কফিন মিছিলে পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

:: ঢাবি প্রতিবেদক ::

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচির পর কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের কফিন মিছিল লক্ষ করে একের পর এক সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়লে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

বিকেল ৪টার দিকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ফুলার রোড দিয়ে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসেন। সেখানে আগে থেকে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার দেশের ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে নিহতদের জন্য এই গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। কর্মসূচিটির নির্ধারিত স্থান ছিল রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে। তবে সেখানে পুলিশের বাধায় তা পালন করতে পারেননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে ঘটনাস্থল থেকে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ আগেই আাখতার হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আখতার হোসেনসহ আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীর কথা-কাটাকাটি হয়। পুলিশ আখতার হোসেনকে আটক করার চেষ্টা করে।

পরে কাভার্ড ভ্যানের ভেতর থেকে আখতার হোসেন বলেন, ‘সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ওপর যেভাবে হামলা হয়েছে, এর দায় সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।’

দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এখনো চলছে। 

বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত, মানি না মানবো না’; ‘হল আমার বাড়িঘর, হল আমি ছাড়ব কেন’; ‘আমার ভাই মরলো কেন, জবাব চাই দিতে হবে’; ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’; ‘হল ছাড়ার সিদ্ধান্ত, মানি না মানবো না’; ‘ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরে, ভিসি কী করে’; ‘ছাত্রলীগ হামলা করে, ভিসি কী করে’; ‘সাঈদ ভাই মরলো কেন, পুলিশ তুই জবাব দে’; ‘হলে হলে দুর্গ গড়, ছাত্রলীগ প্রতিহত কর’ স্লোগান দিতে থাকেন।

এ সময় সেখানে থাকা সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। কিন্তু পুলিশ সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের দিকে দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। দুটি ফাঁকা সাউন্ড গ্রেনেডও ছোড়া হয়। এ সময় চ্যানেল এসের সাংবাদিক সোলায়মান আহত হন। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতে সাংবাদিক আহমেদ শাবিবের হাত ঝলসে গেছে এবং পেটে জখম হয়েছে। বুধবার দুপুর আড়াইটায় ডাস চত্বরের পাশে এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র ও জনতার ব্যানারে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালন করা হয়। সেখানে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিলসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার পর ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীরা সেখানেই অবস্থান করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থেকে বের হওয়ার সময় তাঁদের মুঠোফোন তল্লাশি করা এবং মারধর করতেও দেখা গেছে। বেলা তিনটা থেকে সাড়ে তিনটার মধ্যে অন্তত তিনজনকে মারধর করা হয়। তাঁদের দুজনকে পুলিশ রক্ষা করে। এজন দৌড়ে শাহবাগ থানার মধ্যে ঢুকে যান।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত মানি না। আমরা হলেই থাকব, হল ছাড়ব না। এটা আন্দোলন বানচালের অপচেষ্টা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমরা প্রথমে ভিসির বাসভবন যাই। তারপর টিএসসিতে আসি। সেখানে আমাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালন করব।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *