁদায়, কখনো হাসায়। ২০২১ কোপা জয়ের আগে হয়তো আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের কাছে স্বপ্নই মনে হয়েছিল।

২০২৪ কোপা আমেরিকায় কে কোন পুরস্কার পেলেন
পুরস্কার                      খেলোয়াড়                        দল 
গোল্ডেন বুট             লাওতারো মার্তিনেজ           আর্জেন্টিনা
সেরা গোলরক্ষক      এমিলিয়ানো মার্তিনেজ         আর্জেন্টিনা
সেরা খেলোয়াড়        হামেস রদ্রিগেজ                 কলম্বিয়া


স্কালোনিই কি আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা কোচ

জাদুকর বললেও যেন লিওনেল স্কালোনির জন্য তা কম হয়ে যায়। তাঁর জাদুর ছোঁয়ায় আর্জেন্টিনার হাতে শিরোপা দেখতে পাওয়া রীতিমতো এখন ডালভাত।

আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলবে অথচ শিরোপার ছোঁয়া পাবে না—এটা এক রকম অলিখিত নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা সব জায়গাতেই আর্জেন্টিনার ভক্ত-সমর্থকদের জন্য গল্পটা ছিল এমন হতাশার। যে লিওনেল মেসি ক্লাব পর্যায়ে একের পর এক শিরোপা জিততেন, তাঁর ক্যাবিনেট হাহাকার করত আন্তর্জাতিক ফুটবলে একটি শিরোপা জয়ের জন্য। তিনিও শিরোপার কাছে এসে চ্যাম্পিয়ন না হওয়ার আক্ষেপে পুড়েছেন বারবার। 

শুধু তাই নয়, আর্জেন্টিনা দলে কোচও পরিবর্তন হতো বারবার। আলেহান্দ্রো সাবেয়ার অধীনে ২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা রানার্সআপ হওয়ার পরের চার বছরে এসেছেন তিন কোচ। যার মধ্যে জেরার্দো তাতা মার্তিনো সর্বোচ্চ দুই বছর টিকতে পেরেছিলেন (২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত)। এদগার্দো বাউজা (২০১৬ থেকে ২০১৭) এবং হোর্হে সামপাওলি (২০১৭ থেকে ২০১৮) আলবিসেলেস্তের কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন এক বছর করে। যেখানে সামপাওলি ২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেওয়ার পর সাম্পাওলি পদত্যাগ করেছেন। 

সাম্পাওলির যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু স্কালোনির। যদিও ২০১৮ সালে আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে স্কালোনি নিয়োগ পাওয়ার পর অনেক সমালোচনা হয়েছিল। কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনাও স্কালোনির নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই স্কালোনি ধীরে ধীরে দলকে তৈরি করেছেন। আর্জেন্টিনার ড্রেসিংরুমে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছেন। দুই সিনিয়র মেসি, আনহেল দি মারিয়ার সঙ্গে এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, রদ্রিগো ডি পল—সবাইকে পরিবারের মতো এক সুঁতোয় বাধতে পেরেছেন স্কালোনি। প্রথম সাফল্যটা তিনি পেয়েছেন ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা জিতে। মারাকানায় সেবার ব্রাজিলকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা দীর্ঘ ২৮ বছরের শিরোপাখরা কাটায়। মেসিরও সেটা আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রথম কোনো শিরোপা। 

ব্রাজিলের মাঠে কোপা আমেরিকা জয়ের ধারাবাহিকতায় ২০২২ ফিনালিসিমা, ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ, ২০২৪ কোপা আমেরিকা—আরও তিনটি শিরোপা জেতে স্কালোনির আর্জেন্টিনা। সব মিলে স্কালোনি ৩ বছর ব্যবধানে জিতলেন চারটি মেজর টুর্নামেন্টের শিরোপা। যেখানে ২০২২ এর ১৮ ডিসেম্বর কাতারের আইকনিক লুসাইলে বিশ্বকাপ জিতে আর্জেন্টিনার দীর্ঘ ৩৬ বছরের অপেক্ষা ফুরোয়। মায়ামির হার্ড রকে আজ কলম্বিয়াকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা তো কোপার শিরোপা ধরে রেখেছেই। পাশাপাশি উরুগুয়েকে পেছনে ফেলে ১৬ তম শিরোপা জেতে কোপায় সর্বোচ্চ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কীর্তি গড়ে আর্জেন্টিনা। 

কৌশলগত দিক থেকেও স্কালোনি মাস্টারক্লাস কোচের পরিচয় দিয়েই চলেছেন। এবারের কোপা আমেরিকার কথাই চিন্তা করা যাক। শতভাগ ফিট না হওয়া মেসিকে এক ম্যাচ বিশ্রাম দিয়েছেন স্কালোনি। এমনকি সেমিফাইনালে কানাডার বিপক্ষে মেসিকে যেকোনো মূল্যে খেলানোর দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন স্কালোনি। সাহসী কোচ না হলে কয়জন কোচের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব! সেই মেসি টুর্নামেন্টে তাঁর প্রথম গোল পেয়ে যান সেমিতে। বদলি হিসেবে লাওতারো মার্তিনেজকে খেলিয়েছেন চার ম্যাচে। তাঁর আস্থার প্রতিদান লাওতারো দিয়েছেন দারুণভাবে। মায়ামিতে আজ ফাইনালে ১১২ মিনিটে জিওভান্নি লো সেলসোর অ্যাসিস্ট থেকে মার্তিনেজ গোল করলে সুদূর ফ্লোরিডা থেকে ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। 
 
আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে শিরোপা জয়ের হিসেব করলে যৌথভাবে দুইয়ে স্কালোনি। স্কালোনির সমান চার শিরোপা জিতেছেন আলফিও বাসিলে। বাসিলে জেতেন দুটি কোপা আমেরিকা এবং একটি করে কনফেডারেশনস কাপ ও ফিনালিসিমা। কোচ হিসেবে সর্বোচ্চ ৬ শিরোপা আর্জেন্টিনাকে জেতানোর কীর্তি গুইলার্মো স্ট্যাবিলের। স্ট্যাবিলের ৬টি শিরোপা ছিল কোপা আমেরিকাতেই। আর্জেন্টিনায় ৬ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে স্কালোনি যখন চারটি শিরোপা জিতেছেন, স্ট্যাবিলের রেকর্ডও কতদিন অক্ষুণ্ন থাকে সেটাই এখন দেখার বিষয়। 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *