:: নাগরিক প্রতিবেদক ::
কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় আহত ২৯৭ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বহিরাগতদের নিয়ে চালানো ছাত্রলীগের হামলা থেকে বাদ যাননি নারী শিক্ষার্থীরাও। দিনভর চলা সংঘর্ষ থামাতে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। সন্ধ্যায় উত্তপ্ত ক্যাম্পাসে সহিংসতা থামাতে নামানো হয় পুলিশ। এ সময় তৎপর হয় প্রশাসনও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা হয়েছে মেডিকেলের জরুরি বিভাগে।
হামলা ও সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাদের সামনের সারিতে দেখা গেছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ বিকাল ৩টায় সারা দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাজু ভাস্কর্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে দুপুর সোয়া ২টার দিকে খবর আসে বিজয় একাত্তর হলে শিক্ষার্থীদের আটকে রেখেছে ছাত্রলীগ।
এরপর টিএসসি থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হলে গেলে ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেধে যায়। ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে হলের অভ্যন্তরে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হলে মোটরসাইকেলও ভাঙে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন হল ও মাস্টার দা’ সূর্যসেন হল থেকেও বাধাপ্রাপ্ত হন। তবে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে ছাত্রলীগ বারবার পিছু হটছিল। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু হলের পকেট গেইট দিয়ে প্রবেশ করেন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একই সময়ে বিজনেস ফ্যাকাল্টির সামনে থেকে হামলা চালায় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের নেতাকর্মীরা। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ভাঙচুর করা হয় সূর্যসেন হলেও।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মহানগরের নেতাকর্মীদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা মল চত্বর থেকে ভিসি চত্বরের দিকে পিছু হটে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা, রড, হকিস্টিক, পাইপ, স্টাম্প নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ভিসি চত্বরে ছাত্রলীগের হামলায় বাদ যাননি নারী শিক্ষার্থীরাও। ধরে ধরে শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে তারা। বিআরটিসি গাড়িতে আশ্রয় নেয়াদেরও মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত ও ফুলার রোড দিয়ে পিছু হটে। তখন হেলমেট পরিহিত কিছু ব্যক্তিকে খুবই মারমুখী অবস্থায় দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য থাকলেও তারা দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভিসি চত্বরের দখল নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, জামায়াত-শিবির ও বিএনপি’র চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন হলে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও হামলা চালিয়েছে। এতে ছাত্রলীগের অন্তত ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, রাজাকার স্লোগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে তারা কলঙ্কিত করেছে।
আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের প্রতিহত করেছি। আন্দোলনকারীরা সরে গেলে টিএসসি, ভিসি চত্বরসহ পুরো ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা স্লোগান দিতে দিতে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করতে থাকে। টিএসসি’তে আবারো আসতে থাকে মহানগর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবারো মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরের দিকে এগোতে থাকেন। এ সময় বেগম রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা থালাবাসন বাজিয়ে ছাত্রলীগকে ভুয়া, টোকাই ও গো-ব্যাক স্লোগান দেন। এর আগে দুপুর ১২টার থেকে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিতে থাকেন। এসময় তারা ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার, কে বলছে কে বলেছে সরকার সরকার’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি নই, আমি নই, রাজাকার রাজাকার’, ‘ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও আশেপাশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন।
তপ্ত দুপুরের রোদে পুড়ে দাবি আদায়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে কোটা সংস্কারে সংসদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে আইন পাস করার দাবি জানানো হয়। অন্যদিকে একই স্থানে বেলা ৩টায় ছাত্রলীগের প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। রাজু ভাস্কর্যের বিক্ষোভে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি ২ শতাংশ নিয়ে পড়ে আছেন। ৯৮ শতাংশকে বানিয়ে দিলেন রাজাকার। একটা দেশের ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী রাজাকার হতে পারে বা। আপনার বক্তব্য কল্পনাপ্রসূত। অতিদ্রুত বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, পদ যেদিন চলে যাবে তখন কেউ ভাইকে চিনবে না। আপনাদের আহ্বান জানাই, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন। ছাত্রলীগের বন্ধুদের কাছে জানতে চাই, আপনার লেখাপড়া আর কতোদিন? পায়ের জুতা নেতাদের পেছনে ক্ষয় না করে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করুন। সময় গেলে আর করার কিছুই থাকবে না। পদ চলে গেলে হলের সিটটাও থাকবে না।
