রংপুরে পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নিহত

:: বেরোবি প্রতিনিধি ::

রংপুরে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী ও কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ নিহত হয়েছেন। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। চলতি বছর তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন।

নিহত আবু সাঈদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে।

মঙ্গলবার বিকেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও ডিন ড. তুহিন ওয়াদুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি আবু সাঈদের লাশের পাশে ছিলেন।

নিহত সাঈদকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশিকুল আরেফিন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার উত্তম কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে তার সহপাঠীরা বলেন, আবু সাঈদ কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিল। পুলিশের ছোড়া টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেটবিদ্ধ হয় সে। পরে রংপুর মেডিকেলে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ২টার দিকে রংপুর খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং ফটকের সামনে যায় এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছোড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে আবু সাঈদ নিহত হন।

রংপুরে পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নিহত
নিহত আবু সাঈদ হয়েছেন বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। চলতি বছর তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাথে মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যুক্ত হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করতে থাকে। আন্দোলনকারীরাও পুলিশ ও ছাত্রলীগকে পাল্টা ধাওয়া করে।

বেলা সাড়ে ৪টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলছিল।

মঙ্গলবার সকালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর সরকারি কলেজ, জিলা স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে শহর থেকে মিছিল শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড় পৌঁছায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়।এ সময়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করা ছাত্রলীগ পিছু হটে।

রংপুরে পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নিহত
নিহত আবু সাঈদের মৃত্যুর প্রমানপত্র

পরে ১ নম্বর গেটের সামনে ছাত্ররা প্রতিবাদ, আন্দোলন ও বিক্ষোভ করতে থাকলে পুলিশ প্রথমে টিয়ারগ্যাস ও পরে রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে অন্তত ৬৫ আন্দোলনকারী ও ৫ জন সাংবাদিক আহত হয়। পরে পুলিশের হামলার মুখে পিছু হটে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটে অবস্থান নেয়। 

এরপর আবার পুলিশি পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা, মহানগর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ আসে এবং আন্দোলনকারীদের পিছু হটাতে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এভাবে পিছু হটতে হটতে তারা বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়া পেরিয়ে কারমাইকেল কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে অবস্থান করে। পরে সমন্বয়ক আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা পুলিশ ও ছাত্রলীগকে ধাওয়া দিলে পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।

আহত শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীরা সমন্বয়ক আবু সাঈদের লাশ নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে পদযাত্রা শুরু করেছে।

পলিটেকনিকের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের হামলায় এক ছাত্র নিহত হয়েছে। আমাদের ভাইয়ের রক্তের জবাব আমরা দেব।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *