:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফ্রান্সের প্যারিস থেকে দেশে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১১ মিনিটে তিনি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
বিমানবন্দরে বেলা পৌনে তিনটার দিকে বক্তব্য দেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, আজকে আমার আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে। যে আবু সাঈদের ছবি প্রতি মানুষের মনে গেঁথে আছে। এটা কেউ ভুলতে পারবে না। কী অবিশ্বাস্য একজন সাহসী যুবক। বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর থেকে আর কোনো তরুণ তরুণী হার মানেনি। যার ফলে সারা বাংলাদেশ জুড়ে এ আন্দোলন ছড়িয়ে গেছে এবং বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করল। এই স্বাধীনতাটা আমাদের রক্ষা করতে হবে এবং এর সুফল আমাদের প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে দিতে হবে।’ তরুণ সমাজ এটা সম্ভব করেছে। তাঁদের প্রতি আমরা সমস্ত কৃতজ্ঞতা জানাই।
দেশ আজ তরুণ সমাজের হাতে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তোমাদের দেশ তোমরা মনের মতো করে গড়ে তুলবে। তোমরা যেহেতু স্বাধীন করতে পেরেছ, তোমারও মনের মতো করে গড়ে তুলতে পারবে। তোমাদের দেখে সারা দুনিয়া শিখবে, কীভাবে একটা দেশ একটা তরুণ সমাজ গড়ে তুলতে পারে।
‘আইন–শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা আমার প্রথম কাজ‘
ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় ফিরে তাঁর প্রথম বক্তৃতাতেই বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করাই হবে তাঁর প্রথম কাজ। কারও ওপর কোনো হামলা যাতে না হয় সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি তিনি বলেছেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখুন।’ তিনি ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এ স্বাধীনতা আমাদের রক্ষা করতেই হবে।’
ড. ইউনূস বলেন, সরকার হয়ে উঠেছিল দমনপীড়নের একটি যন্ত্র। এটা সরকার হতে পারে না। সরকারকে দেখে মানুষ উৎফুল্ল হবে। সরকার মানুষকে রক্ষা করবে।
দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মানুষ মানুষকে আক্রমণ করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। সবাইকে রক্ষা করা আমাদের কাজ। প্রতিটা মানুষ আমাদের ভাই। বিশৃঙ্খলা অগ্রগতির বড় শত্রু। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা আমাদের প্রথম কাজ।
তিনি বলেন, দেশবাসী যদি আমার ওপরে বিশ্বাস রাখেন, ভরসা রাখেন, তাহলে নিশ্চিত করেন দেশের কোনো জায়গায় কারও ওপর হামলা হবে না।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে দেশের মধ্যে সহিংসতা হয়েছে সেগুলো ষরযন্ত্র। এটাকে রোধ করতে হবে। তাদের লাঠিপেটা করলে হবে না। সহিংসতাকারীদের আইনের হাতে তুলে দিতে হবে। কোনো প্রকার প্রতিহিংসামূলক কাজ করা যাবে না। ড. ইউনূস বলেন, আমার ওপর যদি আস্থা এবং বিশ্বাস রাখেন তাহলে এটা নিশ্চিত করতে হবে কারো ওপর কোনো প্রকার হামলা করা যাবে না, বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। যদি বিশৃঙ্খলা করা হয় তাহলে আমি এই দায়িত্বে থাকবো না।
বক্তব্য দেওয়ার সময় ড. ইউনূসের পাশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দেখা যায়। বক্তব্য শুরুর আগে তাঁরা ড. ইউনূসকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
বৃহস্পতিবার ড. ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, অন্য দুই বাহিনীর প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।। এরপর তিনি বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন।
আজ রাত সাড়ে আটটায় নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ হবে বলে জানা গেছে। এই সরকারের সদস্য ১৫ জনের মতো হতে পারে বলে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
গত মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত হয়।