প্রথম দফার সংঘর্ষ শেষে বিকাল ৫টার দিকে শহীদুল্লাহ হলের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুইপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ সময় ১০টির অধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা যায় ছাত্রলীগকে। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠি-সোটা, রড, স্টাম্প, হকিস্টিক দিয়ে হামলা চালায়।
সংঘর্ষের সময় শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা ভিতরে অবস্থান নেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ ঢাকা চানখাঁরপুল মোড় ও দোয়েল চত্বরের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা হিসেবে ইটপাটকেল ছুড়ে ছাত্রলীগের দিকে। দুইপক্ষের সংঘর্ষে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের আরেকটি গ্রুপ ঢাকা মেডিকেলের ইমারজেন্সিতে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ছাত্রলীগের হামলায় মেডিকেলের ভেতর আতঙ্ক শুরু হয়। আহত হয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগ একই সময়ে শহীদ মিনার, ফুলার রোডসহ আশপাশের এলাকায় সন্দেহ হলেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। দুইপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে দোয়েল চত্বর দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে পুলিশ। ডিএমপি যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এ সময় শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ জাভেদ হোসেন শিক্ষার্থীদের ভেতরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। অন্যদিকে পুলিশকে অনুরোধ করেন বহিরাগতদের সরানোর। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।
শিক্ষার্থীরা ‘দালাল দালাল’ ও ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। তারা বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানান। কিছুক্ষণ পর আসেন প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মাকসুদুর রহমানও। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের হাতে সবকিছু নেই। সুযোগ থাকলে আমরা বহিরাগতদের আগেই সরিয়ে দিতাম। এখন আমরা হল প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হলের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে বহিরাগত যারা আছে তাদের বের করার ব্যবস্থা করবো। শিক্ষার্থীদের হলে ঢোকানোর আগে বহিরাগতদের বের করাটা কঠিন হচ্ছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় শিক্ষার্থীরা শহীদুল্লাহ হলের সামনে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে ৩০ গজ দূরে একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) নিয়ে কয়েকশ’ পুলিশ সদস্য অবস্থান নিয়ে ছিলেন। এর আগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হল গেট থেকে দোয়েল চত্বরের দিকে নিয়ে যায় পুলিশ। এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে প্রক্টর বলেন, কত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান এখন আমরা বলতে পারি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আহত সব শিক্ষার্থীকে সুচিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
শহীদুল্লাহ হলের সামনে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সামনে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ফের সংঘর্ষে জড়িয়েছে ছাত্রলীগ। সোমবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এদিকে বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে পরবর্তী ৩ মিনেটে আরও ৬টি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীরা লাঠি-সোটা নিয়ে সড়কে অবস্থান করছেন। তবে কারা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা জানা যায়নি।
ছাত্রলীগের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শহীদুল্লাহ হলের সামনে লাঠি সোটাসহ অবস্থান নিয়েছেন।
এ দিকে হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন জানিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘প্রায় দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। অনেকেই আটকে আছেন। সাংবাদিকরা দয়া করে তাদেরকে নিরাপদে আসতে কাভারেজ দিন। হলপাড়ায়, রেজিস্ট্রার ভবনে, এস এম হলে, টিএসসিতে আটকে আছে নারী শিক্ষার্থীরা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্রী তানজিলা তাসনীম বলেন, ‘ভিসি চত্বরে মৈত্রী হলের এক মেয়ের হাতে ইটপাটকেল লাগার কারণে নড়তে পারছিল না। ফলে আমি ওকে ছেড়ে আসতে পারিনি। এ সময় হেলমেট পরা কয়েকজন এসে আমাদের সরে যেতে বলেছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। আমি বলেছিলাম, আমি জাস্ট যৌক্তিক আন্দোলনে ছিলাম। তারপর উনি আমার ডান হাত মুচড়ে দিয়েছে। আমরা এখন ওই মেয়েকে নিয়ে মেডিকেলে এসেছি। আমার খারাপ লাগছে, নিজ ক্যাম্পাসে এভাবে হামলার স্বীকার হয়েছি।’
এ দিকে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে ক্যাম্পাসের এক শিক্ষার্থীকে পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে পেয়ে পিটুনি দেয় মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়াও শিক্ষার্থী পেলেই মারধর করা হচ্ছে।
সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের তারা উস্কে দিয়েছে। আমরা দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছি। আজকে তাদেরকে আমরা ৫ মিনিটে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছি।
ছাত্রলীগের হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শয়ন বলেন, ওরা সাধারণ শিক্ষার্থী নন, তারা বিএনপির ইশরাকের কর্মী। এই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থী ১০-২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ শিবির-ছাত্রদলের এক্টিভিস্ট। জামায়াত-শিবির, ছাত্রদলকে আমরা যুগে যুগে পরাজিত করেছি। তারা কোনো কিছুই করতে পারেনি। এবারও কিছু করতে পারবে না।
এসময় তিনি জানান, সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের তিন থেকে চারজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
জাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের নেতৃত্বে এ হামলা করা হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে আটটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ২০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁদের সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সারা দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও কোটা সংস্কারের একদফা দাবিতে ওই বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল বের করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে ছাত্রছাত্রীদের ১৩টি হলের সামনে দিয়ে বটতলা এলাকায় পৌঁছালে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের নেতৃত্বে দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামানের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী বটতলা এলাকায় দেশি অস্ত্র নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেন। এ সময় নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু, যুগান্তরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোসাদ্দেকুর রহমান, শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন প্রমুখ।
আহত সাংবাদিক মোসাদ্দেকুর রহমান বলেন, তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।
আহত শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব মাহফুজ ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে আক্রমণাত্মক হয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করা হয়েছে। তাঁরা আমাদের হত্যাচেষ্টা করেছে। আমাদের কাদার মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছে। এলোপাতাড়ি লাথি দিয়েছে। লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে।’
হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের হামলা করিনি। আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। তাঁরা আমাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়েছে। এতে আমাদের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। ক্যাম্পাসে অন্যায্য কোনো কিছু ঘটলে আমরা শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ করব।’
রাত ৮ টা ২৫ মিনিটে আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ঢুকে যান। এ সময় হলের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ইট–পাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। অন্যদিকে হলের সামনে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাঁরা ছাত্রলীগকে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন।
রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বাসভবনের দিকে যেতে দেখা যায়।
চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা
চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় সাংবাদিক, পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেল ৫টায় নগরীর ষোলশহর এলাকায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়।
আন্দোলনকারীরা ষোলশহর রেল স্টেশন ও মোড়ে অবস্থান নেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুই নম্বর গেট ও মুরাদপুর এলাকায় অবস্থান নেন।
এরপর বিকেল ৫টায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে দুই নম্বর গেট থেকে ষোলশহরের দিকে আসেন। এরপর সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় বেশ কয়েকবার বিকট শব্দ শোনা গেছে।
এসময় আন্দোলনকারীরা রেল লাইন থেকে পাথর নিয়ে নিক্ষেপ করতে থাকেন। তখন তাদের হাতে বাঁশ, লাঠিও দেখা যায়। অন্যদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতেও পাথর, বাঁশ, লাঠি দেখা যায়।
এতে দীপ্ত টিভির চট্টগ্রাম বিভাগীয় করেসপন্ডেন্ট লতিফা রুনা পায়ে আঘাত পান। পুলিশের এক সদস্যও রক্তাক্ত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ হয়েছে। আমাদের কয়েকজন আহত হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।